প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ ডিসেম্বর : সবুজায়ন সৃষ্টির লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চালু করেছে ’সবুজশ্রী’ প্রকল্প।তবুও সবুজ ধ্বংসে লাগাম পড়ে নি।এবার বন দফতরকে অন্ধকারে রেখে শতাধীক গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় নাম জড়ালো খোদ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরীর।সেই খবর চাউর হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে।মোটা টাকা ’জরিমানা’ মিটিয়ে আপাত নিস্কৃতি পাওয়া মন্ত্রীর ভাইয়ের সাফাই ,’তিনি ভুল কাজ করে ফেলেছেন’। কোটোয়া বন দফতর কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীর ভাইয়ের ’জরিমানা’ মেটানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে গাছের পর গাছ কাটা চলছে পূর্বস্থলীর চৌরঙ্গী এলাকার । ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গায় থাকা অজস্র গাছ কয়েক দিনের মধ্যে কেটে ফেলা হয়। তার পরেও গাছ কাটায় বিরাম পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ে এলাকার বাসিন্দারা। তাদের মাধ্যমেই নির্বিচারে গাছ কেটে নেওয়ার খবর পৌছায় স্থানীয় জাহান্নগর বন বিভাগে। অভিযোগ পেয়েই বন বিভাগের কর্মীরা পৌছায় ঘটনাস্থলে । গাছ কাটার বহর দেখে বন দফতরের কর্মীদের চোখ কপালে ওঠে। গাছ কে কাটাচ্ছে,বন দফতরের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে কি না,এইসব বিষয় গুলি তারা গাছ কাটার দায়িত্বে থাকা শ্রমিকদের কাছে জানতে চায়।উত্তরে ওই শ্রমিকরা জাহান্নগর বন বিভাগের ওই কর্মীদের তখন জানায়,কাটোয়া রেঞ্জারের অনুমতির ভিত্তিতে গাছগুলি কাটা হচ্ছে। তবে অনুমতি পাওয়া সংক্রান্ত কোন নথি তারা দেখাতে পারে না।এমনকি কাটোয়া বন দপ্তরকে বিষয়টি বারবার জানানো হলেও তারা কোন এক অজ্ঞাত কারণে উল্লেখযোগ্য কোনও তৎপরতা দেখায় নি বলে অভিযোগ জাহান্নগর বনদপ্তরের কর্মীদের।
এরই মধ্যে সামনে চলে আসে গাছ কাটানোর মূলে রয়েছেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুলা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী। তার পরেই এলাকাবাসী থেকে শুরু করে বন বিভাগের কর্মী মহলে হুলস্থুল পড়ে যায়।এও জানতে পারা যায় তুষার ঘোষ নামে এক ব্যক্তি ওই গাছগুলির মালিক । জাহান্নগর বন বিভাগের চার্জে থাকা বাঙালি দুসোদ এ নিয়ে জানান,৪-৫ দিন ধরে গাছ কাটা হয়ে চলার খবর পেয়ে তিনি বন বিভাগের কর্মীদের সেখানে পাঠান।পরে তিনিও ঘটনা স্থলে যান। গাছ কাটার তিনটি মেশিন তুলে নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেগুলি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হয়। মেশিন ফিরে পেয়েই গাছ কাটার লোকজন ফের গাছকাটা শুরু করে দেয়।কিন্তু তত দিনেও গাছ কাটার কোন অনুমতিপত্র তারা দেখতে পারে না। উল্টে সব মিলিয়ে শতাধিক গাছ তারা কেটে ফেলে।এর কারণ নিয়ে খোঁজ খবর চালিয়ে জাহান্নগর বন বিভাগের কর্মীরা জানতে পারে,বেআইনিভাবে গাছ কাটার ঘটনায় কাটোয়ার করজগ্রাম নিবাসী
রহমতুল্লা চৌধুরী গাছ কাটানোর নেপথ্যে রয়েছেন ।যে রহমতুল্লা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই বলেই নাকি কাটোয়া বনদপ্তরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ পদক্ষপ গ্রহনে অনিহা দেখিয়ে গেছে। জাহান্নগর বন বিভাগের কর্মীদের এই দাবি যে অমূলক নয়, তা গাছ কাটার কাজে যুক্ত কর্মীদের কথাতেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ।গাছ কাটার কাজের দায়িত্বে থাকা টুটুল শেখ স্বীকার করে নেন,গাছ কাটার কাজে তাঁদের লাগিয়েছে মন্ত্রী সিদ্দিকুলা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী । ব্যবসায়ী রহমতুলা গাছ কাটানোর অনুমতি নিয়েছেন বলেই তাঁরা জানেন । তবে সব সত্য জানাজানি হয়ে গিয়েছে বুঝে, রহমতুল্লা চৌধুরী আসল ঘটনা ধামাচাপা দেবার কোন চেষ্টা আর করেননি। তিনি বলেন,’আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তাই দু’দিন আগে জরিমানা (ফাইন) বাবদ ২৪ হাজার ৪৪৭ টাকা আমি বন দফতরে মিটিয়ে এসেছি ।’ এরপর বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহা জানিয়ে দেন, ‘বনফতরের অনুমতি না নিয়েই গাছ কাটা হচ্ছিল।এই কারণে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ আর শুক্রবার পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান অনিন্দিতা রায় জানান,’বন দফতরের বিনা অনুমতিতে এই ভাবে শতাধিক গাছ কেটে ফেলাটা ঠিক কাজ হয়নি। এ নিয়ে এলাকার মানুষজন ও গাছপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে ।’।