প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ জুলাই : বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রীদের কালো পতাকা দেখানোটা বাংলায় নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে বৃহস্পতিবার ঘটলো একেবারে উলট-পুরান কাণ্ড।খোদ রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর নিজের বিধানসভা এলাকায় তাঁর পথ আটকে তাঁকে দেখানো হয় কালো পতাকা।তবে শুধু কালো পতাকা দেখানোই নয়,পুলিশ কনভয়ের পিছনে মন্ত্রী মশাই যে গাড়িতে সওয়ার ছিলেন সেই গাড়িতেও বেপরোয়া হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়। তাঁকে ’খুনের’ ছক কষা হয়েছিল বলে দাবি করে মন্ত্রী মশাই গোটা ঘটনার দায় মন্তেশ্বরের দোর্দন্ড প্রতাপ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোসেন শেখের উপরেই চাপিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি তাঁর উপর হওয়া হামলার ঘটনার জন্য মন্তেশ্বর থানার আইসিকেও নিশানা করেছেন ।
শহীদের স্মরণে আগামী ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় রয়েছে তৃণমূলের শহীদ স্মরণ সভা। ২১ শে জুলাইকে সামনে রেখে মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গায় প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার বেলায় মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গা সভাস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন
এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী । ওই সময়েই চরম বিক্ষোভের মুখে পড়েন গ্রন্থাগার মন্ত্রী। প্রথমে মন্ত্রীর কনভয় আটকায় উন্মত্ত জনতা। তার পর তাদের মধ্যে কেউ হাতে কালো পতাকা , আবার কেউ হাতে ঝাঁটা নিয়ে মন্ত্রীর গাড়ির পথ আটকান । ’গো ব্যাক’ স্লোগানে তুলে তারা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীরর গাড়ির সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ।মন্ত্রী মশাই কে উদ্দেশ্য করে তারা “চিটিংবাজ” ও “ধাপ্পাবাজ” বলে বেঁধা শুরু করেন । পুলিশের সামনে এমন উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মাঝে মন্ত্রী মশাই যে গাড়িতে সওয়ার ছিলেন সেই গাড়িতেও আক্রমণ শানানো হয়। গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয় । এছাড়াও মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সদস্য আজিজুল হকের গাড়ি সহ
আরো দুটি গাড়িতে বেপরোয়া ভাঙচুর চালানো হয় ।
এমন ঘটনা জন্য কোন রকম অনুতাপ প্রকাশ না করে বিক্ষোভকারীরা এলাকার বিধায়ক সিদ্দিকুলাহ চৌধুরীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। তারা অভিযোগ করেন,বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গত চার বছর ধরে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এলাকার কারুর খোঁজখবর রাখেননি । উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েও মন্ত্রী মশাই তার বাস্তবায়ন করেননি। বিক্ষোভকারীদের অনেকে আবার সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে “ভোটপাখি” বলেও কটাক্ষ করে বলেন শুধু ভোটের সময় এলাকা সফরে আসেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী । ভোট মিটে গেলেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গা সহ আশেপাশের অঞ্চলে রাস্তা, পানীয় জল,স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভে সামিল থাকা ব্যক্তিরা ।
এদিকে নিজের বিধানসভা এলাকায় নিজের দলের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হয়ে বেজায় চটে গিয়েছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এদিন বিকালে তিনি ছুটে যান জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাসের কাছে।পুলিশ সুপারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ’দল’ ছাড়ার হুমকি দেন। পাশাপাশি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন,’আমাকে কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি আমার উপর আক্রমণ হয়েছে। আমার
গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গা হয়েছে। আমি আহত হয়েছি ।’
মন্ত্রী মশাই অভিযোগ করেন,’মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে এদিন আমার উপর হামলা হয়েছে।’
পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এদিন পুলিশের বিরুদ্ধের একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী সুরক্ষিত নয়, সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে ? একই সঙ্গে তিনি বলেন,’পরিকল্পনা করে আমাকে ‘খুনের’ চক্রান্ত করা হয়েছিল।’ এদিনের গোটা ঘটনা সবিস্তার দলের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন । এই হামলার ঘটনা নিয়ে আগামী ১০ তারিখে কলকাতায় ব্যাপক ভাবে প্রতিবাদ হবে।
যদি দল কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে দল ছেড়ে দেবেন বলেও এদিন হুমকি দেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। এদিন অনেক চেষ্টা করেও ফোনে মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোশেন শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারা না যাওয়ায় তার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । মন্তেশ্বরের ঘটনা নিয়ে বিজেপি নেতারা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি । জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’মন্তেশ্বরের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দলে ’মাৎসন্যায়’ শুরু হয়ে গিয়েছে ।’।

