এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ নভেম্বর : ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন(এসআইআর) নিয়ে তুমুল বিরোধিতা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । নির্বাচন কমিশন বিজেপি এবং বিএলও-দের হুমকি ধমকি তো লেগে আছেই, এবারের রোহিঙ্গাদের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সরাসরি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে তুলনা টানলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর ব্রাত্য বসু । যানিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার । তিনি এই তুলনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়” বলে বর্ণনা করেছেন ।
ব্রাত্য বসুর একটা ভিডিও ক্লিপ সোশাল মিডিয়া এক্স-এ শেয়ার করেছেন সুকান্ত মজুমদার(যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন) । ভিডিওতে ব্রাত্য বসু কে বলতে শোনা গেছে, “এসআইআর নিয়ে আপনাদের বলি, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা যদি এখানে ঢোকে….আমার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বলেছেন…ভুলে যাবেন না মায়ানমার মানে বার্মা….ওখান থেকে কলকাতা আসার রাস্তা মানে…পশ্চিমবঙ্গ… হচ্ছে আজাদ হিন্দ ফৌজের আসার রাস্তা ।’ ব্রাত্য যখন এই মন্তব্য করেন তখন তার পাশে দেখা যায় কথিত ধর্মনিরপেক্ষ কবি ও তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুবোধ সরকারকে ৷ যিনি নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমান করার জন্য কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্যে সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে রান্না করা গোমাংস ভক্ষণ করেছিলেন ।
তবে এই কথার মধ্য দিয়ে ব্রাত্য বসু কি বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয় ৷ আদপে কি তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন ? তাও খোলসা করেননি ব্রাত্য । তবে সুকান্ত মজুমদার পুরো ভিডিওটি শেয়ার না করায় ব্রাত্য বসু কি পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন তা স্পষ্ট নয় । কিন্তু “আজাদ হিন্দ ফৌজ”-এর সাথে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের তুলনা টানাকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা ওই মহান বীরদের অবমাননা হিসাবে দেখছেন সকলে । ব্রাত্য বসুর এই মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৷
সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর সেনানীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তুলনা করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।’ তিনি লিখেছেন,’১৯৪৪ সালে সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ যখন বার্মা হয়ে ভারতের মাটিতে প্রবেশ করেছিল, তখনও নেহরু কংগ্রেস তাঁদের “অনুপ্রবেশকারী” বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। আজ কার্যত একই ভাষা পুনরায় ব্যবহার করার এই অপচেষ্টা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং দেশপ্রেমের প্রতি গভীর অবমাননা।
আমরা এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং তাঁকে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছি।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) হয়ে মনিপুরের মৈরাং সীমান্ত দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রবেশ করেছিল। আর রোহিঙ্গারা জেহাদ করতে গিয়ে মায়ানমার সেনাবাহিনীর তাড়া খেয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে। নেহরু কংগ্রেস এর মতো ব্রাত্য বসুও আজাদ হিন্দ ফৌজকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিতে চাইলেন।
আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছরেরও বেশি সময় পরে, একই ভাষা পুনরায় ব্যবহার করা শুধু আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর সেনানীদের প্রতি অবমাননা নয়, বরং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিও গভীর অসম্মান।’

