জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৬ মে : একটা সময় গ্রাম বাংলায় দেড় ইঞ্চি পাইপের টিউব ওয়েল ছিল পানীয় জলের একমাত্র উৎস। মোটামুটি ৬০-৭০ ফুট নীচে থেকেই পানীয় জল পাওয়া যেত। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের প্রশ্রয়ে কৃষি জমিতে সেচের জন্য পানীয় জলের স্তরে একের পর এক অগভীর নলকূপ বসানো হয়। গ্রীষ্মের সময় দ্রুত জলের স্তর নেমে যাওয়া এবং অগভীর নলকূপের সাহায্যে বেপরোয়া জল তোলার ফলে সঙ্কট দেখা দেয় পানীয় জলের। টিউব ওয়েলের পাইপ আরও গভীরে নামিয়ে সুরাহা হয়না। খরচের জন্য সব গৃহস্থের পক্ষে সিলিণ্ডার কল বসানো সম্ভব হয়না। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় সিলিণ্ডার কল বসানো হয়। কিছু পরিবার ব্যক্তিগত ভাবেও বাড়িতে সিলিণ্ডার কল বসিয়ে নেয়।
এদিকে প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হতে শুরু করে মানুষও তত বিলাসে মত্ত হয়। বাড়িতে বাড়িতে বসানো শুরু হয় বিদ্যুৎ চালিত মিনি সাবমার্সিবল পাম্প। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিলিণ্ডার কলটাই পাম্পে পরিণত হয়। ফলে হস্তচালিত টিউবওয়েলের অস্তিত্ব থাকেনা। এমনকি গ্রামে গ্রামে সরকার যেসব সিলিণ্ডার কল বসিয়েছিল সেগুলোও অবহেলায় পড়ে থাকে। বিকল হয়ে গেলে মেরামতের তাগিদ থাকেনা। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন এলাকায় মিনি পাম্প বসিয়ে দেওয়ায় অবহেলাটা আরও বেড়ে যায়। সাধারণ পরিস্থিতিতে সমস্যাটা বোঝা না গেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
গত কয়েকদিন ধরে কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। একই কারণে, প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, গত ২৫ শে মে বিকেল থেকে চাণক অঞ্চল সহ পশ্চিম মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন । দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার জন্য বাড়ির ট্যাঙ্কে সঞ্চিত জলের ভাণ্ডার শেষ। এদিকে সরকার নির্মিত সিলিণ্ডার কলগুলোর অধিকাংশ খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে পশ্চিম মঙ্গলকোটের গোতিষ্টা অঞ্চলের পশ্চিম গোপালপুরের জনৈক গ্রামবাসী বললেন, ‘পানীয় জলের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পঞ্চায়েতের সদস্যরা যদি সঠিক সময়ে নজর না দেয় তাহলে এদের রেখে লাভ কি?’ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সিলিণ্ডার কলগুলো সারানোর জন্য কি নেতারা কম কমিশন পায় বলে এই অবহেলা !’
তবে এই পরিস্থিতি শুধু মঙ্গলকোটে নয়, পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। গোতিষ্টা পঞ্চায়েত প্রধান নবকুমার ঘোষ বললেন,’অবশ্যই সমস্যা আছে। চেষ্টা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে। মাঝে মাঝে সময়মতো মিস্ত্রির অভাবের জন্য দেরি হয়। পানীয় জল না পেলে মানুষের ক্ষোভ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।’।