এইদিন ওয়েবডেস্ক,মেওয়াত,০৩ আগস্ট : হরিয়ানার নুহ(Nuh) জেলার মেওয়াতে মহাদেবের জলাভিষেকের শোভাযাত্রার উপর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের হামলার ঘটনা আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসছে । কিভাবে ঘটনার দিন হিন্দু পূণ্যার্থীদের পরিকল্পিতভাবে নিশানা করেছিল ‘মিনি পাকিস্তান’ মেবাতের জিহাদিরা, তানিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন হামলার মুখে পড়া পূণ্যার্থীরা । এক মহিলা মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘ওরা(মুসলিমরা) একের পর পূণ্যার্থী বোঝাই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল । গাড়িতে অল্প বয়সী মেয়েদের টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পাশের জঙ্গলের দিকে । আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে পুরুষদের কপালে তিল আঁকা এবং গেরুয়া পোশাক পরে তাদের গুলি করে মেরে দে ।’ কিন্তু জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়া ওই সমস্ত মেয়েরা সংখ্যায় কত এবং তাদের শেষ পরিনতি কি হল তিনি তা বলতে পারেননি ।
মহিলা বলেন,’আমাকেও জঙ্গলের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল । কিন্তু হামলাকারীরা হাত ফস্কে আমি শিবমন্দিরে ছুটে পালিয়ে আসি । স্বামীকে ফোন করে বলি, হয়তো জীবিত অবস্থায় আমি আর বাড়ি ফিরবো না । ছেলেমেয়ের খেয়াল রেখো ।’ তিনি বলেন,’মন্দিরে তখন প্রচুর শিশু ও বৃদ্ধ বৃদ্ধা আশ্রয় নিয়েছে । শিশুরা বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে । বয়স্ক মানুষরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে । এদিকে অন্ধকার নেমে গেছে । ক্রমশ আতঙ্ক গ্রাস করছে সকলকে । ওই অবস্থায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা মন্দিরের মধ্যে আমাদের কাটাতে হয়েছে ।’
জানা গেছে,মহাদেবের যে মন্দিরে হিন্দু পূণ্যার্থীরা জলাভিষেকের জন্য গিয়েছিলেন সেই মন্দিরটির চারদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা । অতি প্রাচীন এই মন্দিরটি মহাভারতের সময়কালে পান্ডবরা নির্মান করেছিলেন বলে কথিত আছে । তিন শতাধিক শিড়ি দিয়ে উঠে মন্দিরে যেতে হয় । মন্দির থেকে ৪ থেকে ৫ কিমি দূরে মুসলিম অধ্যুষিত মেওয়াত এলাকা । মেওয়াত ও সংলগ্ন এলাকায় আট লাখের অধিক মুসলিম এবং দু’লাখের আশপাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস । তার মধ্যে মন্দিরের আশেপাশে এলাকায় ১০-১২ ঘর দরিদ্র হিন্দু আদিবাসী পরিবার বসবাস করে । ওই পরিবারগুলি জলাভিষেক করতে যাওয়া পূণ্যার্থীদের পরিচর্যা করেছিলেন । কিন্তু জলাভিষেক করতে আসার পথেই পূণ্যার্থীদের গাড়িতে হামলা চালায় মেওয়াতের মুসলিমদের দল । তারা বিনা প্ররোচনায় একের পর এক গাড়িতে গুলি ও বোমা ছোড়ে,পেট্রোল বোমা ছুড়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় । মন্দিরের পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলির বাড়িতে আশ্রয় নেয় । হামলাকারী কট্টরপন্থীদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে ।
মন্দিরের পূজারি দীপক শর্মা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,’দুপুর পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল । প্রচুর শ্রদ্ধালু আসছিল যাচ্ছিল । কিন্তু বিকেল প্রায় ৩ টে নাগাদ মন্দির থেকে দু-আড়াই কিমি দূরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে যায় । আর যা কিছু হয়েছে হঠাৎ হয়েছে । মন্দিরের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার শ্রদ্ধালু আটকে গিয়েছিলেন । বিকেল প্রায় সাড়ে ৬ টা নাগাদ পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায় ।’
স্থানীয় এক আদিবাসী বৃদ্ধা বলেন,’মেওয়াতের মুসলিমরা পাহাড়ে উঠে মন্দির লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে । ওইদিন রাতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা গুলি চলে । পুলিশও পালটা গুলি চালিয়েছিল । কিন্তু মুসলিমরা দলে ভারি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুলিশকে পিছু হঠতে হয় ।’ বৃদ্ধা বলেন,’এর আগেও মহাদেবের জলাভিষেক হয়েছে । কিন্তু হামলার ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু এবারে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু পূণ্যার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে । মিনি পাকিস্তান হয়ে গেছে মেওয়াত । ওই ঘটনার পর আমরা এখন খুব ভয়ের মধ্যে আছি ।’
কিন্তু হিন্দু পূণ্যার্থীদের উপর হঠাৎ হামলা কেন করল মেওয়াতের মুসলিমরা ? স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় একটা জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরের উপস্থিতি এবং শ্রদ্ধালুদের নিয়মিত আনাগোনা মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় মুসলিম কট্টরপন্থীরা । যে কারনে তারা এবারের জলাভিষেক যাত্রাকে ভন্ডুল করে শ্রদ্ধালুদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে চেয়েছিল,যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর মন্দির মুখি না হয় ।।