এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৯ আগস্ট : শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও হাসিনা ঘনিষ্ঠদের জীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে । প্রায় দিনই ঘটছে খুন,ধর্ষণ,লুটপাট,অগ্নিসংযোগের ঘটনা । আর ওই সমস্ত ঘটনার নেপথ্যে দুই কট্টর ইসলামি দল জামাত-ই-ইসলামি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির(বিএনপি) জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ । জঙ্গিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসিনা অনুগত সাংবাদিকেরাও । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল থেকে এক নারী সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লেকের জলে ভাসছিল রাহানুমা সারাহ (৩২) নামের ওই সাংবাদিকের লাশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে লাশটি উদ্ধার করা হয় । মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া পরিচয়পত্র অনুযায়ী, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভির নিউজরুম এডিটর ছিলেন রাহানুমা। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিযোগ যে সাংবাদিককে মেরে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও অফিসে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন রাহানুমার স্বামীর সায়েদ শুভ্র। তারা কল্যাণপুরে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মোহম্মদ বাচ্চু মিয়া জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে দুইটার দিকে রাহানুমার নিথর দেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনেন পথচারীরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকের মৃতদেহ উদ্ধারের ব্যাপারে হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিলের জলে রাহানুমার দেহ ভাসছিল। পথচারীরা দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। খবর পেয়ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থেকে ঢাকায় এসেছেন রাহানুমার বাবা বখতিয়ার শিকদার। তিনি থানায় যেভাবে অভিযোগ দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান ।
এদিকে রাহানুমার স্বামী সায়েদ শুভ্র বলেন, মঙ্গলবার রাহানুমা অফিসে যান। তবে রাতে বাড়ি ফেরেননি। এরমধ্যে একবার ফোন করলে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে রেখে দেন। শুভ্র বলেন, রাত তিনটার দিকে খবর পাই, রাহানুমা হাতিরঝিলের লেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে রাহানুমার লাশ দেখতে পাই। শুভ্র আরও জানান, তারা সাত বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছেন, দুজনের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি হয়নি। তবে কী কারণে রাহানুমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি শুভ্র।
তবে সাংবাদিকদের স্বামী আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও সন্দেহ দানা বাঁধছে মৃত্যুর আগে করা ওই সাংবাদিকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে। অন্যদিকে সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় । তিনি এই ঘটনাটিকে ‘বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ’ বলে দাবি করেছেন। কারণ সারাহ যেখানে কাজ করতেন তা একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেল। ওই চ্যানেলের মালিককেও সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে মৃত্যুর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি পোস্ট করেছিলেন সারাহ। একটি পোস্টে ফাহিম ফয়জল নামে এক ব্যক্তিকে ট্যাগ করে লিখেছিলেন, ‘তোমার মতো একজন বন্ধু থাকা খুব সুন্দর। ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করুন। আশা করি, শীঘ্রই নিজের স্বপ্নপূরণ করবে। আমি জানি, আমাদের একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা পূরণ হল না বলে ক্ষমাপ্রার্থী।
জীবনের সবক্ষেত্রে ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করুন।’ অন্য একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।’ অনুমান যে রাহানুমা সারাহ ‘জীবন্মৃত’ শব্দ প্রয়োগ করে আদপে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন ।।