কালসিটে রক্তের দাগ ঠিক পিঠের মাঝে। বডিটা পড়ে রয়েছে রেল লাইনের ধারে। পুলিশ বলছে রেলে এক্সিডেন্ট কিন্তু ওই ধাপার মাঠের পাশে এমন ঘটনা বহু ঘটে। কাছে রেল লাইন বলে বহু ঘটনা রেলের মধ্যে চাপা পড়ে যায়। কিন্তু এবারেরটা একটু অন্যরকমে।
......বেশ কয়েকদিন ধরে সাংবাদিক মৌতৃষার হাতে কন্টেন্ট নেই। ওর চ্যানেল টার টি.আর.পি.র রেটিং কমে যাচ্ছে। নিউজ এডিটর-এর প্রধান এই নিয়ে তিনবার হলো ওকে ডেকে মিটিং করেছেন।
সেদিন ছিলো রোববার। রাত প্রায় ২টো হতে চলেছে। মা সুলোচনা দেবী মেয়ের ঘরে উঁকি দিতে গিয়ে দেখলেন মেয়ে নেই। ঘরে ঢুকতে বিছানায় একটা ছোট চিরকুটে লেখা পেলেন, 'গোপন মিশনে যাচ্ছি। চিন্তা করো না। তোমারি তো মেয়ে আমি,জানো তো; আমি ভীষণ সাহসী'। এই চিরকুট এই প্রথমবার নয়। এমন ঘটনা এর আগেও হয়েছে বহুবার। তাই সুলোচনা দেবীর এখন আর মেয়েকে নিয়ে ভয় করে না।
পরের দিন সকালে খবরের কাগজে চোখ পড়তেই দৃষ্টি গেলো রেল লাইনের ধারে পড়ে থাকা বডিটার দিকে। কি আশ্চর্য বডিটা পড়ে আছে। অথচ কিছু লোকজন বডিটা সরাতে দিচ্ছে না। পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি থেকে শুরু করে একপ্রকারের খন্ড যুদ্ধ চলছে। কিছু স্থানীয় মানুষদের দাবী, একটু সন্ধ্যা নামলেই রেল লাইনের ধারে চলে অশরীরি আত্মার তান্ডব। ওই পথের ক্রসিং দিয়ে ধাপার মাঠের ঘরে ফেরা যায় না। কাজ থেকে ফিরতে হলে সন্ধ্যা নামার আগে ফিরতে হয়। না হলেই এমন নাকি লাশের সারি পড়ে থাকতে দেখা যায়। তারা আবার উঠে চলাফেরা করে। গলাকাটা, হাতকাটা আরও কতো রকমের সব ওদের দেখতে। রীতিমতো তেড়ে আসে। কি বিশ্রী ওদের গায়ের গন্ধ। কিন্তু ওই অশরীরীরা পরের ট্রেন এলেই আবার কোথাও মিলে যায়।
ওদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় কিছু মানুষ এক তান্ত্রিক বাবাকে ডেকেছেন। তিনি নাকি ওই পড়ে থাকা বডির উপরে তন্ত্র মন্ত্র করে অশরীরি গুলোকে মুক্তি দেবেন।
পুলিশ বাধা দিতে গেলেই চলছে রণক্ষেত্র। মিডিয়াগুলো রাতদিন তাই দেখিয়ে চলেছে। কেউ প্রশাসনের, কেউ আবার ভুত মানুষের তর্জার আসর বসাছেন। তাতে বিশেষজ্ঞ আসছেন। কত রকমের কন্টেন্ট হচ্ছে রাতারাতি।
এদিকে মৌতৃষার চ্যানেলে এক সাংবাদিক এর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংবাদ। খুব অদ্ভুত ভাবে সৌরাশিষ এর খোঁজ মিলছে না বহুদিন ধরে।
সুলোচনা দেবী ছোট মাছগুলো ধুতে ধুতে মেয়ের কথা ভাবছেন। কলাপাতা কেটে এনেছে মালতি বাগান থেকে। সরষে দিয়ে মাছগুলোর ভাপা হবে। মেয়েটা খুবই খেতে ভালোবাসত। কিন্তু কোথায় আছে এখন কে জানে! চারিদিকে যা সব হচ্ছে! মা এর মন তো যতই শক্তিধারিনী হোন না কেন একটু তো বিচলিত হয়। আজ দশ দিন হলো মেয়ের সাথে যোগাযোগ নেই।
রেল লাইনের ধারে বডিটারও পচন ধরতে শুরু করেছে। কে আর কিবা তার পরিচয়? কে জানে। যার যায় সেই বোঝে যন্ত্রণা কতটা! এদিকে ওর চ্যানেল এর এক সাংবাদিক এর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এবার যে সত্যিই চিন্তা হচ্ছে।
আজ ১১তম দিন। অন্যদিনের মত মাঝরাতে বাথরুমে যাবেন বলে উঠেছেন সুলোচনা দেবী। মেয়ের ঘরের পাশ দিয়েই বারান্দার কোণে যেতে হয় বাথরুমে। হাওয়াতে দরজার পর্দাটা একটু উড়তেই সোজা চোখ পড়লো ঘরের বিছানার উপরে। ……এ কি! কেউ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মনে হচ্ছে বিছানায়। পিঠে কালসিটে রক্তের দাগ। শরীর দিয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে গেলো, হিম শীতল স্রোতের ধারা। এই বডি তো সেই রেল লাইনের।
…….পরের দিন সকালে দরজা খুলতেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো বাগান থেকে বারান্দা,……বারান্দা থেকে ঘরের মধ্যে আলোর রশ্মি ছড়িয়ে পড়ল মৌতৃষার চোখে মুখে, পিঠের কাটা অংশে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের ঘোষণা হলো ওদিকে।
বহুদিন দিন ধরে চলতে থাকা বেওয়ারিশ লাশকে ঘিরে গড়ে ওঠা কাহিনীর সমাপ্তি হয়েছে। লালবাজার গোয়েন্দা বাহিনীর এক অংশবিশেষের সাথে মৌতৃষার টিম যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ধরেছেন এক দল চোরাকারবারিদের। যারা মানুষের শরীরের কিডনি, চোখ সহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে লাশগুলো ফেলে যেতো রেল লাইনের ধারে। কিছু মানুষ ভুতের দল আজ লকাপে বন্দী।
…….চ্যানেলের টি.আর.পি. র রেটিং এখন তুঙ্গে!