বিয়ের চার বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও মেঘলা কোন সন্তান দিতে পারেনি। তাই আজ মেঘলা সবার কাছে অপয়া নামে পরিচিত। কিন্তু ঋতবান (মেঘলার স্বামী) মেঘলাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে বলে সন্তানের সুখ না পেলেও মেঘলাকে এখনো সেই আগের মতোই ভালবাসে। তাই লোকের কথায় খুব একটা পাত্তা দেয় না সে।
ঋতবানের মা খুবই বিরক্ত ঋতবানের প্রতি কারণ সন্তান না দেওয়ার পরেও ঋতবান তার বউকে ভালবাসে বলে। তিনি সবসময় চান ওই অপয়াকে তাড়িয়ে দিয়ে আর একটা বিয়ে করুক তার ছেলে। কিন্তু ঋতবান যে মেঘলাকে বড্ড ভালবাসে। তার কাছে সন্তানের থেকেও মেঘলা বেশি আপন, বেশি প্রিয়।
প্রত্যেকদিন নিজের শাশুড়ির কটু কথা সহ্য করতে না পেরে শেষমেষ মেঘলা নিরুপায় হয়ে ঋতবানকে অনুরোধ করে সে যেন আবার বিয়ে করে। সে জানে যে ঋতবান তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না তবুও তার মার কথা ভেবে তার একটা বিয়ে করা উচিত। সে যাতে এই সিদ্ধান্ত নেয় সেই ব্যাপারে বারবার বোঝাতে চায়। কোন কথায় কাজ হচ্ছে না দেখে মেঘলা এবার দিব্যি দেয় যে ঋতবান যদি আর একটা বিয়ে না করে তাহলে মেঘলা আর এই জীবন রাখবে না। মেঘলা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল যে এই কথাটা বলার পরই ঋতবান মানতে রাজি হবে। কারণ মেঘলাকে সে ভালবাসে।
তারপর শুরু হলো মেয়ে দেখার পর্ব। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি চলছে। এই অপয়া মেয়ে বিদায় হবে শুনে মেঘলার শাশুড়ি মা তো বেজায় । মেঘলা ঋতবানের মায়ের কাছে শুধু এটুকুই অনুরোধ করে যেদিন ওর আর একটা বিয়ে হবে সেদিন ও পুরোপুরি ঋতবানকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। তার আগের এই কিছু দিন সে এখানেই থাকতে চায়। ঋতবানের মা চায় যে এই অপয়া মেয়ের ছায়া যাতে আর একটা মেয়ের উপর না পড়ে, তাই বিয়ের দিনই বিদায় করে দেবেন ।
যেদিন থেকেই মেয়ে খোঁজা হচ্ছে সেদিন থেকেই এক অজানা ভয়ের কারণে মেঘলা খাওয়া-দাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। তার রোজই মাথা ঘোরে, বমি হয় । ঋতবান খেয়াল করছে মেঘলার শরীর ভালো যাচ্ছে না। কিন্তু তারও কিছু করার নেই। মেঘলা নিজেই এই পথ বেছে নিয়েছে। দিন দিন মেঘলার শরীরে অবনতি দেখা যাচ্ছে।
আজ সেই দিন, ঋতবান আর অদ্রিজার বিয়ে (অদ্রিজা হলো সেই মেয়ে যার সাথে ঋতবানের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে)। সকাল থেকেই ঋতবানের মন খারাপ। ওর মা বেজায় খুশি। আর এদিকে মেঘলা প্রায় বিছানায় শয্যাশায়ী। তাও খুশি মনে নিজের বরের আবার বিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যেবেলায় শুরু হলো বিয়ে। ওদিকে মেঘলার খুব মাথাব্যথা করছে। যখন মালাবদল হতে যাবে ঠিক তখনই মেঘলা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ঋতবান ঘামছে, মেঘলার কিছু হলে সেও বাঁচবে না। মেঘলাকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। মেঘলাকে পরীক্ষা করে ডাক্তার বাইরে এলে উদ্বিগ্ন ঋতবান ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি বললেন- আপনি বাবা হতে চলেছেন। ঋতবানের দুচোখ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা। যাক তাকে আর মেঘলাকে হারাতে হবে না। ঋতবান ঝড়ের মতো ছুটে গেল তার মেঘলার কাছে। মেঘলা খবরটি শুনেই দুই চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। সে আজ খুব খুশি। তাকে আর কেউ অপয়া বলবে না। সে ঋতবান কে সন্তান দিতে পারবে। তাকে ছেড়ে যেতে হবে না ঋতবানকে।
নির্দিষ্ট সময় পর মেঘলার কোলজুড়ে জন্ম নিল এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। সন্তানের হাত ধরেই বেঁচে থাক পৃথিবীর সমস্ত স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক আর অবাধ ভালোবাসা ।।