আজ ঝিলমের ভীষণ খুশির দিন কেননা একটু পরেই আজকের দিনটি যে তার কাছে খুব স্পেশাল হতে চলেছে। তাই সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাবা তার অফিস থেকে কখন ফিরবে ! এই নিয়ে তার মা’কেও বারবার বিরক্ত করছে- বাবা কখন আসবে মা ? বাবা কখন আসবে ?
সেই যবে ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়তো ঝিলম তখন থেকেই ওর মনে মনে ইচ্ছে হতো কবে ও ক্লাস নাইনে উঠবে আর ওই বড়ো দিদিদের মতো শাড়ি পড়ে বড় দিদিদের মতো সারা স্কুল মনিটরিং করবে!
শাড়ি পড়ার সখটা তো মিটেছে ঝিলমের। ক্লাস নাইন থেকে টেনে ও উঠেছে। কিন্তু তার এখনও আসল সখটা যে মেটেনি। তাই এই নিয়ে মনটা বড্ড খুঁতখুঁত করে ঝিলমের। কিন্তু বাবাকেও বলার সাহস নেই যে –
বাবা, তুমিতো একদিন বলেছিলে ক্লাস নাইনে ওঠো কিনে দেবো। সামনে টেস্ট আরম্ভ হতে চলেছে আর এখনও পর্যন্ত তুমি কিনে দিলে না। খুব দুঃখ হতো ঝিলমের।
মাঝে মধ্যে অবশ্য মা’কে বলতো মনের কথা কারণ মা যে তার বন্ধু ছিল।
আজ সকালে মা যখন কথাটা বলল তখন থেকে যে কী খুশি ঝিলম! সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একটা টানটান উত্তেজনায় ছটফট করছে। কখন বাবা আসবে!
ওই ওই যে বাবা এসে গেছেন। যাক বাবা বাঁচা গেল। কী মজা! এবার তাহলে সত্যিই যাওয়া হবে। মনে মনে আনন্দে আত্মহারা হয় ঝিলম।
যথারীতি বাবা চা টিফিন করে ঝিলমকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। শোভাবাজার থেকে ট্রাম ধরে সোজা চলে এলেন ডালহৌসি। ডালহৌসিতে প্রচুর দোকান। তার মধ্যে একটি দোকানে তারা ঢুকল এবং সেখান থেকে পছন্দ করে নিজের বহু আকাঙ্খিত জিনিসটি কিনল।
উফফফ! কী আনন্দ আজ! আনন্দে তখন ডগমগ করছে ঝিলম। ভাবছে কখন বাড়িতে গিয়ে ভাই-বোনেদের দেখাবে, কখন বন্ধুদের দেখাবে!
বাড়ি ফেরার জন্য তারা ট্রাম ধরল। ট্রামের মধ্যে সদ্য হাতে পাওয়া সঙ্গীটিকে সমানে নাড়াচাড়া করতে থাকে ঝিলম। ট্রাম থেকে নামার সময় হতেই বাবা তার হাত ধরে বললেন- এবার আমাদের নামতে হবে। সিট ছেড়ে ঝিলম গেটের দিকে এগিয়ে গেল। বাবা পিছন থেকে বললেন – গাড়ি থামলে নামবে। কিন্তু ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে।
গাড়ি থামার আগেই ঝিলম পা বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যস চিতপটাং!
পিছনে হট্টগোলের আওয়াজ। তারই মাঝে বাবা ছুটে আসে মেয়ের কাছে। মেয়ে যে তার পড়ে গেছে! মেয়ের হাত-পা রক্তারক্তি হলেও বাম হাতটা সে উপর দিক করে তুলে রেখেছে। কারণ ওই হাতেই আছে তার বহু আকাঙ্খিত, বহু প্রত্যাশিত জিনিসটি।।