আগেকার আমলে গৃহস্থ পরিবার। বাড়িতে বয়স্ক শ্বশুর, শাশুড়ি মা, ছেলের বৌ, নাতি-নাতনি। পয়সা উপার্জনের জন্য বাড়ির কর্তা কাজে ব্যস্ত। বাড়ির বৌমাকে সবকিছু সামলাতে হয়।
গ্রামের মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা বাড়ি, বাঁশ বাগান, কিছুটা দূরে দূরে মুদিখানা, এক মাইল দূরে বাজার যেতে হয়।
বাড়ির ছোট্ট নাতির বছর ৯-১০ বয়স হবে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। দোকান থেকে কিছু জিনিসের জন্য ছেলেকে দোকানে যেতে বলা হচ্ছে- বাবু, দাদু চা খাবে? চা-টা নিয়ে এনে দাও তো।তুমি এলে আমি সন্ধ্যাবাতি দেব। একটু খর করে যাস।
বাবু বলে- ঠিক আছে মা। তুমি আমায় এগিয়ে আনতে যেও যদি দেরি হয়।
বাড়ি থেকে বেশ একটু দূরে দীঘি। দীঘির ধারে গাছ আছে। ছেলের আসতে দেরি হচ্ছে। এদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। মা’র মনে উৎকণ্ঠা। একটু এগিয়ে এসে দেখেন -ছোট ছেলে ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে আসছে।
ছোট ছেলে দেখে একটি গাছের তলায় লাল পাড় শাড়ি পরা একজন মহিলা মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক মা যেমন বাড়িতে শাড়ি পড়ে থাকেন।
মনে সাহস পেল। মা তুমি এসেছ?- দূর থেকে বলতে বলতে সে ছুটতে ছুটতে আসছে। যত কাছে আসছে মা সাড়া দিচ্ছেনা। আরও এগিয়ে আসছে বলতে বলতে- মা, ওমা তুমি কথা বলছো না কেন?
তুমি এত দেরি করলে কেন? মা সাড়াই দিচ্ছে না। তখন বাবু কি করলো ধৈর্য ধরতে না পেরে মা’র মুখের ঘোমটাটা খুলে দিল ।
দেখলো মার আধ পোড়া কালো মুখ। কোনো কথা বলছে না। বাবু খুব ভয় পেয়ে গেছে।
দূর থেকে দেখতে মা হাতে লন্ঠন নিয়ে এগিয়ে আসছে। কিরে বাবু এত দেরি করলি কেন?- মা বলছেন। বাবু বলে- তুমি কেন এত দেরি করলে? দোকানি দাদু তো আমায় দিতে দেরি করলো। একজনকে দেখলাম তোমার মত দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। তুমি ভেবে মুখটা খুলে দেখলাম তুমি কথা বলছিলে না।
মা তখন বললেন -আমি এইতো আমি তো আগে আসিনি।
…..তুমি দেখবে চলো ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে।
তারপর মা, ছেলে গিয়ে দেখল কেউ নেই। ।
আমি আর কোনদিন দোকানে যাব না মা- বাবু বলল। মা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।।