এইদিন স্পোর্টস নিউজ,১৪ ডিসেম্বর : শনিবার কলকাতার সল্টলেকে যুবভারতী স্টেডিয়ামে আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে নিয়ে যে কান্ড ঘটেছে তা গোটা বিশ্বজুড়ে আলোচনা সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে । রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস,ক্লাবকর্তা সুজিত বসু ও তাদের পরিবার থেকে শুরু করে অভিনেত্রী শুভশ্রী ও আয়োজকদের মেসির সাথে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি এবং বিশাল নিরাপত্তা বলয়ের কারনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীরা মেসির টিকি পর্যন্ত দেখতে পায়নি । ক্ষিপ্ত দর্শকরা স্টেডিয়ামে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে । রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ভাঙচুরকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানালেও আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে তাদের সরকার । যদিও অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্ত-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । এবং এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম কুমার রায়ের সভাপতিত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ওই কমিটিতে মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে রাখা হয়েছে । তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ক্লাব কর্তা সুজিত বসুর গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়েছে ।
এদিকে যুবভারতী স্টেডিয়ামের ঘটনায় আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। অবশ্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন খোদ লিওনেল মেসিও । তার অর্থ লোলুপতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদেশের কেউ কেউ । পাশাপাশি বিদ্রুপের শিকার হচ্ছে ভারতও । টি ওয়াই সি (TyC Sports) স্পোর্টস এক্স-এ লিখেছে,’যা উদযাপন হওয়ার কথা ছিল তা উত্তেজনা এবং হিংসার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল । “GOAT ট্যুর”-এর অংশ হিসেবে ভারতের কলকাতায় লিওনেল মেসির উপস্থিতি বিপুল প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল, কিন্তু তার উপস্থিতির সংক্ষিপ্ততা সল্টলেক স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডগুলিতে ক্ষোভের আগুন ধরিয়ে দেয়, যেখানে সংগঠনে জালিয়াতির ঘটনা এবং অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। ভক্তরা আশা করেছিলেন যে অন্তত ১০ মিনিটের জন্য খেলা হবে, কিন্তু তা ঘটেনি, এবং তার চলে যাওয়ার পর একটি কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয়।
যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং বাস্তবে যা ঘটেছিল তার মধ্যে অসঙ্গতি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেন, দর্শকদের অভ্যর্থনা জানান এবং কয়েক মিনিট পর চলে যান। এর পরপরই, বেশ কয়েকজন দর্শক, যাদের অনেকের টিকিটের দাম ১০০ ডলারেরও বেশি ছিল, তারা চেয়ার ভেঙে ফেলেন, মাঠে বোতল ছুঁড়ে মারেন এবং এমনকি মাঠে প্রবেশ করেন, যার ফলে নিরাপত্তা জোরদার করতে বাধ্য হতে হয় । কয়েক ঘন্টা পরে, আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর স্থানীয় পুলিশ অনুষ্ঠানের মূল আয়োজককে গ্রেপ্তার করে এবং বিক্রিত টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করে, যা পশ্চিমবঙ্গের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।’
রুশিয়ান নিউজ (Russian News) এক্স-এ লিখেছে,:মাত্র ২০ মিনিট মেসির খেলা দেখার জন্য ১০০ ডলার দেওয়ার পর, এক ভারতীয় ব্যক্তি রাগ করে স্টেডিয়াম থেকে একটি মাদুর(ম্যাট) চুরি করে নিয়ে গেল!’ এই লেখার শেষে হাসির ইমোজি দেওয়া হয়েছে । শেয়ার করা হয়েছে ম্যাট তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি ।
একজন এক্স ব্যবহারকারী (@ivanminat) লিখেছেন,কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশ কি দুর্ভিক্ষপীড়িত মহাদেশের ছোট ভাইবোন নয় ?বিশাল কান এবং অ্যাসপারজার সিন্ড্রোমের বামন ব্যক্তি লুইস সুয়ারেজ এবং সেই বুটলিকার ডি পলকে বল খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য কী মূল্য দিতে হত? সেখানকার মানুষ পাগল জেনেও তাকে এটা করতে কতটা খরচ করতে হত?’
আর একজন এক্স ব্যবহারকারীর (@XGhana) প্রতিক্রিয়া হল , ‘ভারত: ভারতের কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির এক ঝলক দেখার জন্য ১৩৩ ডলার পর্যন্ত মূল্য পরিশোধ করা হাজার হাজার ভক্ত, তার আগমনের মাত্র ২০ মিনিট পরেই ভেন্যু ছেড়ে যাওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েন। বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, ভক্তরা স্টেডিয়ামের ভেঙে ফেলা চেয়ার, বোতল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র মাঠে ছুঁড়ে মারে। নিরাপত্তা কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং সেলিব্রিটিদের দ্বারা বেষ্টিত মেসিকে তারা ঠিকমতো দেখতে না পাওয়ায় ভক্তরা ক্ষুব্ধ হন।’
একজন ক্ষুব্ধ মেসি ভক্ত সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেছেন,’একেবারে ভয়াবহ ঘটনা। তিনি মাত্র ১০ মিনিটের জন্য এসেছিলেন। সমস্ত নেতা-মন্ত্রীরা তাকে ঘিরে ধরেছিলেন। আমরা কিছুই দেখতে পাইনি। তিনি একটিও কিক বা একটিও পেনাল্টি নেননি। তারা বলেছিলেন যে তারা শাহরুখ খানকেও নিয়ে আসবেন। তারা কাউকে নিয়ে আসেননি। তিনি ১০ মিনিটের জন্য এসে চলে গেলেন। এত টাকা, আবেগ এবং সময় নষ্ট। আমরা কিছুই দেখতে পাইনি…।’
একজন এক্স ব্যবহারকারী (@rasmaLai) যুবভারতীর “মেসি কান্ড” নিয়ে লিখেছেন,’সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা ছিল। একজন বিদেশী সেলিব্রিটি ভিআইপিদের সাথে ২০ মিনিট সময় কাটানোর জন্য মানুষ ১৫,০০০ টাকা খরচ করেছে। সেলফি প্রথমে ভারতের রাজনীতিবিদদের পরিবার, আমলা, পুলিশ, অভিনেতা, ব্যবসায়ীরা তোলে । সবাই এটা জানে। তবুও তুমি টিকিট কিনেছো। অভিনন্দন, তুমি প্রতারিত হওনি। তুমি আসল অভিজ্ঞতা পেয়েছো।’
আন্দ্রে মেরিন (Andre Marin) লিখেছেন,’সম্পূর্ণ দুঃস্বপ্ন! মেসির ভারত সফর সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। দর্শকরা মনে করেছিলেন লিও মাঠে কয়েক মিনিট খেলবেন। এছাড়া তারা আশা করেছিলেন যে লিও মাঠের চারপাশে হেঁটে যাবেন, হাত নাড়বেন এবং প্রায় ২০ মিনিট পর স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যাবেন। এতে সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যারা মাঠে আক্রমণ করে সবকিছু ধ্বংস করতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে অভিযোগের পর আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সকল দর্শকদের টিকিটের মূল্য ফেরত দিতে হবে।’
ডম লুক্রে (Dom Lucre) নামে একজন এক্স ব্যবহারকারী মেসির সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘লিওনেল মেসির জন্য ৭০ ফুট উঁচু একটি বিশাল মূর্তি তৈরি করার পর ভারতের ফুটবল ভক্তরা তার উপর ক্ষুব্ধ, কিন্তু মেসি মাত্র ২০ মিনিট অবস্থান করেন, যা ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি করে। তারা কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়াম ভাঙচুর শুরু করে।’
আর একজন এক্স ব্যবহারকারী (LMDiddy14) আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের অর্থ লোলুপতা নিয়ে লিখেছেন,’লক্ষ্য করুন ডি পল কীভাবে অভদ্রভাবে তার হাত সরিয়ে নিচ্ছেন? কেউ যখন দ্রুত ছবি তোলার চেষ্টা করছে তখন কেন বিরক্তিকর আচরণ করছেন? পটভূমিতে মেসির হাসি প্রমাণ করে যে তারা ভারতীয় ভক্তদের সম্পর্কে চিন্তা করে না। তারা ইবিজায় ছুটি কাটানোর আগে কেবল দ্রুত পারিশ্রমিকের জন্য এখানে এসেছে।’ যুবভারতীতে মেসি কান্ডকে “ভারতের জন্য বিশ্বব্যাপী লজ্জা” বলে অবিহিত করেছে ইন্ডিয়ান ফুটবল ।।

