দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ জানুয়ারী : কঙ্কালসার চেহারা । শরীরে জড়ানো ময়লা চিকুটি একটা কম্বল । অন্ধকারছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে একটি মাটির ঘরে বসে রয়েছে পঞ্চাশ উত্তীর্ণ এক বৃদ্ধ । ওই ঘরেই খাওয়া দাওয়া । ওই ঘরেই শৌচকর্ম । ফলে ধুলি ধুসরিত ঘর থেকে বেরোচ্ছে প্রচন্ড দুর্গন্ধ । আর এই অবস্থাতেই দীর্ঘ প্রায় দু’দশক কাটিয়ে দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার হরিবাটি গ্রামের বাসিন্দা শেখ নিজাম আলি নামে বছর চুয়ান্নোর মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রৌঢ় । প্রৌঢ়কে কোনও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার সামর্থ্য নেই দুঃস্থ পরিবারটির । গ্রামবাসীরা দাবি তুলেছেন, সরকারিভাবে তাঁর চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, হরিবাটি গ্রামের বাসিন্দা শেখ নিজাম আলির দু’দশক আগে আর পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন । উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ওই ব্যক্তি ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী । চাষবাসের পাশাপাশি তিনি টিউশন পড়াতেন । নিজাম আলির যখন ২১ বছর বয়স তখন তাঁর বিয়ে হয় ।
প্রৌঢ়ের স্ত্রী সালেহা বিবি বলেন, ‘বিয়ের বছর দেড়েক পর আমাদের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয় । মেয়েটির বয়স যখন আড়াই তিন বছরের তখন স্বামীর মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ ধরা পড়ে । প্রথম দিকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল । কিন্তু পরে অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে হয় । এদিকে মেয়ের বিয়ের জন্য শেষ সম্বল জমিটুকুও বিক্রি করে দিতে হয়েছে । তারপর থেকে দু’জনের পেট চালাতে আমি পরিচারিকার কাজের পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজ করতে শুরু করি ।’
জানা গেছে,মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ শুরু হতেই নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন তিনি শেখ নিজাম আলি । আস্তে আস্তে তিনি হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। বর্তমানে তিনি হাঁটাচলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন । প্রতিবেশী গৃহবধূ আয়েষা খাতুন বলেন, ‘আমার প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে হয়েছে । আজ পর্যন্ত নিজাম আলিকে স্নান বা জলপান করতে দেখেনি । ঘর থেকে বের হন না । সারাদিন ধরে নিজেই নখ দিয়ে ঘরের মধ্যে গর্ত খোঁড়েন । উলঙ্গ হয়েই থাকেন । ঘরের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করে । দুর্গন্ধ বের হয় । ওই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই দিনভর কাটিয়ে দেন ওই প্রৌঢ় ।’
রেজাউল হোসেন নামে অপর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘দেখে খুব খারাপ লাগে । কিন্তু আমরাও অসহায় । তাই আমাদের দাবি প্রশাসনিকভাবে ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক ।’।