জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,১৭ আগস্ট : পেশার টানে একজন সাংবাদিককে খবরের সন্ধানে ছুটে যেতে হয় বিভিন্ন প্রান্তে। সাধারণ মানুষ ‘খবর’ বলতে যা বোঝে একজন সমাজসচেতন সাংবাদিক তার বাইরেও ‘অন্য’ কিছু খবরের সন্ধানে থাকেন। অনেক সময় এই ‘অন্য’ কিছু বিষয়টি একটি অসহায় পরিবারের কাছে আশীর্বাদ রূপে ধরা পড়ে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন । এমনই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিল মেমারি প্রেস ক্লাব । বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র পরিবারের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হল ৬ টি ডোনার কার্ড ।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-২ ব্লকের কুচুট অঞ্চলের মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪০-৪১ এর বিশ্বনাথ মির্ধা,সেদিন অবশ্য তার বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর । তাঁর অভিভাবকরা জানতে পারেন তাদের সন্তান
থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। রোগের নাম শুনলে যেকোনো হতদরিদ্র পরিবার অর্থের কথা ভেবে ভেঙে পড়ত। তবে ভেঙে পড়েনি মির্ধা পরিবার। গরীব ঘরের বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্য গত ছত্রিশ বছর ধরে একটানা প্রতিমাসে এক ইউনিট করে রক্ত জোগাড় করে চলেছেন। পাশে পেয়েছেন গ্রামের মানুষদের। কখনো তারা রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন অথবা জোগাড় করে দিযেছেন। কখনো আবার অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি সংস্থা থেকে রক্ত কিনতে হয়েছে ।
কাছাকাছি এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা মেমারি প্রেস ক্লাবের সদস্য সাহিদুল ইসলামের কানে আসে। তিনি বিশ্বনাথ বাবুর সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করতে গিয়ে জানতে পারেন গত কয়েকমাস ধরেই পরিবারটিকে নগদ অর্থ দিয়ে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত কিনতে হচ্ছে। একটা হতদরিদ্র পরিবারের কাছে বিষয়টি খুবই কষ্টকর। সাহিদুল ইসলাম বিষয়টি মেমারি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আনোয়ার আলীর কানে তোলেন । নিজেদের মধ্যে দ্রুত আলোচনা করে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করে মেমারি প্রেস ক্লাব। যোগাযোগ করা হয় বড়শুল কিশোর সংঘের সঙ্গে।
অবশেষে গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বড়শুল কিশোর সংঘ ও মেমারি প্রেস ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে ৬ টি ডোনার কার্ড তুলে দেওয়া হয় থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত বিশ্বনাথবাবুর হাতে।
উপস্থিত ছিলেন বড়শুল কিশোর সংঘের সম্পাদক পার্থ ঘোষ, মেমারি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আনোয়ার আলী ও সদস্য সাহিদুল ইসলাম, মোহনপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবী মুজিবর রহমান লায়েক, বাপ্পা শেখ, সুরজ লায়েক, বাবুল লায়েক, রঞ্জিত মান্ডি এবং গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা কবিতা মান্ডি। ডোনার কার্ড পেয়ে খুশির ঝিলিক দেখা যায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বিশ্বনাথ মির্ধার কণ্ঠে। তিনি বললেন, অন্তত ছ’মাসের জন্য নিশ্চন্তে থাকলাম।
বড়শুল কিশোর সংঘের সম্পাদক পার্থ ঘোষ বললেন – আমরা ছ’মাসের মধ্যে আবার এখানে আসব। তবে খালি হাতে নয়। সেদিনও হাতে থাকবে ৬ টি ডোনার কার্ড। তাকে সমর্থন করলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেমারি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আনোয়ার আলী।।