শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),২০ নভেম্বর : ফের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল পূর্ব বর্ধমান জেলায় । এবার দলীয় নেতা ও কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যকে । শনিবার বিকেলে মেমারি-১ ব্লকের দলুইবাজার-২ অঞ্চলের পাল্লা বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে বিধায়ক বৈঠক করতে এসেছিলেন । আর ঠিক তখনই হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী ওই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । বিক্ষোভকারীরা বিধায়কের বিরুদ্ধে দলের পুরনো কর্মীদের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মনমর্জিমত কাজ করা ও দলবাজি করার অভিযোগ তোলেন । তাঁরা বিধায়ককে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানান । ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় । খবর পেয়ে মেমারি থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী আসে । পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পুলিশের পক্ষ থেকে বিধায়ককে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করা হয় বলে সুত্রের খবর । এরপর বিধায়ক বাইরে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বললে প্রায় সোওয়া এক ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বভাবিক হয় ।
দেখুন ভিডিও :
মধুসূদন ভট্টাচার্য মেমারির বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই মেমারি ব্লকে দলীয় সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । দলীয় সুত্রে খবর, তখন থেকেই মধুসূদনবাবুর বিরুদ্ধে নিজের মনমর্জিমত কাজ করার অভিযোগ তুলছিলেন দলের একাংশ । এরপর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বন্টন নিয়ে ঝামেলার সুত্রপাত । জানা গেছে,২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মেমারির ২৪ টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৭ টির টিকিট বন্টনের দায়িত্ব পায় বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী । বাকি টিকিটে প্রার্থী নির্বাচন করেন বিধায়ক । তার মধ্যে ২ টি পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দেওয়া নির্দল প্রার্থীর কাছে পরাজিত হতে হয় মধুসূদনবাবুর প্রার্থীদের । আর তার ফলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে । তা চরম আকার ধারন করে মহেশপুরের বাসিন্দা সফিউর রহমান মল্লিক ওরফে পিন্টু মল্লিককে মেমারির অঞ্চল সভাপতি হিসাবে নির্বাচন করার পর থেকে ।
মেমারি ব্লকে তৃণমূলের প্রাক্তন যুব সভাপতি পার্থ ঘোষ বলেন, ‘যে পিন্টু মল্লিক কোনও দিনই অঞ্চলে রাজনীতি করেননি । সাধারনত মেমারি কেন্দ্রীক রাজনীতি করেন উনি । পঞ্চায়েত সমিতিতে ওনাকে আমরা প্রার্থীও করেছিলাম । কিন্তু জিতে যাওয়ার পর থেকে উনি মেমারি নিয়েই থাকেন । একদিন হঠাৎ শুনলাম পিন্টু মল্লিককে দলের অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে । এনিয়ে মাস্টার মশাই (মধুসূদন ভট্টাচার্য) আমাদের কারোর সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেননি ।’
পার্থবাবু বলেন, ‘এদিকে বিধানসভা ভোটের পর দেখছি বিধায়ক ও পিন্টু মল্লিক মিলে প্রায় দিনই বিজেপির লোকজনদের আমাদের দলে যোগদান করাচ্ছেন । যারা ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছিল তারাই আজ তৃণমূলে ঢুকে আমাদের মারতে আসছে । আর বিধায়ক ও অঞ্চল সভাপতি তাদের পুলিশি নিরাপত্তা দিচ্ছে । এমনকি তাদের বাঁচাতে দলের নেতৃত্বের ইন্ধনে আমাদের দলের এক পুরনো কর্মীকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছে ।’
পার্থবাবু বলেন, ‘আমরা মাস্টার মশাইকে প্রথম থেকে বলে আসছি সবাইকে এক সাথে নিয়ে চলুন । কিন্তু কে শোনে কার কথা । উনি হাতে গোনা ২-৫ জনকে নিয়ে ওঠাবসা করেন । যাদের কোনও সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই,যাদের মানুষ পছন্দ করেনা, তাদের কথাতেই উনি চলেন । এই সবের জন্যই এদিন বিধায়ককে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে ।’ এরপরেও যদি উনি না শোধরান তাহলে ওনাকে আরও বড় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য অব্যশ্য তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে এমনটা মানতে চান নি । তিনি জানিয়েছেন,দলীয় বৈঠক করার জন্য এদিন তিনি দলুইবাজার ২ অঞ্চলে গিয়েছিলেন । সেই খবর পেয়ে কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চায় । তিনি তাঁদের কথা শুনেছেন । বৈঠক স্থলের বাইরে কারা হইহট্টগোল করেছে তা নিয়ে তাঁর কিছু যায় আসে না ।একই সঙ্গে বিধায়ক বলেন , যাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দিতে চেয়েছিল তাঁদের বিষয়ে তিনি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানান । দলের উচ্চ নেতৃত্ব সম্মতি দেওয়ার পর দলীয় নিয়ম মেনে তিনি তাঁদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করিয়েছেন । তাঁর এই কাজের সমালোচনা এখন যাঁরা করছেন তাঁরাই দলীয় কোন নিয়ম শৃঙ্খলার পরোয়া না করে বিজেপির লোকজনে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছেন । অথচ তাঁরাই এখন এইসব ফালতু সমালোচনা করছেন ।।