সাধারণতঃ ভারতবর্ষে ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিনে অর্থাৎ একদম শেষ দিনে দেবশিল্পী শিল্পাচার্য শ্রীশ্রীবিশ্বকর্ম্মা দেবের পূজা সমস্ত কলকারখানায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। কেউ প্রতিমায় পূজা করেন তো আবার কেউ বা ঘটে এই পূজার অনুষ্ঠান করেন। এই পূজা পৌরাণিক। বেদে এই পূজার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায় না। তবে বহু পুরাণে এই পূজার বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। পুরাণসম্মত পূজায় অধিবাস একটি বিশেষ অঙ্গ। আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে (৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) দেশ জুড়ে মর্যাদার সঙ্গে দেবশিল্পীর পূজো হচ্ছে ।
বিশ্বকর্মা পূজার ধ্যানমন্ত্র:
দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।
বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।
ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।
এর অর্থ হল, হে দংশপাল ( বর্মের দ্বারা পালনকারী ) , হে মহাবীর , হে বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্ব বিধাতা, হে সুন্দর চিত্র রূপ কর্মকারক , আপনি মাল্য চন্দন ধারন করে থাকেন ।
বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্রঃ
দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক ।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদয়ক ।।
অর্থ- দেবশিল্পী , মহাভাগ ( দয়াদি অষ্ট গুন যুক্ত ) দেবতা দের কারু কার্য্যসাধক সর্বাভীষ্ট প্রদানকারী হে বিশ্বকর্মা আপনাকে নমস্কার ।
বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা । তাঁর চার বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস তাঁর পিতা। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই । বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা। তিনি বিশ্বভুবন নির্মাণ করেছেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। কারখানায় এই পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে স্বর্ণকার, কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিরাও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন।
ঋগবেদের দশম মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সূক্তদ্বয়ে বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তাঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু ও পদ সব দিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা অভিধায় ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি।।

