দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৫ অক্টোবর : মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ার পর জমিজমা, ঘটি-বাটি বিক্রি করে যুবক ছেলের চিকিৎসা করিয়েছিলেন বিধবা মা । আর চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই । এদিকে ছেলে সম্পূর্ণভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে । তার সর্বদা তিরিক্ষি মেজাজ । কাউকে দেখলেই তার উপর হামলা করছিল । সে যাতে কোনও অঘটন ঘটিয়ে না ফেলে সেই আশঙ্কায় বছর চৌত্রিশের ‘বদ্ধ উন্মাদ’ ওই যুবককে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখে দিয়েছে পরিবারের লোকজন । বিগত প্রায় ২ বছর ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার চাকটা গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আফতার হোসেন নামে ওই যুবক ।
জানা গেছে, আফতার হোসেনের বাবা এবাদত হোসেন প্রায় ৮ বছর আগে মারা গেছেন । আফতার বাবা মায়ের চতুর্থ সন্তান । তাঁর এক দাদা আহম্মদ হোসেন ভিনরাজ্যে এমব্রয়ডারি কাজ করেন । বছর তেরো আগে মাধ্যমিক পাশ করার পর তার দাদার কাছে গিয়ে কাজে লেগে পড়ে আফতার । সেখানে বেশ কয়েক মাস সে কাজ করে । তারপর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ওই যুবক । সেখানে চিকিৎসা করিয়েও জ্বর ছাড়েনি । ফলে দেখাশোনার সমস্যা হচ্ছে দেখে আফতারকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তাঁর দাদা । বাড়িতে আসার পর বিধবা মা আহম্মদা বিবি ও এক দাদার কাছে সে থাকতে শুরু করে আফতার ।
আহম্মদা বিবি বলেন, ‘ছেলে বাড়ি আসার পর চিকিৎসা করানো হয় । জ্বর ছাড়ে । কিন্তু অন্য উপসর্গ দেখা দেয় । ফিরে আসার মাস খানেক পর থেকেই ছেলে অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করে । আমার যা কিছু সম্বল ছিল ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ হয়ে যায় । জমিও বিক্রি করতে হয় । কিন্তু রোগ আর সারে না । বিগত প্রায় দু’বছর ধরে ছেলে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে । সামনে কাউকে দেখলেই তেড়ে মারতে যাচ্ছে । সে যাতে কোনও অঘটন ঘটিয়ে না ফেলে তাই একটা ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে । কি করব ? উপায় নেই । ছেলের আর চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমার ।’
জানা গেছে,আফতারদের মূল বাড়িতে ঘরের অভাব । তাই কিছুটা পাশে এক আত্মীয়ের ফাঁকা বাড়ির একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে । আহম্মদা বিবি সারাদিনে ৪ বার করে খাবার নিয়ে গিয়ে ঘরের জানালা দিয়ে ছেলেকে বাড়িয়ে দেন । পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীদের দাবি সরকারিভাবে ওই যুবকের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক ।।