এইদিন ওয়েবডেস্ক,হেইস(ইয়েমেন),১৯ অক্টোবর : দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে জেরে দেশে খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারন করেছে । ফলে অনাহারে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু ৷ আর ওই দেশটি হল ইয়েমেন ৷ ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে । এদিকে যুদ্ধ বিরতির কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না । ইয়েমেনি এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে ।
ইয়েমেনের ৩০ লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট হোদেইদা শহরে আল-থাওরা হাসপাতালে প্রতিদিন ২,৫০০ রোগী আসে । যার মধ্যে “অতি অপুষ্টিতে ভুগছে” এমন বহু শিশু রয়েছে । সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে এসেছেন জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি-জেনারেল জয়েস মসুয়া । তিনি জানিয়েছেন,ইয়েমেনে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ২২ লক্ষ শিশু ক্ষুধার্ত। পাঁচ লক্ষের বেশি মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে । চলতি বছরে ১৩ লক্ষ গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো মহিলা গুরুতর অপুষ্টির শিকার ।
জয়েস মসুয়া সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন,’এটি আমার পেশাগত জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক সফরগুলির মধ্যে একটি । অনেক চাহিদা রয়েছে ৷ ইয়েমেনি হাসপাতালগুলির অর্ধেক কাজ করছে না, অথবা তারা যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ইয়েমেনে শিশু, নারী ও পুরুষদের জীবন বাঁচাতে আমাদের আরও সহায়তা প্রয়োজন ।’
প্রসঙ্গত,রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারনে ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে । কারন ইয়েমেনের প্রধান খাদ্যশস্য হল গম । আর তার ৪০ শতাংশ সরবরাহ হয় ইউক্রেন থেকে । কিন্তু রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারনে গম সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে ইয়েমেনে গমের মূলবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশের উর্ধে হয়ে গেছে । ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইয়েমেন বিশেষজ্ঞ পিটার সালিসবারি বলেছেন,’ইয়েমেনে তিন দিক থেকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের শিকার হয়েছে । প্রথমত, ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহের ক্ষতি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতি । দ্বিতীয়ত, উচ্চ জ্বালানী মূল্য এবং তৃতীয়ত,ইয়েমেন থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সরে যাওয়া ।’
উল্লেখ্য,ইয়েমেনে শিয়া হুথি বিদ্রোহীদের এবং সুন্নি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলির একটি জোট সমর্থিত সরকারপন্থী বাহিনীর মধ্যে আট বছর ধরে যুদ্ধ চলছে । ইরান-সমর্থিত হুথিরা ২০১৪ সালে পাহাড় থেকে নেমে এসে উত্তর ইয়েমেন এবং দেশটির রাজধানী সানা দখল করে । তারপর তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে নির্বাসনে পালাতে বাধ্য করে । এই সংঘর্ষে ১,৫০,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৩০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে । জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন সরকারি খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল । কিন্তু রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধে সরকারি সহায়তা প্রায় বন্ধের মুখে । ফলে বর্তমানে ৫ লক্ষেরও বেশি ইয়েমেনি শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে । সেভ দ্য চিলড্রেন অনুসারে, প্রতি ১০ মিনিটে ইয়েমেনে একটি শিশু প্রতিরোধযোগ্য অসুস্থতায় মারা যাচ্ছে ।।