জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জুলাই : ছোট থেকেই দু’ভাইবোনের দুচোখে স্বপ্ন ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের সেবা করার। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার নিগন গ্রামের সাম্য-মৈত্রী পাড়ি দেয় সুদূর ব্যাঙ্গালোরে, নার্সিং ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। দু’জনেই ওখানকার একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে বিএসসি নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়। সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল। লক্ষ্য পূরণ হতে যখন মাত্র কয়েকটি দিন বাকি তখনই ছন্দপতন। দিদি মৈত্রী হঠাৎ এক অজানা ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আপাতত ব্যাঙ্গালোরের একটি স্পেশালিস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
ভাই সাম্যের কাছে জানা গেলো,ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে দিদি নিয়মিত বিভিন্ন হাসপাতালে ‘ডিউটি’ করে । সেই অবস্থায় সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর ও মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাত দিন পরে জানতে পারা যায় মৈত্রী কোন এক অজানা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি ধীরে ধীরে তার ব্রেনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। ব্যাঙ্গালোরের চিকিৎসকদের বক্তব্য, আইভিআইজি থেরাপির মাধ্যমে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। এই ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু দামি ওষুধ আনাতে হবে যার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার দরকার। ইতিমধ্যেই তাদের প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে গেছে। আরও দরকার। কিন্তু একটি নিম্ন মধবিত্ত পরিবারের পক্ষে এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সাম্য ও মৈত্রীর বাবা আশুতোষ ঘোষ ।
যদিও একমাত্র মেয়ের অসুস্থতার খবর পেয়েই ব্যাঙ্গালোরে ছুটে গেছেন আশুতোষবাবু । আর এদিকে মেয়ের জীবন ভিক্ষার জন্য আঁচল পেতে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মৈত্রীর অসহায় মা । বরাবরের মেধাবী ও মিষ্ট ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত মৈত্রীর খবর শুনে প্রত্যেকেই নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিচ্ছেন ।
খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী। নিজে ডেকে পাঠান মৈত্রীর মা’কে। মঙ্গলকোট তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তার হাতে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন এবং মৈত্রীদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
অপূর্ব বাবু বলেন, ‘মৈত্রী আমাদের এলাকার মেয়ে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা থেমে যাবে এটা কখনোই হতে দেব না। আমাদের আরাধ্যা দেবী মা যোগাদ্যার কাছে প্রার্থনা করি মেয়েটিকে যেন সম্পূর্ণ সুস্থ করে দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।’
বিধায়ক সাহায্যের হাত বাড়ালেও চিকিৎসার জন্য দরকার আরও প্রচুর টাকার । তাই ব্যাঙ্গালোর থেকে দিদি মৈত্রীর জন্য এলাকা তথা রাজ্যবাসীর কাছে সাহায্যের জন্য কাতর আবেদন করল ভাই সাম্য ঘোষ (মোবাইল নম্বর : 6296201572) । তাঁর আবেদন,’দিদির চিকিৎসার ব্যয়বহুল খরচ আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আপনারা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে আমি আমার দিদিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাব। পাব ভাইফোটা, হাতে পড়তে পাব রাখি। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাম্য। সবার মিলিত চেষ্টায় মৈত্রী ফিরে যেতে পারবে তার আদরের ভাই সাম্যের কাছে ।’ এদিকে গ্রামের বহু মানু্ষ চিকিৎসার সহায়তা করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানাতে শুরু করেছেন ।।