প্রদীপ চট্টোপাধ্যায,বর্ধমান,২০ জুন : রেল দপ্তরের নথিতে তিনি ২০১০ সালের ২৮ মে পশ্চিম মেদিনীপুরে হওয়া ’জ্ঞানেশ্বরী’ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত। সরকারী ক্ষতিপূরণ ,বীমা কোম্পানির টাকা ,বোনের চাকরি সবকিছু হাতিয়েও নেন তিনি । এরপর ঘটনার পেরিয়ে যায় বেশ কয়েক বছর । চার বছর আগে হাঠাৎতই সরকারী নথিতে মৃত অমৃতাভ চৌধুরী ওরফে সাহেব চৌধুরী তাঁর পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বামুনপাড়ার পৈত্রিক বাড়িতে পা রাখেন । তখন তাঁকে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন আত্মীয়স্বজনরা । কারণ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় দেহ ছিন্নবিচ্ছিণ্ন হয়ে গিয়ে অমৃতাভ মারা গিয়েছে বলেই তারা জানতেন । সেই অমৃতাভ জীবন্ত মূর্তিমান সেজে তাঁদের সামনে হঠাৎ করে এসে দাঁড়াবে এটা চৌধুরী পরিবারের কেউ কল্পনাও করতে পারেন নি । তবে শেষ রক্ষা হয় নি । বিষয়টি নিয়ে সিবিআই নড়ে চড়ে বসতেই শুক্রবার অমৃতাভর সব চালাকি ফাঁস হয়ে যায়। অমৃতাভ এখন সিবিআইয়ের জালে । নথি জাল করে ‘মৃত’ সেজে সরকারি ক্ষতিপূরণ হাতিয়ে নেওয়া অমৃতাভ চৌধুরীকে আটক করেছে সিবিআই। এই ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছে মন্তেশ্বর এলাকার বাসিন্দা মহলে ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃতাভ চৌধুরীর আসল বাড়ি মন্তেশ্বর থানার বামুনপাড়া গ্রামে।পাশাপাশি কলকাতার জোড়াবাগানেও তাঁর বাড়ি রয়েছে ।মন্তেশ্বরের কামারশাল মোড়ে তিনি এখন একটি প্রাসাদোপম বাড়ি নির্মাণের কাজও চালাচ্ছেন । এলাকাবাসীরা বলেন,সেই প্রাসাদোপম বাড়ির এক একটি ঘর মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রিও করছে অমৃতাভ চৌধুরী ও তার পরিবার । স্থানীয় বাবলু ঘোষ , সুমন দত্ত প্রমুখরা বলেন ,ব্যবসা করার জন্যে অমৃতাভর বাবা মিহির চৌধুরীর কাছ থেকে তাঁরা ওই আবাসনের ঘর মোটা টাকায় কিনেছেন ।
এলাকাবাসীর অনুমান জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে
মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে অমৃতাভ নিজেকে সাহেব চৌধুরী বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করে ।ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও অমৃতাভ চৌধুরী তার আসল নাম গোপন করে সাহেব চৌধুরী বলে উল্লেখ করেছে ।মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেকে মৃত সাজিয়ে সরকারের ঘর থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে অমৃতাভ নাম বদলে প্রোমোটারি ব্যবসায় নামে । দু- তিন বছর হল সে নবাবী চালে মন্তেশ্বরে মামা ও মাসির বাড়িটেই বেশী থাকছিল । তবে মন্তেশ্বরবাসীকে বোকা বানাতে পারলেই অমৃতাভ সিবিআইকে আর বোকা বানাতে পারেনি বলে মন্তেশ্বরের বাসিন্দারা এদিন জানান ।
মন্তেশ্বর ও আসানপুর গ্রামে থাকা অমৃতাভর
আত্মীয়রা এদিন বলেন , আসল ঘটনা কি তা অমৃতাভর বাবা মিহির চৌধুরী ও মা অর্চনাদেবী কোনও দিন প্রকাশ্যে আনতেন না । এমনকি তাঁরা যেন অমৃতাভকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেণ সেকথাও তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল । সেই কারণে আত্মীয় পরিজনরা কেউ ওদের ব্যাপারে আর বিশেষ আগ্রহ না দেখানোয় প্রকৃত ঘটনা তাঁদের জানা সম্ভব হয়নি ।
অমৃতাভর এই জালিয়াতি কাজকারবার নিয়ে
সংবাদ মাধ্যম এদিন নড়েচড়ে বসতেই বিশেষ
ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মন্তেশ্বর নিবাসী তড়িৎ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। এদিন বিকালে এক সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে অমৃতাভর নবনির্মিত আবাসনে পৌছে গিয়ে তড়িৎ ঘোষ প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ সিসিটিভি মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাজ কর্মে নজরদারি চালান । পরে আবাসন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সংবাদিকদের উপরে চড়াও হন । সাংবাদিকরা রুখে দাঁড়ালে তড়িৎ ঘোষ তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে পালিয়ে যান।এই ঘটনার পরেই মন্তেশ্বরবাসীর সন্দেহ জেগেছে জালিয়াতি করে অমৃতাভর সরকারী মোটা টাকা হাতিয়ে নেওরার ঘটনায় তড়িত ঘোষেরও যোগসাজশ থাকতে পারে ।।