এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ সেপ্টেম্বর : মাত্র ২ দিনের অনুমতি নিয়ে এক মাস ধরে কলকাতার মেয়ো রোডে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে মঞ্চ বেঁধে রেখেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । একারণে আজ সোমবার তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ খুলে দেয় সেনাবাহিনী । আর এই নিয়ে সোমবার দুপুরে সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। সেনা মঞ্চ খুলে দিচ্ছে এমন খবর পেতেই সরাসরি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেন,’প্রায় ২০০ সেনা আমাকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিল। আমি বললাম, পালাচ্ছেন কেন? আমি আপনাদের বিরুদ্ধে নই, আপনাদের জন্য গর্বিত।’ পাশাপাশি সেনার মঞ্চ খোলার ঘটনাকে তিনি রাজনৈতিক রঙ দিয়ে দাবি করেন,’এটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আর বিজেপির কাজ।’
এদিকে মমতা ব্যানার্জির এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে মেয়ো রোডে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের বাঁধা মঞ্চ থেকে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ধিক্কার জানিয়ে শ্লোগান তোলেন, “সেনার অপমান মানছি না মানব না” এবং “ছিঃ ছিঃ মমতা” ।
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার লজ্জা হওয়া উচিত । আমাদের জাতির গর্ব, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করার আপনার সাহস কি করে হয় । আমরা সবসময় জানতাম যে আপনি একজন দেশদ্রোহী, কিন্তু ময়দানে পৌঁছানোর পর ২০০ জন সাহসী সেনা সদস্য “পলাতক” হয়ে গেছে বলে দাবি করা কেবল আপনার বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা নয়, বরং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সম্মান নষ্ট করার এক জঘন্য প্রচেষ্টা, যাদের সাহস এবং ত্যাগের তুলনা হয় না। এই একই সেনাবাহিনী আমাদের সীমান্ত রক্ষা করে, সংকটে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করে। তবুও, আপনি নিজেকে “রাস্তার যোদ্ধা” হিসেবে তুলে ধরার মরিয়া প্রচেষ্টায় সস্তা রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তাদের মর্যাদাকে অপমান করতে বাধ্য হয়েছেন ।’
তিনি আরও বলেছেন,’তথ্যগুলো আপনার প্রতারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। ময়দানে টিএমসির অস্থায়ী কাঠামো, যা প্রায় এক মাস ধরে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্পষ্ট দুই দিনের অনুমতি লঙ্ঘন করেছে, যা মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত ছিল। বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরেও,আপনার দল উদ্ধতভাবে এটি অপসারণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, কলকাতা পুলিশকে অবহিত করার পরে সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করে। আর এখন,আপনার দলের অবাধ্যতার কাছে মাথা নত করার পরিবর্তে, আপনি মুখ বাঁচানোর জন্য মিথ্যা গল্প বলছেন । এটা নির্লজ্জতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্ষমতার প্রতি আপনাত লোভ আপনাকে অন্ধ করে দিয়েছে এবং আমাদের জওয়ানদের অসম্মান করার পর্যায়ে চলে গেছে । আপনি শুধু সেনাবাহিনীকেই নয়, বরং তাদের শ্রদ্ধাশীল প্রতিটি ভারতীয়কে অপমান করেছেন । আপনার অপমানজনক কথা তাদের বীরত্বকে অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা। যদি আপমার মর্যাদার কোন ছিন্নমূল অংশ থাকে তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন ।’
অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে ধিক্কার জানিয়ে সেনাকে কাজে লাগিয়ে কথিত ভাষা আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করার দাবি করেছেন। তিনি এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’জয় বাংলা! বিজেপি-কে ধিক্কার! আমরা ভারতীয় সেনাকে হৃদয় থেকে সম্মান করি। কিন্তু বিজেপি অধীনস্থ কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের অপব্যবহার ক’রে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক শক্তি-প্রদর্শনের কৌশলে ‘ভাষা আন্দোলন’-কে দমন করার উদ্দেশ্যে মেয়ো রোডের ধরনা মঞ্চ খুলেছে। এমনকি ভারতবর্ষের মানচিত্রটিকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। আমি বাংলা-বিরোধী, সমাজ-বিরোধী, গণতন্ত্র-বিরোধী বিজেপির প্রতি ধিক্কার জানাই।
বিজেপি সর্বশক্তি প্রয়োগ করলেও বাংলার কণ্ঠস্বরকে চুপ করাতে পারবে না। বাংলা কখনও স্বৈরতন্ত্রের কাছে মাথা নত করেনি— আগামী দিনেও করবে না। দেশ জুড়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন চলছে— তা অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক।
তিনি আরও লিখেছেন,’আজ ভারতীয় সেনাকে অপব্যবহার ক’রে বিজেপি যেভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করল, তা যেমন অগণতান্ত্রিক তেমনই ঘৃণ্য। তার প্রতিবাদে আগামীকাল রাজ্য জুড়ে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর ডাক দিলাম। আগামী দিনে ডোরিনা ক্রসিংয়ে ‘ধরনা মঞ্চ’ করা হবে। বাংলার জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা ‘ভাষা আন্দোলন’ চালিয়ে যাব। আমরা যেমন মাতৃভাষা-সহ অন্যান্য ভাষাকে সম্মান, শ্রদ্ধা করি। তেমনই স্বৈরাচারী বিজেপির বিরুদ্ধে— বাংলার মর্যাদা রক্ষায়, বাংলার ভাষা রক্ষায় এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় আমাদের লড়াই আরও দৃঢ় হবে। আমার বিশ্বাস বাংলা-বিরোধী, ভাষা-বিদ্বেষী, গণতন্ত্র-বিরোধী বিজেপিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে যোগ্য জবাব দেবে বাংলা।’।