এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ ডিসেম্বর : আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসিকে কলকাতায় আনার তৃণমূলের উদ্দেশ্য ফাঁস করে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা হারানো মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মেসির মুখ দিয়ে “খেলা হবে” বলিয়ে বিধানসভার ভোটে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন,কিন্তু উলটো খেলা হয়ে গেছে । যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গতকাল মেসিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার বিশ্লেষণ করতে আজ রবিবার বিকেলে সল্টলেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী । তার সাথে ছিলেন ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ক্রীড়া সম্পাদক কল্যাণ চৌবে এবং গতকাল টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে গিয়ে পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত সঞ্জয় হালদার নামে এক আহত যুবক । মেসির মত একজন আন্তর্জাতিক মানের কোনো খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে আয়োজিত ইভেন্টে কি কি পরিকাঠামো থাকা দরকার,মূলত সেটাই ব্যাখ্যা করেন কল্যাণ চৌবে । সঞ্জয় হালদার বর্ননা করেন গতকালের তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
তার আগে মেসির অনুষ্ঠানে কিভাবে মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়া মন্ত্রীসহ বাকি নেতা-মন্ত্রীদের পরিবাররা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজ করেছিল এবং তৃণমূল কিভাবে ব্যাবসার জাল বিছিয়েছিল, তার ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু অধিকারী । প্রথমেই “মেসি কান্ডে” একমাত্র ধৃত শতদ্রু দত্তকে কিভাবে “বলির পাঁঠা” করা হয়েছে এবং তাকে বাঁচাতে পুলিশ কিভাবে এফ আই আর-এ কারচুপি করে রেখেছে, তার ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’এইমাত্র খবর পাওয়া গেল শতদ্রুকে পুলিশ হেফাজতে না চেয়ে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে । তার মানে ইনভেস্টিগেশন কমপ্লিটেড। তিনিও শেখ শাহজাহান, অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চ্যাটার্জির মতো একটা প্রেসিডেন্সি কেবিনে থাকবে। এবং সেখানে ভালো-মন্দ রসমালাই খাবেন । ফোন ব্যবহার করবেন। পুলিশ এফআইআর-এ কিভাবে ফাঁক রেখে গেছে সেই বিষয়টা আমি দেখাবো।’
এরপর তিনি এফ আই আর-এর কপি দেখিয়ে বলেন, ‘এই এফআইআর’টা রাজিব কুমার, মমতা ব্যানার্জিরা শেষ করে দিয়েছে । যেভাবে তিনি সারদার ডিভাইস শেষ করে মমতাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, জেলের বাইরে রেখেছেন ।’ তিনি বলেন,’বিধান নগর সাউথ পি এস, কেস নম্বর ০২১৬, তারিখ ১৩/১২/২০২৫ । এফ আই আর দায়ের করার সময় সন্ধ্যা ৬:৩৫ । নেচার ওফ এফ আই আর সুয়োমোটো। অভিযোগ করেছেন বিধান নগর দক্ষিণ থানার আইসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য । ঘটনা ঘটেছে ১২:৩০ থেকে বিকেল ৪ টার মধ্যে । ১২:৩০ থেকে মানে যখন ঘটনা বন্ধ হয়ে গেছে কার্যত ।’
তিনি বলেন,’এফ আই আর এর প্রথম ত্রুটি ১২:৩০ থেকে ৪ টে । শতদ্রু একমাত্র অভিযুক্ত । কিছু বুঝলেন ? এন্ট্রি নম্বর বারোর দায়িত্বে ছিলেন যিনি, তিনিই এফআইআর করছেন । তাই এই কেস টিকবে না । এফআইআর করা হয়েছে মন্ত্রীদের বাঁচানোর জন্য । মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার এবং অন্যান্য তৃণমূল নেতাদের বাঁচানোর জন্য । একটা ন্যারেটিভ করা হয়েছে এন্ট্রি নম্বর ১২ তে, যে অর্গানাইজার এবং সিআরপিএফ সিকিউরিটি । সিআরপিএফকে এফ আই আর-এ দায়ি করা হয়েছে,তারা নাকি বাধা দিয়েছে । আরো একটা মারাত্মক ত্রুটি আছে । এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামীম, তিনি প্রেস কনফারেন্স করে বলছেন যে শতদ্রু গ্রেপ্তার হয়েছে । কখন জানাচ্ছেন ? ২ টো ৪৯ পিএম । এফআইআর রেজিস্টার কখন হচ্ছে ? ৬ টা ৩৫ পিএম । বুঝলেন তো ? পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ও সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়াকে মমতা ব্যানার্জির টুপি কেমন পড়ালেন ? তাই আমরা মনে করি পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার নিয়ে নেওয়া উচিত এবং অবিলম্বে টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করা উচিত ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’যেমন সারদার টাকা খেয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি, কিন্তু সুদীপ্ত সেনের ওপর দিয়ে গেছে । সব জায়গায় এরকম হয় । সন্দীপ ঘোষ, বিনীত গোয়েলরা অভয়ার ঘটনার মূল অভিযুক্ত । সঞ্জয়ের ওপর দিয়ে গেছে । এখানেও instrument হচ্ছে শতদ্রু । একটা ব্রোকার । তাকেও আশ্বস্ত করা হয়েছে যে চাপে করতে হয়েছে ভীষণ উত্তেজনা । আমরা ড্যামেজড । ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে গাড়ি ঘুরিয়ে পালাতে হয়েছে । গাড়ি ঘুরিয়ে পালাতে হয়েছে রাজ্যের মহারানীকে । যিনি এই রাজ্যের সংবিধান, যিনি এই রাজ্যের সব, দন্ডমুণ্ডের কর্তা, বিচার ব্যবস্থাও তিনি চালান, সব কিছুর মালিক তিনি, তাকেও গাড়ি ঘুরিয়ে পালাতে হয়েছে ।’
মেসির মুখ দিয়ে “খেলা হবে” বলাতে চেয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি
তিনি বলেন,’এটা প্রতারণা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল । বিশেষ করে ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মেসির মুখ দিয়ে “খেলা হবে” বলিয়ে নিতে চেয়েছিলেন । অর্থাৎ কার্বাইড দিয়ে যেমন ফল পাকানো হয়, তেমনি মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষয়িষ্ণু জনপ্রিয়তা, তৃণমূল মানেই চোর, ফুটো জাহাজ জল ডুকছে, এপ্রিল মাসের সখাত সলিল তলে যাবে, তার আগে তিনি কার্বাইড দিয়ে কাঁঠাল এবং আম পাকানোর মতো মেসিকে দিয়ে খেলা হবে করতে গিয়েছিলেন কিন্তু উল্টো খেলা হয়ে গেছে৷ তাই গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে ১৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার মার ছুট, গাড়ি ঘোরানোর ভিডিও আমার কাছে আছে৷ যেভাবে গাড়ি ঘুরিয়েছেন তাতে এক্সিডেন্ট হয়ে যেত । ছুটে পালিয়ে গেছেন । তবে কালীঘাটে গেছেন না নবান্নয় গেছেন কে জানে ।’
তিনি বলেন,’এরা মেসিকে মনে করেছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং রাজ্যের সম্পত্তি । ভোটের কয়েক মাস আগে মেসিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল শাসক দল । তার পরিণতিতে আমাদের সবাইকে লজ্জিত করেছে । সেইটার সাথে হাজার হাজার তরুণ প্রজন্ম টিকিট কেটে গেলেন এবং আশাহত হলেন।’
মেসিকে সামনে রেখে তৃণমূলের “বানিজ্যের জাল”
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’এটা শুধু মুখ্যমন্ত্রী বা ক্রিয়া মন্ত্রীর পরিবারের সেলফি তোলার বিষয় নয়, এর পিছনে বিরাট বাণিজ্য জড়িত ছিল । এই টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে ।পুলিশ বা আয়োজক এর পক্ষ থেকে জলের বোতল আনা হবে না বলে নিয়ম করেছিল । তাহলে দশ টাকার চিপস ১০০ টাকায়, কুড়ি টাকার চাওমিন দেড়শ টাকায়, কুড়ি টাকার জলের বোতলকে ২০০ টাকায় কারা বিক্রি করল? এদেরকে কি অরূপ-স্বরূপ আমদানি করলো ?
তিনি বলেন,’কুড়ি টাকার জলের বোতলের যদি ২০০ টাকা হয় তাহলে মোট কত টাকা হয় ? ১০ টাকার চিপস যদি ১০০ টাকা হয়,২০ টাকার চাওমিন যদি দেড়শ টাকা হয়, ২৫ টাকার কাটা ফল যদি আড়াইশো টাকা হয়, তাহলে লক্ষ্য করে দেখুন এখানে কত লক্ষ লক্ষ বা কোটি টাকার উপরে বাণিজ্য করা হয়েছে । এরা কারা ? তাই মমতা ব্যানার্জি তৈরি করে দেওয়া তার পাড়ার লোকে দিয়ে যে কমিটি তিনি বানিয়েছেন তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মানে না, আমরা মানি না । যে যুব সমাজ কালকে প্রতারিত হয়েছে তারা মানে না । আমরা নিরপেক্ষ ও বর্তমান কোন বিচারপতিকে দিয়ে আদালতের নজরদারিতে তদন্তের দাবী করছি ।’
এরপর কুড়ি টাকার জলের বোতল ২০০ টাকায় বিক্রি করা হকারের ভিডিও স্ক্রিনে চালানো হয় ৷ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এ নিশ্চয়ই তৃণমূলের লোক । ভোট লুট করে । তিনি বলেন, এরও তদন্ত হওয়া দরকার । এই লোকটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিত যে তোমায় কে পাঠিয়েছে ?’
মেসির অনুষ্ঠানের কয়েকটি স্পন্সরের নামও প্রকাশ্যে এনেছেন বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেন, ‘তৃণমূল ঘনিষ্ঠ স্পন্সরেরা টাকা দিয়েছে৷ শালবনি জেএসডব্লু, মেনস সুপার ডায়মন্ডের স্পন্সরার সঙ্গে আর একটা প্রাইভেট ব্যাংক রয়েছে৷ ডায়মন্ড স্পন্সরার,ডালমিয়া সিমেন্ট, এল এন্ড টি,আরপি গোয়েঙ্কা গ্রুপ, সুপার প্লাটিনাম,পিল্লাই ইউনিভার্সিটি, হীরা নন্দানি,প্লাটিনাম, বিগ বাজার, সেনকো,সনকা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, যে শাসক দলের খুব ঘনিষ্ঠ । আরো আছে।’
“মেসি কান্ডে” মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়া মন্ত্রী,দমকল মন্ত্রীর যোগসূত্র পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনেন শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি দেখানো হয় পুলিশের লাঠিচার্জের ভিডিও । তিনি বলেন,’কালকের ঘটনো ঘটনায় আমদের প্রত্যেককে অপমানিত করেছে ও লজ্জিত করেছে । আমরা এই ইস্যু ছাড়বো না । যুব মোর্চা আজকেও রাস্তায় থাকবে আগামীকালও প্রটেস্ট হবে ।’।

