এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,০৯ ডিসেম্বর : দলীয় বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের “বাবরি মসজিদ”-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন পর্বে কার্যত অন্তরালে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ফের প্রকাশ্য মঞ্চে স্বমহিমায় দেখা গেলো । মানরেগা, আবাস যোজনার প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে কথিত কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি । আজ মঙ্গলবার কোচবিহারের সভায় মমতা অভিযোগ করেছেন যে টাকা দিতে শর্ত চাপাচ্ছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের লেবার বাজেটের শর্ত তিনি কোনওভাবেই মানছেন না। পাশাপাশি একশ দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রের পাঠানো নির্দেশের কপি প্রকাশ্য মঞ্চে ছিঁড়ে ফেলেন তিনি । সেই ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, মানরেগার তহবিলের অর্থ আপনার সরকার ও দল যে চুরি করেছে সেটা প্রমাণিত, এবং এই টাকার হিসেব আপনাকে দিতেই হবে, তাই যতোই নাটক আপনি মঞ্চস্থ করুন না কেনো ।
মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্র সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন এসআইআর হচ্ছে। এখন আপনি ডিসেম্বর মাসে যদি কিছু দেনও তাহলে মার্চ মাসে বাজেট শেষ। অর্থবর্ষ শেষ।তখন বলবেন করতে পারল না। কারণ আপনি তো করতে দেননি। দু’মাসে টেন্ডার করে সবকিছু হয় না। একশোদিনের কাজ কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। ৭টা জেলার জন্য ভোট নেয় ওরা কিন্তু কাজটা করি আমরা। আমরা প্রায় অনেকগুলো চা বাগান খুলে দিয়েছি। কিন্তু হিংসার তো কোনও ওষুধ হয় না, একশোদিনের কাজ ৪ বছর বন্ধ করে দিয়েছে, আবাস যোজনা বন্ধ করে দিয়েছে, গ্রামীণ রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’
বেশ কিছু প্রকল্পের উল্লেখ করে বাংলা ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন মমতা । তিনি কার্যত হুঙ্কারের সুরে বলেন,’বাংলা কোনওদিন মাথানত করেননি এবং করবেও না। বাংলা মাথা উঁচু করে চলতে জানে।’ এরপরই কেন্দ্রের অর্ডার নিয়ে বলতে গিয়ে তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,’হঠাৎ করে একটা চিঠি দিয়েছে আমাদের। তাতে বলছে কোয়ার্টারলি লেবার বাজেট দেখাতে হবে। বলছে ট্রেনিং দিতে হবে, তারপর কাজ দিতে হবে। কিন্তু কবে ট্রেনিং দেবেন? কবে কাজ দেবেন?আমি বলছি এই কাগজের কোনও মূল্য নেই। একশোদিনের কাজ বাংলাই করবে। তোমাদের ভিক্ষা আমরা চাই না।’ আর কথা বলতে বলতেই সকলের সামনেই কেন্দ্রের অর্ডারের কপি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন তিনি ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’আঙুর ফল টক !!!মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই তাঁর জনসভাগুলিতে বলে থাকেন যে কেন্দ্রীয় সরাকারের সাহায্যের ওনার প্রয়োজন নেই, তিনি রাজ্যের টাকা দিয়েই সব কাজ করে দেবেন অথচ সেই কেন্দ্রের কাছেই তাঁকে প্রতিনিয়ত হাত পাততে হয়, অনুনয় বিনয় করতে হয়।মহত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন (MGNREGA) তহবিলে আজ অবধি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি জির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশী এই রাজ্য সরকারকে প্রদান করেছেন, যার সম্পূর্ণ হিসেব রাজ্য সরকার এখনো কেন্দ্রকে দিতে পারে নি।
তিনি লিখেছেন,আগেই আধারের সাথে জবকার্ডের সংযুক্তিকরণ করার সময়ে প্রায় ১ কোটি ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডারের নাম বাতিল হয়, এবং রাজ্যে জবকার্ড হোল্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৬ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫ শত ৩ টি (৫ ডিসেম্বর ২০২৫ এর তথ্য অনুযায়ী)।বর্তমানে ভারত সরকারের নির্দেশে এই সকল জবকার্ড হোল্ডারদের প্রত্যেককে KYC প্রমাণীকরণ করাতে হচ্ছে, এবং সেটা করতে গিয়েই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬ শত ৯৫ জনের KYC প্রমাণীকরণ সম্পন্ন হয়েছে যা গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বনিম্ন, ৬২.৯ শতাংশ। রাজ্যের জেলা ধরে ধরে বিশাল সংখ্যক জব কার্ড যে ভুয়ো তা সরকারি নথিতেই প্রমাণিত। অর্থাৎ হাজার হাজার কোটি টাকা এই ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডাররা তুলে নিয়েছেন আগেই, এমন কি অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের অ্যাকাউন্টেও এই টাকা ঢুকেছে, এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বদান্যতায়।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি লিখেছেন,সুতরাং মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় দাঁড়িয়ে আপনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যতোই অসহযোগীতার ও বঞ্চনার অভিযোগ তুলুন, অথবা কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাকে অমান্য করে সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলে আপনি আপনার বশংবদদের বাহবা বা হাততালি কুড়োতেই পারেন, কিন্তু আসল কথা হল MGNREGA তহবিলের অর্থ আপনার সরকার ও দল যে চুরি করেছে সেটা প্রমাণিত, এবং এই টাকার হিসেব আপনাকে দিতেই হবে। তাই যতোই নাটক আপনি মঞ্চস্থ করুন না কেনো, জনগণ জেনে গেছে যে আপনার জ্বালার কারণ আসলে – আঙুর ফল টক !!!

