এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ সেপ্টেম্বর : বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য নাকি অত্যাচার হচ্ছে ! এই অভিযোগ তুলে বাংলা অস্মিতা” রক্ষার কথিত আন্দোলন শুরু করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । বীরভূমের বোলপুরে পদযাত্রার মাধ্যমে সেই আন্দোলন শুচনাও করে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । এদিকে তৃণমূলের ছায়া গোষ্ঠী “বাংলা পক্ষ” সমানে এরাজ্যের হিন্দি ভাষীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছে । তারা কলকাতার রাজপথে রীতিমতো ব্যানার টাঙিয়ে বাঙালি দোকানদারদের দোকানে দুর্গাপুজোর কেনাকাটার জন্য আহ্বান জানিয়েছে । এই পরিস্থিতির মাঝে আজ রবিবার “হিন্দি দিবস”-এর দিন মমতা ব্যানার্জির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে কটাক্ষ করছে বিজেপি । বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এই ‘শুভেচ্ছা’কে মমতা ব্যানার্জির দ্বিচারিতা হিসাবে দেখছেন । তিনি মমতা ব্যানার্জিকে এই প্রকার “নোংরা দ্বিচারিতার রাজনীতি বন্ধ” করারও বার্তা দিয়েছেন ।
“বাংলা অস্মিতা” রক্ষার নামে তৃণমূল নেত্রীদের প্লাকার্ড হাতে প্রদর্শনের ছবির সাথে মমতার শুভেচ্ছা বার্তার স্ক্রীন শর্টের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন অগ্নিমিত্রা । যেখানে মমতা ব্যানার্জি হিন্দিতে লেখা হিন্দি দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় লিখেছেন,”আজ হিন্দি দিবস হ্যায় । ইস অবসর পর সভি হিন্দি ভাষী ভাই-বহেনো কো মেরি হার্দিক শুভ কামনাএঁ । প্রত্যেক বর্ষ হম শ্রদ্ধাকে সাথ হিন্দি দিবস মনাতে হ্যায় । হম সভি ভাষাওকে প্রতি শ্রদ্ধাবান হ্যায় । ইস সন্দর্ভ মে ম্যায় কহুঁ তো বর্ষ ২০১১ কে বাদ সে রাজ্য মে হিন্দি ভাষী লোগো কি বিকাশ কে লিয়ে হমনে কই অহম কদম উঠায়ে হ্যায় ।’
তিনি হিন্দিতে আরও লিখেছেন,’যেসব অঞ্চলে ১০ শতাংশেরও বেশি মানুষ হিন্দিতে কথা বলে, সেখানে হিন্দিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমরা সাঁওতালি, কুরুখ, কুদমালি, নেপালি, উর্দু, রাজবংশী, কামতাপুরী, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, তেলেগু ভাষাকেও সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। সাদ্রি ভাষার উন্নয়নের জন্যও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’
মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন,’হিন্দি ভাষার উন্নয়নের জন্য হিন্দি একাডেমী গঠন করা হয়েছে।শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে, হাওড়ায় হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বানারহাট এবং নকশালবাড়িতে হিন্দি মাধ্যমের ডিগ্রি কলেজ খোলা হয়েছে। এছাড়াও, অনেক কলেজে হিন্দি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র এখন হিন্দিতেও পাওয়া যাচ্ছে। রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হিন্দি ভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত হিন্দিভাষী এবং অন্যান্যদের জন্য বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলাকে সামনে রেখে, সেই এলাকায় চমৎকার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। হিন্দিভাষী সম্প্রদায়ের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, রাজ্য সরকার ছট পূজা উপলক্ষে দুই দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। হিন্দি দিবসে আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।’
প্রতিক্রিয়ায় অগ্নিমিত্রা পাল লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের রাজনীতিতে বাংলার মানুষকে প্রতারণা করছেন। কখনো তিনি “বাংলা অস্মিতা”র নাটক করে বাঙালির আবেগ উসকে দেন, আবার ভোটের সময় হিন্দিভাষীদের তুষ্ট করতে হিন্দি দিবসের শুভেচ্ছা জানান। এটা কি দ্বিচারিতা নয়?
তিনি ” বাংলা পক্ষ” নামে ওই বিতর্কিত গোষ্ঠীর নাম না নিয়ে লিখেছেন,’ভোটের মঞ্চে তিনি হিন্দিতে বক্তৃতা দেন, হিন্দিভাষীদের দরজায় গিয়ে ভোট ভিক্ষে চান এতে তার লজ্জা হয় না। অথচ ক্ষমতার মোহে তাঁর দল ও স্তাবক সংগঠনগুলো হিন্দিভাষী মানুষকে বারবার অপমান করেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাধারণ হিন্দিভাষীদের হেনস্থা ও অত্যাচার করা হয়েছে, এমনকি সেই স্তাবক সংগঠনগুলো হিন্দি ভাষা ও হিন্দিভাষীদের “গুটখা খোর” বলে প্রকাশ্যে বিদ্রূপ করেছে। হকার উচ্ছেদের নামে এদের উপর জুলুম চালানো হয়, বিভিন্ন সংগঠনকে সামনে রেখে এদের অপমান করা হয়। প্রাদেশিক রাজনীতি করতে বাংলা ও বাঙালি ইস্যু সামনে আনা হয়।’
সবশেষে বিজেপি বিধায়ক লিখেছেন,’ভোটের খাতিরে একদিকে বাঙালি ও হিন্দির বিভাজন তৈরি করা, অন্যদিকে হিন্দিভাষীদের কাছে ভান করে শুভেচ্ছা জানানো এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের আসল রাজনীতি। বাংলার মানুষ আজ বুঝে গেছে, “ভোট” আপনার কাছে সবচেয়ে বড় বালাই, আর সেই জন্যই বাংলাকে আপনি কলঙ্কিত করছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, এই নোংরা দ্বিচারিতার রাজনীতি বন্ধ করুন। বাংলার মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।’।