এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ আগস্ট : দূর্গাপূজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, ‘পূজোর ক’টা দিন যুবক যুবতীদের মদ খাইয়ে এর থেকে অনেক বেশি টাকা তুলে নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।’ মঙ্গলবার বিকেলে বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শুভেন্দু । সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী বলেই কাল ২৫০ কোটি টাকা দান খয়রাত করেছেন । যদি এর থেকে অনেক বেশি টাকা পূজোর ক’টা দিন যুবক যুবতীদের একাংশকে মদ খাইয়ে ওই টাকা তুলে নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।’ তিনি বলেন,’কিন্তু আমি এই পূজোর খয়রাতি নিয়ে মন্তব্য না করে বলবো, যখন আপনার আর্থিক অবস্থা যখন শক্তিশালী তখন কয়েক লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে ২০ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করুন । হাইকোর্টের রায় মেনে বকেয়া সমস্ত ডিএ আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো ৷ দ্বিতীয়ত,পঞ্চায়েত স্তর থেকে হাজার হাজার ঠিকাদারের বকেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো । এদিকে আপনার দেওয়া শিক্ষকরত্ন পুরষ্কার প্রাপ্ত বর্ধমানের এক কৃতী শিক্ষক পেনশন না পেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন । তাই তৃতীয় অনুরোধ করবো রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা বা সরকারী কর্মচারীদের অবসরকালীন যে সমস্ত টাকা আপনি আটকে রেখেছেন সেই টাকাগুলো দয়া করে দিয়ে দিন । তবেই আপনার পূজোর অনুদান দেওয়ার পূণ্যতা পাবে ।’
গরু পাচার প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘বর্ডার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে গরু পাচারের বড় চক্র অনেক দিন ধরে চলেছে । এই চক্র মূলত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে সক্রিয় ছিল । গরু পাচারে তৃণমূলের ‘এগিয়ে বাংলা’ শ্লোগানের যথার্থতা পালন করছিল । কিন্তু অমিত শাহ ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সমস্যা হয়ে গেছে । তখন থেকে বিএসএফের লোকদের ম্যানেজ করে রাজ্য পুলিশের এই কারবার বন্ধ হয়ে গেছে । এখনও ৭২ টি জায়গায় বিএসএফ কে চৌকি করার জন্য জায়গা দেয়নি রাজ্য সরকার । আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ সিংকে অনুরোধ করেছিলাম সরাসরি জায়গা কিনে ওই সমস্ত জায়গায় চৌকি বানানোর জন্য ।’
এরপর শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এখন যেহেতু সীমান্তে সুবিধা হচ্ছে না তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ,এদের তো বিরাট বড়বড় পেট,এদের অসম্ভব খিদে । এরা এক একটা করে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে । এখন পুলিশ নতুন পদ্ধতিতে গরু পাচার করছে । এই গরু পাচারের টাকা ৭৫/২৫ ভাগে ভাগ হয় । ৭৫ ভাগ সরাসরি যায় ভাইপোর কাছে,আর ২৫ ভাগ যায় পুলিশের কাছে ।’
তিনি বলেন,’একজন দুর্বৃত্তকে বীরভূমের সর্বেসর্বা বানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রতি বছর বীরভূম জেলায় প্রশাসনিক সভাতে ডান দিকে মুখ্যসচিব বাম দিকে ডিজিপিকে বসিয়ে নির্দেশ দিতেন কেষ্টর কথায় তোমাদের চলতে হবে । আর ওই মিটিংয়ে কেষ্ট মণ্ডল কোনো প্রস্তাব রাখলে তা লুফে নিতেন মুখ্যমন্ত্রী । বর্তমানে সংবাদ মাধ্যম অনুব্রত, ওর ভাই,ভাগনা মেয়েকে নিয়েই পড়ে আছে । তবে এরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয় । কিন্তু ক্রিয়েটারকে কেউ ধরছেন না । আর ক্রিয়েটার বা সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । অনুব্রত যে টাকা তুলেছে তার একটা বড় অংশ মুড়ির টিনে করে কলকাতায় পৌঁছে দিয়েছে । ৭৫/২৫ এর যে অনুপাতের কথা দোলা সেন যে এক সময় মুখ ফসকে বলেছিলেন সেই অনুপাতেই রাজ্য চলছে ।’
বীরভূমের বগটুই গনহত্যা প্রসঙ্গে এদিন চাঞ্চল্যকর দাবি করেন শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর কথায়, ‘বগটুই কান্ডের তদন্ত প্রক্রিয়া ভালো এগুচ্ছে । আমি আশা করবো মূল চক্রান্তকারীরাও ধরা পড়বে । কারন বীরভূম জেলার এসপি নগেন ত্রিপাঠী ওইদিন পুলিশকে আটকে রেখেছিলেন । তিনি অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী । আর নগেন ত্রিপাঠীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল । তিনিও এক ঘটনার অন্যতমমূল চক্রান্তকারী । আর সেদিন অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তারক্ষী সায়গল হোসেনের ফোন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই পুলিশ ওখানে যায়নি । যার ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ মহিলা ও শিশুদের পুড়িয়ে মারতে সুবিধা হয়েছিল । এখন মূল অভিযুক্তরা ধরা পড়ছে । আশা করি চক্রান্তকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,অনুব্রত মণ্ডল,বীরভূমের এসপি আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই চিহ্নিত হবেন ।’
রাজ্যের বিরোধী দলের ১৭ জন নেতানেত্রীর আয় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপোর ১০ বছরের ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল দেখাতে পারবে? আমি দেখিয়ে দিতে পারবো । আমি এনিয়ে উদ্বিগ্ন নই । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপো পারবেন ? ওনাদের সোর্স অফ ইনকাম কি? ৩৬০ টাকা লিটারের জল খান । চায়ের দোকানদারকে তুলে দিয়ে ১০০ কোটি টাকার প্রাসাদ করেছেন। পিসি ভাইপোর জন্য সর্বদা দুটো চ্যাটার্ড ফ্লাইট দাঁড়িয়ে থাকে । আপনি পারবেন ১০ বছরের আইটি রিটার্ন দেখাতে ?’ তাঁর কথায়, ‘কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়ছেন ।’।