এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ এপ্রিল : গরু-বালি – কয়লা পাচার,নিয়োগ দুর্নীতির পর এবারে নতুন বিতর্কে জড়াল মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস । পুরীর জগন্নাথ ধাম থেকে পবিত্র নিম কাঠ “চুরি” করে দিঘার জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টারে মুর্তি নির্মাণের অভিযোগ উঠল এবার । যা ঘিরে তোলপাড় চলছে রাজ্য রাজনীতি । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়েরের জন্য ওড়িশা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন । তিনি এও দাবি করেছেন যে পবিত্র নিম কাঠ চুরির অভিযোগে মুখ্য অভিযুক্ত রাজেশ দ্বৈতাপতির পাশাপাশি এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও গ্রেপ্তার হবেন ।
শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘উড়িষ্যা সরকারকে ধন্যবাদ জানাবো তারা এনকোয়ারি কমিশন বসিয়েছে । তাদের ক্রিমিনাল কেস করা উচিত । যে নিম কাঠ তৃণমূল চুরি করিয়েছে রাজেশ দ্বৈতাপতিকে দিয়ে, আমার মনে হয় তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অ্যাকশন নেওয়া উচিত । আর উড়িষ্যা পুলিশ যদি তাকে হেফাজতে নেয় তাহলে মমতা ব্যানার্জিও গ্রেপ্তার হবে । কারণ ওকে নিম কাঠ চুরি করাতে মমতা ব্যানার্জিই বলেছিল । চোর মমতা শ্রী জগন্নাথ দেবের নামে নিম কাঠটাও চুরি করালো উড়িষ্যা থেকে, এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই । এটা বাংলা এবং বাঙালি হিন্দুদের লজ্জা ।’
এনিয়ে আজ রবিবার ওড়িশা সরকারের আইন, পূর্ত ও আবগারি মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনকে চিঠিও লিখেছেন বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা । সেই চিঠির প্রতিলিপি এক্স-এ শেয়ার করে তিনি লিখেছেন,’পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের অসম্মানজনক আচরণের সাথে সম্পর্কিত বিতর্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য ওড়িশা সরকারের মাননীয় আইন, পূর্ত ও আবগারি মন্ত্রী শ্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাকে আমি স্বাগত জানাই। সেবাকারীদের সন্দেহজনক সম্পৃক্ততা এবং অতিরিক্ত পবিত্র কাঠের (নবকলেবর আচার- অনুষ্ঠান থেকে পবিত্র নিম কাঠ) অননুমোদিত ব্যবহার জগন্নাথ সংস্কৃতি এবং শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের নীতি ও নৈতিকতার সরাসরি অবমাননা।’
তিনি লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে একেবারেই নীচে নেমে গেছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দীঘা প্রকল্পকে “জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র” হিসেবে চিহ্নিত করছে, কিন্তু ভক্তদের বিভ্রান্ত করতে এবং তাদের বিশ্বাসকে কাজে লাগানোর জন্য এটিকে “জগন্নাথ মন্দির” হিসেবে প্রচার করছে। নবনির্মিত স্থানটিকে “ধাম” নামকরণের বিতর্কের বিষয়ে অবশ্যই সমাধান করতে হবে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বিচারিতা প্রকাশ করতে হবে। “ধাম”গুলির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অপরিসীম, নির্দিষ্ট দেবতা, ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে গভীরভাবে জড়িত।’
“ধাম”-এর অর্থ ব্যাখা করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘হিন্দুধর্মে “ধাম” ধারণাটি একটি পবিত্র তীর্থস্থানকে বোঝায়। ঐতিহ্যগতভাবে এবং ঐতিহাসিকভাবে চারটি ধাম হল বদ্রীনাথ, দ্বারকা, পুরী এবং রামেশ্বরম। ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দির এমনই একটি ধাম, যা অনন্যভাবে ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার আবাসস্থল হিসেবে সম্মানিত, যেখানে রথযাত্রার মতো শতাব্দী প্রাচীন রীতিনীতি পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় অবস্থিত জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে “ধাম” বলা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কারণ এটিকে পুরীর জগন্নাথ ধামকে একই আধ্যাত্মিক বা ঐতিহ্যবাহী সত্যতা ছাড়াই প্রতিলিপি বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে। পুরীর মন্দিরের অনন্য আচার-অনুষ্ঠান, সেবামূলক ঐতিহ্য (যেমন দৈতপতি) এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য কেবল একটি নতুন কাঠামো তৈরি করে এবং এটিকে “ধাম” হিসাবে চিহ্নিত করে প্রতিলিপি করা যাবে না। এর ফলে বিশ্বজুড়ে ভক্তদের আপত্তি উঠেছে, যারা এটিকে আমাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের অবনতি হিসাবে দেখেন। ভারত এবং বিশ্বজুড়ে ভগবান জগন্নাথ মন্দির রয়েছে, যেমন হায়দ্রাবাদ, আহমেদাবাদ, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জায়গায়, কিন্তু তাদের “জগন্নাথ ধাম” বলা হয় না যা পুরীর সমতুল্য বলে মনে করে।’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’পুরীর তাৎপর্যকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বা প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে পুরীর জগন্নাথ শ্রী মন্দিরের অনুকরণ করা এবং এটিকে “জগন্নাথ ধাম” হিসাবে প্রচার করা অত্যন্ত অনুপযুক্ত। দৈতপতি নিজগের সম্পাদক রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র এবং রাধারমণ দাস ওরফে রাহুল যাদবের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার কারণ তাদের কর্মকাণ্ড জগন্নাথ সংস্কৃতির প্রতি স্পষ্ট অবমাননা করেছে এবং তাদের জড়িত থাকার ফলে অবহেলা দেখা দিয়েছে, তারা যে অবস্থান এবং সম্মানিত প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের সম্পর্ককে অপব্যবহার করে ভক্তদের আস্থা নষ্ট করেছে।’
প্রসঙ্গত, দিঘায় নির্মিত ভাস্কর্যকে “জগন্নাথ ধাম” বলে রাজ্য সরকারের প্রচারের প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছে বিজেপি । শুভেন্দু অধিকারী গতকাল বলেন, চার ধামকে পঞ্চম ধাম করা যায় না । আমরা প্রথম থেকেই বলছি যে এটা খাতায় কলমে কালচারাল সেন্টার । কাশী ধামও সরকারি টাকায় তৈরি হয়নি । কাশী ধামের করিডোর সরকারি বোর্ড করেছে । উজ্জয়নের মহাকাল মন্দিরের ক্ষেত্রেও তাই । অধিকাংশ রাজারাজরা মন্দিরগুলোকে তৈরি করে গেছেন । কোন জায়গায় সরকারি টাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করা যায় না। খাতায়-কলমে এটার নাম হচ্ছে কালচারাল সেন্টার । ট্যুরিজমের একটা ভাস্কর্য । আর আপনি ধাম-মাম লিখবেন….আমি তো সেদিন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে আপনি মন্দির লিখুন, মুখে বলছেন মন্দির বানিয়েছেন । লিখছে না কেন ? লিখবে না । কালচারাল সেন্টার লিখলে মিথ্যাচার ধরা পড়ে যাবে ।’।