এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ জুলাই : রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে আসাম সরকার । বনাঞ্চল সহ বিভিন্ন সরকারি জমি জবরদখল করে কলোনি গড়ে দশকের পর দশক ধরে বসবাস করছিল অনুপ্রবেশকারীরা । পূর্বের কংগ্রেস সরকারের তাতে প্রচ্ছন্ন মদত ছিল বলে অভিযোগ । কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির কঠোর পদক্ষেপ দেখে কংগ্রেস, বামপন্থী, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও আম আদিম পার্টির মত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের ‘কোর ভোটব্যাংক’ হারাতে দেখে আতঙ্কিত বলে অভিযোগ তুলছে বিজেপি । অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আসাম সরকারের কঠোর পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিষয়টিকে বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন । এনিয়ে তিনি আসাম সরকারকে ‘জ্ঞান’ দিতে গেলে উলটে ‘তোষামোদি রাজনীতি’ নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার খোঁচা খেতে হল তাকে ।
আজ শনিবার মমতা ব্যানার্জি টুইট করেছেন,’দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা বাংলা, আসামের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষাও । সকল ভাষা ও ধর্মকে সম্মান করে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে চাওয়া নাগরিকদের, তাদের নিজস্ব মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখার জন্য নির্যাতনের হুমকি দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আসামে বিজেপির এই বিভাজনমূলক এজেন্ডা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে এবং আসামের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি প্রতিটি নির্ভীক নাগরিকের সাথে আছি যারা তাদের ভাষা ও পরিচয়ের মর্যাদা এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করছে।’
মমতা ব্যানার্জির পোস্টটি ট্যাগ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা তাকে খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, ‘দিদি, আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি— আসামে, আমরা আমাদের নিজস্ব জনগণের সাথে লড়াই করছি না। আমরা নির্ভীকভাবে সীমান্তের ওপার থেকে চলমান, অনিয়ন্ত্রিত মুসলিম অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছি, যা ইতিমধ্যেই একটি উদ্বেগজনক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায়, হিন্দুরা এখন তাদের নিজস্ব ভূমিতে সংখ্যালঘু হওয়ার পথে। এটি কোনও রাজনৈতিক আখ্যান নয় – এটি একটি বাস্তবতা। এমনকি ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এই ধরনের অনুপ্রবেশকে বহিরাগত আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছে। তবুও, যখন আমরা আমাদের ভূমি, সংস্কৃতি এবং পরিচয় রক্ষার জন্য উঠে দাঁড়াই, তখন আপনি এটিকে রাজনীতিকরণ করতে পছন্দ করেন।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আমরা ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করি না। অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, হিন্দি—সব ভাষা এবং সম্প্রদায় এখানে সহাবস্থান করেছে। কিন্তু কোনও সভ্যতা যদি তার সীমানা এবং তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি রক্ষা করতে অস্বীকার করে তবে টিকে থাকতে পারে না। যদিও আমরা আসামের পরিচয় রক্ষার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করছি, আপনি, দিদি, বাংলার ভবিষ্যতের সাথে আপস করছেন—একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অবৈধ দখলকে উৎসাহিত করছেন, ভোট ব্যাংকের জন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তুষ্ট করছেন, এবং সীমান্ত অনুপ্রবেশ জাতীয় অখণ্ডতাকে গ্রাস করছে—এ সবই কেবল ক্ষমতায় থাকার জন্য। আসাম তার ঐতিহ্য, তার মর্যাদা এবং তার জনগণকে রক্ষা করার জন্য সাহস এবং সাংবিধানিক স্পষ্টতার সাথে লড়াই চালিয়ে যাবে।’।

