এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ ডিসেম্বর : “পশ্চিমবঙ্গ কে গ্রেটার বাংলাদেশ বানাতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি”-ফের এই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ তাঁর এই দাবির সপক্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন পুলিশ জেলার অন্তর্গত সাগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শেয়ার করেছেন । চিঠিটি লেখা হয়েছে “চকফলডুবি মন্দিরতলা বাজার কালীমন্দির কমিটি” কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে । ওই কালীমন্দির কমিটিকে সাতটি শর্ত মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া । “এলাকার ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে” এই নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ । রাজ্যের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জেলাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে মনে করা হয় । এই জেলারই বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালির “ত্রাস” শেখ শাহজাহানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনারও খবর পাওয়া যায় । এহেন একটি জেলার একটি থানা থেকে একটি মন্দির কমিটির আছে এই প্রকার নির্দেশকে “মমতা ব্যানার্জির তোষনের ফল” বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা ।
“চকফলডুবি মন্দিরতলা বাজার কালীমন্দির কমিটি”কে পাঠানো সাগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশে বলা হয়েছে : এলাকার ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাগর থানার পক্ষ থেকে স্বনির্বন্ধ আবেদন । মাননীয়,সভাপতি/সম্পাদক চকফলডুবি মন্দিরতলা বাজার কালীমন্দির কমিটি 1) আপনাদের ধর্মীয় স্থানের চারিদিকে অবশ্যই সি.সি.টিভি লাগাতে হবে। 2)মন্দিরে স্থায়ী মূর্তি রাখা থাকলে অবশ্যই তা দেয়াল ঘেরা, স্থায়ী দরজা লাগানো এবং সিসি টিভির আওতায় থাকতে হবে। 3) মন্দিরে স্থায়ী মূর্তি থাকলে প্রতি রাতে অন্তত দুজন মন্দির কমিটির সদস্য নৈশকালীন পাহারায় থাকতে হবে। 4) সিসিটিভির সংগৃহীত তথ্য সরাসরি থানাতে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। 5) যেকোনো রকম সন্দেহজনক মানুষ অথবা গতিবিধি দেখতে পেলে তৎক্ষণাৎ তা পুলিশের নজরে আনতে হবে। 6)রাত্রিকালীন সময়ে মন্দির চত্বরে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। 7) বার্ষিক পূজা করার যথেষ্ট আগে, থানা থেকে যথাযথ অনুমোদন নিতে হবে।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ কে গ্রেটার বাংলাদেশ বানাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাগর বিধানসভার চকফুলডুবি মন্দিরতলা বাজার কালীমন্দির কমিটি কে পাঠানো মমতা প্রশাসনের এই নোটিশ-এ অন্তত তেমন সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে। এর আগে কখনো এমন নোটিশ রাজ্যের অন্য কোথাও পাঠানোর নজির আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি তোষনের ফল এখন ভোগ করছে পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র হিন্দু সমাজ।’
তিনি অভিযোগ করেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে আজ পর্যন্ত রাজ্যে নির্বিচারে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, হিন্দুদের আরাধ্য দেবদেবী ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমান থাকলেও অপরাধীদের আজ পর্যন্ত মমতা প্রশাসন গ্রেপ্তার করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয় নি, কারণও সেই তোষন আর ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি। যার ফলস্বরূপ একদল বিধর্মীদের সাহস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন এমন যায়গায় এসে পৌঁছেছে যে মমতা প্রশাসন কে এই ধরনের নোটিশ দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ একটা বিষয় পরিষ্কার, হিন্দুদের নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের আরাধ্য দেবদেবী তথা মন্দিরের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে।’
শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন,’প্রাতঃস্মরণীয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কি এই জন্যই হিন্দু বাঙালির একমাত্র হোমল্যাণ্ড কে বাংলাদেশ হওয়ার হাত থেকে ছিনিয়ে এনে পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি করেছিলেন? আজ আমরা কোথায় বাস করছি?’ সর্বশেষে ওই নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে বলব অবিলম্বে এই নোটিশ প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।’।

