এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ ডিসেম্বর : মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মানের ঘোষণা করেছিলেন । মন্দির নির্মানের কাজ এখনো সম্পূর্ণ না হলেও আজ মঙ্গলবার দিঘায় পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী । যদিও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিডকোর ইস্যু করা দীঘার মন্দির নির্মানের কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে বলে দীঘার ওই ‘ভাস্কর্য’ আদপে ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র’,আদপেই মন্দির নয় । মমতা ব্যানার্জির ধর্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা । তাঁর কথায়,’মমতা ব্যানার্জি রেড রোডে নামাজ পড়েন,সনাতন সংস্কৃতি মানেনা ।’ তিনি বলেন,’সত্যের অপলাপ,মিথ্যাচার, ভন্ডামি, হিন্দুদের অপমান, সনাতন সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়া, শ্রী চৈতন্যদেবের অপমান, পুরী ধামের অপমান। ২০২৬ সালের হিন্দু ভোট আপনি পাবেন না আমি একটা ভেজাল হিন্দু । আপনি হিন্দু বিরোধী । হিন্দুরা ইউনাইটেড হচ্ছে, এই আতঙ্কে এইসব করে বেড়াচ্ছেন । আর আপনার ভন্ডামির মুখোশ আমরা শুধু ভাষণের নয় একেবারে নথি দিয়ে বলছি ।’ আজ বিকেলে বিধানসভার ২ নম্বর গেটের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী।
দীঘায় মন্দির নির্মানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’হিন্দুদের টাকায় যখন অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হলো তখন ওনার হিংসা রিপু সক্রিয় হলো । উনি ভাবলেন যে এটা ক্রেডিট তো মোদীজি নিয়ে নেবে । তাহলে আমাকেও একটা মন্দিরের আদলে কিছু তৈরি করতে হবে। হিন্দুদের সঙ্গে বা হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই । কারণ উনি হিন্দুইজম, সনাতন সংস্কৃতি মানেনা । উনি ভুয়া হিন্দু ।’ কার হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘নিজেকে হিন্দু হিসাবে মানলে প্রত্যেক বছর ঈদের দিন রেড রোডে যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়,এটা সম্পূর্ণ রূপে ওই ধর্মে যারা বিশ্বাস করে তাদের,উনি প্রার্থনা করতে যেতেন না । মমতা ব্যানার্জির রেড রোডে প্রত্যেক বছর সকালবেলার প্রার্থনায় আসেন । স্বাভাবিক কারণে রেড রোডে দাঁড়িয়ে ‘একশ দিনের টাকা নেই কেন জবাব চাই জবাব দাও’ । নকল ওয়াশিং মেশিন বসিয়ে কালো কাপড় ঢুকিয়ে সাদা কাপড় বের করার নাটক… সেদিন তিনি বলেছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বজরং দল এরা দাঙ্গাবাজ । স্বাভাবিকভাবে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে হিন্দু সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই । তাই তিনি সরকারি টাকায় একটা ভাস্কর্য তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।’
হিডকোর ইস্যু করা দীঘার জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন,’কাগজপত্র কোথাও মন্দির লেখা নেই । এবারের সাংবিধানিকভাবে কোন সরকার তার এক্স চেকারের টাকায় কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারেনা । তাই মমতা ব্যানার্জি আজকেও দাঁড়িয়ে যা যা বলেছেন তা ভণ্ডামি এবং মিথ্যাচার ।’ তিনি মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’আমি একজন জগন্নাথ দেবের ভক্ত হিসাবে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই চার ধামের একধাম পুরীধাম । পুরীধাম কে নকল করবেন না। এই অধিকার কোন হিন্দু আপনাকে দেয়নি । কেদারধাম, বদ্রিধামের নকল হয় না । শংকরাচার্যের বিকল্প হয় না । গীতাকে পাল্টে দেওয়া যায় না । আপনি অভিনন্দন কে শুভনন্দন করতে পারেন, পুরী ধামের বদল আপনি করতে পারেন না । আপনার সাহস হয় কোথা থেকে ? ধ্বজ তুলবো, ভোগশালা তৈরি করব…কোত্থেকে সাহস হয় আমি জানতে চাই ।’
আজ দীঘায় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, জেলাশাসক, বিধায়ক ছাড়াও ছিলেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস। দীঘার ওই অনুষ্ঠানে রাধারমণ দাসের উপস্থিতিতে চরম ক্ষুব্ধ হন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’আমার লজ্জা লেগেছে মাননীয় রাধারমন দাসজি কে দেখে । শ্রীল প্রভুপাদ ইস্কন তৈরি করেছেন,শ্রীচৈতন্য রূপের ভাবধারায় । শ্রীচৈতন্যদেব পুরী ধামের তিন তিন বারের বেশি গেছেন । তমলুকের মহাপ্রভুর মন্দিরে ১০ দিন ১৫ দিন করে প্রবাস করেছেন । প্রত্যেক বছর আমি মহাপ্রভুর মন্দিরে শ্রীচৈতন্যদেবের শুভাগমন হিসাবে আমরা হিন্দুরা শোভাযাত্রা করি । শ্রী চৈতন্যদেবের পুরীধাম নিয়ে যা কথা আছে শ্রীল প্রভুপাদ রথযাত্রার মধ্য দিয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে । আপনি পাশে দাড়িয়ে আপত্তি করলেন না মাননীয় রাধারমন জি ? আপনার আপত্তি করা উচিত । কারণ আপনি ইসকন কলকাতার একজন কার্যকর্তা । বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিদিন টিভিতে আপনার বচন শোনা যায় । আপনি আজকে মমতা ব্যানার্জির পাশে দাঁড়িয়ে আপত্তি না করে শ্রীল প্রভুপাদ, প্রভু শ্রী চৈতন্যদেব, শ্রী পুরীধামকে অপমান করল মমতা ব্যানার্জি, আর আপনি তার সাক্ষী থাকলেন । এ দুর্ভাগ্য রাখার জায়গা নেই ।’
মমতা ব্যানার্জির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মমতা ব্যানার্জি কে পরিষ্কার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যা যা আজকে বলেছেন করে দেখুন । শুধু উড়িষ্যা নয়, এই বাংলা থেকেও আওয়াজ উঠবে । পুরী ধামের নকল আমরা মানবো না । সরকারি টাকায় আপনি রিলিজিয়াস পারফরম্যান্স করতে পারেন না । আপনার যদি মন্দির বানানো এত ইচ্ছা তাহলে হিন্দুদের চাইলে দিয়ে দিত ।’ পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জিকে স্বৈরশাসক বলে অবিহিত করে বিরোধী দলনেতা বলেন,’এর জন্য ৩২৮০ জন আইপিএস থেকে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে । অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাকে কিভাবে একজন স্বৈরশাসকের মত অপব্যবহার করতে হয় এটা উনি করে দেখাচ্ছেন বাংলা দেখছে । সরকার থাকলে,টাকা থাকলে, ক্ষমতা থাকলে, পুলিশ থাকলে পশ্চিমবঙ্গে যে সব সম্ভব এটা তার প্রমাণ ।’।