এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ আগস্ট : আজ বুধবার সংসদে সাংবিধানিক সংশোধনী সম্পর্কিত ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিল লোকসভায় পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । সেই সময় তুমুল হট্টগোল জুড়ে দেয় বিরোধীরা । বিরোধী সাংসদরা বিলটির কপি ছিঁড়ে ফেলেন। অমিত শাহের দিকে কাগজপত্রও ছুঁড়ে মারেন। বিরোধী সাংসদদের কেউ কেউ ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে শুরু করেন। বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিরোধী সাংসদদের কেন এই বিরোধিতা ? যেটা জানা যাচ্ছে যে বিলটি আইনে পরিনত হলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা ফৌজদারি মামলায় কারাগারে যাওয়া মন্ত্রীরা তাদের পদে থাকতে পারবেন না। প্রস্তাবিত আইনের বিধান অনুসারে, যদি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রীকে ফৌজদারি মামলায় ৩০ দিনের জন্য গ্রেপ্তার বা আটক রাখা হয় যার ফলে পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে, তাহলে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে ।
অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই বিলকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনে মোদী সরকারের মাইলস্টোন বলে মনে করছেন । কিন্তু সংসদে এই বিল পেশে বেজায় চটেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি বিলটি ‘ জরুরি অবস্থা’, ‘গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়তার জন্য মৃত্যুসংবাদ’, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষ করার ষড়যন্ত্র’,’ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা’,’সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পদদলিত করা’,’মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা’ এবং এমনকি ‘হিটলারের আক্রমণ’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি ।
মমতা ব্যানার্জি টুইট করেছেন,’আজ ভারত সরকার কর্তৃক পেশ করা ১৩০তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিলের নিন্দা জানাই। আমি এটিকে অতি জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি কিছুর দিকে পদক্ষেপ হিসেবে নিন্দা জানাই, ভারতের গণতান্ত্রিক যুগকে চিরতরে শেষ করার পদক্ষেপ হিসেবে। এই কঠোর পদক্ষেপ ভারতে গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়তার জন্য মৃত্যুসংবাদ। বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) এর নামে ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার দমন করার জন্য, এটি এখন কেন্দ্রের আরেকটি অতি কঠোর পদক্ষেপ। এই বিলটি এখন আমাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষ করতে চায়। আমরা যা দেখছি তা নজিরবিহীন – বিলটি ভারতীয় গণতন্ত্রের আত্মার উপর হিটলারের আক্রমণের চেয়ে কম কিছু নয়। বিলটি বিচার বিভাগের সাংবিধানিক ভূমিকা কেড়ে নিতে চায় – ন্যায়বিচার এবং ফেডারেল ভারসাম্যের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বিষয়গুলির বিচার করার ক্ষমতা কেড়ে নিতে। দলীয় হাতে এই ক্ষমতা ন্যস্ত করে, বিলটি গণতন্ত্রকে বিকৃত করে।
এটা সংস্কার নয়। এটা এমন একটি ব্যবস্থার প্রতি পশ্চাদপসরণ যেখানে আইন আর স্বাধীন আদালতের হাতে থাকে না বরং স্বার্থান্বেষীদের হাতে ন্যস্ত থাকে। এটা এমন একটি শাসন প্রতিষ্ঠার এক ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা যেখানে বিচার বিভাগীয় তদন্ত নীরব করা হয়, সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয় এবং জনগণের অধিকার পদদলিত করা হয়। এভাবেই কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, এমনকি ইতিহাসের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাও, ক্ষমতাকে একীভূত করে। এটি সেই মানসিকতার গন্ধ দেয় যা বিশ্ব একসময় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ে নিন্দিত হয়েছিল। আদালতগুলিকে দুর্বল করা মানে জনগণকে দুর্বল করা। তাদের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে গণতন্ত্রকে বঞ্চিত করা। বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো – ফেডারেলিজম, ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা – নীতিগুলিকে আঘাত করে যা এমনকি সংসদও অগ্রাহ্য করতে পারে না। যদি এটি পাস হতে দেওয়া হয়, তাহলে এটি ভারতে সাংবিধানিক শাসনের জন্য মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা হবে।
আমাদের এই বিপজ্জনক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের সংবিধান ক্ষমতার অস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিতদের সম্পত্তি নয়। এটি ভারতের জনগণের। বিলের উদ্দেশ্য হল এক ব্যক্তি-এক-দল-এক সরকার ব্যবস্থাকে সুসংহত করা। বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পদদলিত করে। বিলটি কেন্দ্রকে জনগণের ম্যান্ডেটের উপর হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা প্রদানের চেষ্টা করে, নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষের (ইডি, সিবিআই – যাদের সুপ্রিম কোর্ট ‘খাঁচাবদ্ধ তোতাপাখি’ বলে বর্ণনা করেছে) কাছে ব্যাপক ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এটি আমাদের সংবিধানের মৌলিক নীতির মূল্যে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অশুভ উপায়ে ক্ষমতায়িত করার একটি পদক্ষেপ। যেকোনো মূল্যে বিলটি প্রতিহত করতে হবে! এই মুহূর্তে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে! জনগণ তাদের আদালত, তাদের অধিকার এবং তাদের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা ক্ষমা করবে না। জয় হিন্দ!’
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পেশ করা সাংবিধানিক সংশোধনী সম্পর্কিত আইনটি পাস হওয়ার পর, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা ফৌজদারি মামলায় কারাগারে যাওয়া মন্ত্রীরা তাদের পদে থাকতে পারবেন না। প্রস্তাবিত আইনের বিধান অনুসারে, যদি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রীকে ফৌজদারি মামলায় ৩০ দিনের জন্য গ্রেপ্তার বা আটক রাখা হয় যার ফলে পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে, তাহলে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধনী জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯ এর ৫৪ ধারায় একটি নতুন ধারা – (৪এ) যুক্ত করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৫-এ গুরুতর ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হলে এবং ৩০ দিনের জন্য আটকে রাখলে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীদের পদ থেকে অপসারণের বিধান রয়েছে। এর আগে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন ২০১৯-এ এমন কোনও বিধান ছিল না। তাই, ৫৪ ধারা সংশোধন করে ৪এ যুক্ত করা হচ্ছে।।

