এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ নভেম্বর : শুক্রবার রাতে নদীয়া জেলার চাপড়া ব্লকের বাঙালঝি গ্রামে এক মহিলা বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) আত্মঘাতী হয়েছেন । দু’পাতার সুইসাইড নোটে তিনি নিজের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ি করে গেছেন । মৃতার সুইসাইড নোটটি সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি “উদ্বেগ” প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেন। তারপর থেকেই বিজেপি নেতাদের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে হচ্ছে তাকে । বিজেপির প্রশ্ন : কেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দেওয়া হয়নি ? বিএলওদের জন্য বরাদ্দ টাকা কেন আটকে রেখেছেন ? সরকারি কর্মচারীদের পরিবর্তে কেন অঙ্গনওয়াড়ি ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিএলও নিয়োগ করা হল ?
নদীয়া জেলার চাপড়া ব্লকের মৃত মহিলা বিএলও রিঙ্কু তরফদার(৫৪) পার্শ্বশিক্ষিকার চাকরি করতেন চাপড়া বাঙালঝি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে। চাপড়া বাঙালঝির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ২০১ নম্বর বুথে বিএলও-এর দায়িত্ব পান তিনি । সুইসাইড নোটে স্বল্প বেতন ও মাত্রারিক্ত কাজের চাপকে তিনি আত্মহত্যার কারন হিসেবে বর্ণনা করে গেছে৷ সুইসাইড নোটের প্রথম পৃষ্ঠাতেই তিনি তিনি লিখে গেছেন, “আমার মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ি” । মমতা ব্যানার্জি এক্স-এ প্রতিক্রিয়া লেখেন, ‘আর কত প্রাণ যাবে? এই এসআইআর-এর জন্য আরও কতজন মারা যেতে হবে? এই প্রক্রিয়ার জন্য আমরা আরও কত মৃতদেহ দেখতে পাব? এটি এখন সত্যিই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে !’
মমতার ওই পোস্ট ট্যাগ করে বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন । তিনি লিখেছেন,’আপনি আবার মিথ্যা বলছেন — তথ্য বিকৃত করছেন, আপনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও নমনীয় প্রশাসনের অপব্যবহার করে মিথ্যা গল্প ছড়াচ্ছেন, আর বিএলওদের জন্য কুমিরের অশ্রু বর্ষণ করছেন । স্বাধীন তদন্তে সত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আপনার কথার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। স্পষ্ট করে বলা যাক: বাংলার মানুষ — নারী, যুবক, প্রতিটি সৎ নাগরিক চায় এসআইআর সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হোক যাতে তালিকা থেকে অনুপ্রবেশকারী, নকল, অনুপস্থিত, ভূতুড়ে এবং মৃত ভোটারদের অপসারণ করা যায়, যাদের উপর আপনি ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্ভর করেন ।’
তিনি লিখেছেন,’নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করার সাহস করার আগে, বাংলার জনগণের কাছে আপনার কিছু উত্তর দাবী করা উচিত: ১)কেন আপনি বিএলওদের জন্য ১৮,০০০ টাকা পরিশোধ করেননি? প্রস্তাবটি দীর্ঘদিন ধরে আপনার অর্থ বিভাগের কাছে আটকে আছে। ২️)কেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিএলওদের জন্য অর্থ প্রদান করা হচ্ছে না? তাদের কাজের চাপ তাৎক্ষণিকভাবে কমানো যেত। এমনকি বিহারও একই ধরণের কাজের জন্য ১,০০০ ডিইওকে চার মাসের জন্য নিয়োগ করেছিল। ৩️) যখন আপনি ৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বছরের পর বছর ধরে মহার্ঘ্য ভাতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তখন আপনার চোখের জল কোথায় ছিল? আপনি সর্বদা টুইট করতে তৎপর থাকেন — কিন্তু কেন আপনার প্রশাসন কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া বিএলওদের পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সরবরাহ করেনি, তাদের পরিবারকে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করেছে ? এবং অবশেষে, বাংলাকে জানাতে হবে: সারদা, রোজ ভ্যালি এবং অন্যান্য চিট-ফান্ড কেলেঙ্কারির অগণিত ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আপনার চোখের জল কোথায় ছিল, যারা আপনার দলের প্রতারকদের রক্ষা করার কারণে তাদের জীবন হারিয়েছে? আপনার নাটকের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারছে। সত্য বেরিয়ে এসেছে ।’
রাজ্য বিজেপির যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন, SIR এরফলে শুধুমাত্র ভূতুড়ে ভোট বাদ যাবে না , এই পদ্ধতি দেখিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গের আসল অবস্থা। Rule 1.2–তেই পরিষ্কার লেখা আছে, Anganwadi worker বা Contract Teacher-কে BLO করা যাবে শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারী না পাওয়া গেলে।কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বহু বুথে এরা নিয়মিত BLO হিসেবে কাজ করছে। এর মানে কী?’
তিনি আরও লিখেছেন,’এক বুথে ১২০০+ ভোটার — অথচ একজনও স্থায়ী Group C বা তার উপরের সরকারি কর্মচারী নেই।১৪ বছরের তৃণমূল রাজত্ব আর তার আগের ৩৪ বছরের বাম আমলে সরকারি চাকরির অবস্থা এমন জায়গায় এসে ঠেকেছে যে একটা বুথেও যোগ্য কর্মচারী পাওয়া যায় না।SIR শুধু মৃত ভোটার বা জাল ভোট ধরছে না,রাজ্যের সরকারি চাকরির ভয়াবহ বাস্তবতাও সামনে এনে দিচ্ছে।
Anganwadi বা Contract Teacher—শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্কিল, ট্রেনিং—সবটাই প্রশ্নের মুখে।তার ওপরে BDO-দের চাপ। প্রশিক্ষণ নেই, তদারকি নেই।
এটার দায় নির্বাচন কমিশনের নয় —এটা সম্পূর্ণ অপদার্থ রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা।1200+ ভোটারদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী নেই মানেটা বুঝতে পারছেন তো?’
Author : Eidin.

