এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ জুন : বাঙালি হিন্দু ভোট বিভাজন করার জন্য মমতা ব্যানার্জি দুটো লাইন ধরেছেন বলে মনে করছে ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল ও দক্ষিণপন্থী লেখক তথাগত রায় । তিনি এই বিষয়ে এক্স-এ লিখেছেন,’২০২৬-এ হেরে যেতে পারেন— এই ভয় পেয়ে মমতা বাঙালি হিন্দু ভোট বিভাজন করার দুটো লাইন ধরেছেন। এক, বাঙালি হিন্দুর মনে হীনমন্যতা (inferiority complex) তৈরী করার চেষ্টা করা, যে তারা অবাঙালিদের পদানত হয়ে বেঁচে যাচ্ছে। দুই, বাঙালি হিন্দুর মধ্যে এই অলীক ধারণা তৈরী করা যে উচ্চবর্ণের লোকেরা নিম্নবর্ণের মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, এখনো করছে।’
তিনি লিখেছেন,’বাস্তবে পূর্ববাংলায় মুসলমানের অত্যাচারের এবং পশ্চিমবঙ্গে সরকারের তাচ্ছিল্যের প্রধান বলি হয়েছে এই তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষেরা, যাঁরা চাষ করতেন ও মাছ ধরতেন।
পূর্ববাংলায় যদি উচ্চবর্ণের অত্যাচারে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ মুসলমান হয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে নিম্নবঙ্গের নমঃশূদ্র, কৈবর্ত এবং উত্তরবঙ্গে রাজবংশী ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষ টিকে রইলেন কি করে? এঁরা শুধু পরনের কাপড়টা সম্বল করে পালিয়ে এসেছেন, কিন্তু ইসলাম কবুল করেননি।’ তিনি বলেছেন,’২০২৬ সালে হিন্দু ভোট বিভাজনের চেষ্টায় মমতা নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এর পাল্টা ব্যবস্থা বিজেপিকে নিতেই হবে।’
প্রসঙ্গত,পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি,স্বজন পোষণ, আই আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নারী নির্যাতন প্রভৃতি একাধিক ইস্যু রয়েছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে চেপে ধরার জন্য । কিন্তু এরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, মমতা ব্যানার্জির “মুসলিম তোষণ” কে মূলত নির্বাচনী প্রচারের প্রধান ইস্যু করতে চাইছে । অবশ্য তাতে সাফল্যও আসছে । বিগত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জনসংখ্যার নিরিখে এরাজ্যে ৭০ শতাংশ হিন্দু ও ৩০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ৷ মোট ভোটার ৭ কোটি ২০ লাখ । হিন্দু প্রায় ৫ কোটি এবং মুসলিম প্রায় ২ কোটি ৷ । তার মধ্যে ২০২৪ সালের লোকসভায় প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট বিজেপির পক্ষে পড়েছিল । বিজেপি ২ কোটি ৩৩ লাখ ভোট পেয়েছিল । কংগ্রেস -সিপিএম জোট পেয়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ হিন্দু ভোট । বাকি ভোট পড়েছিল তৃণমূলে । তৃণমূল কংগ্রেসের হিন্দু ভোট ১ কোটি ৯০ লাখ ।
কিন্তু রাজ্যের শাসনক্ষমতায় আসতে বিজেপিকে আরও ৫ থেকে ৭ শতাংশ হিন্দু ভোট টানতে হবে । অন্যদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মমতা ব্যানার্জিকে বিজেপির হিন্দু ভোটে ভাগ বসাতে হবে । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মুর্শিদাবাদমদের জঙ্গিপুর,মালদার মেটিয়াবুরুজের রবীন্দ্রনগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শাসকদল ও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হিন্দুরা কতটা মমতা ব্যানার্জির উপর আস্থা রাখে সেটা নিয়ে ধন্দ্ব আছে । এমতবস্থায়, এই সমস্ত দাঙ্গার ক্ষতগুলোকে ২৬-এর ভোট পর্যন্ত টাটকা রেখে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছনোর ভরপুর চেষ্টা করে যাবে বিজেপি । পাশাপাশি সংরক্ষণ বিলে ‘অনৈতিকভাবে’ হিন্দুদের অধিকার কেড়ে মুসলিমদের পাইয়ে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা মমতা ব্যানার্জি করেছেন, সেটাও বিজেপির অন্যতম হাতিয়ার হবে । সেই হাতিয়ার দীঘার জগন্নাথ দেবের প্রসাদের নামে স্থানীয় এলাকায় তৈরি করা “গজা ও প্যাড়া” খাইয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো কতটা ভোঁতা করতে পারেন সেটা ভবিষ্যতেই দেখতে পাওয়া যাবে ।।

