এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২২ জুলাই : রবিবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ দিবসে ভাষণ দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের মানুষ আসল চাইলে তিনি তাদের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেবেন । আর যুক্তি হিসেবে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক আইনের দোহাই দিয়েছিলেন । পাশাপাশি তিনি কেউ জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক ভালো করতে চান । আর এই দায়িত্ব তিনি সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের উপর দেন । মমতা ব্যানার্জির এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি । বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের কথায়,’বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মতন কথাবার্তা ।’ মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের প্রশ্ন, ‘আপনি কি ভারতের একতাকে ভাঙতে চান ?’
আজ সোমবার দিল্লিতে দলীয় কার্যালয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রবিশঙ্কর প্রসাদ । রবিবারের সমাবেশ মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন,’মমতাজি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমানে যা ঘটছে তাতে তিনি দরজা খোলা রেখে দেবেন এবং সকলকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেবেন । বাংলাদেশের মানুষ যদি আশ্রয় চায় তাহলে উনি অবশ্যই আশ্রয় দেবেন । মমতাজি, আপনি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি সিএএ নিয়ে বলেছিলেন যে আমি কোন হিন্দু,শিখ,পার্সি অথবা খ্রিস্টান শরণার্থীদের, যারা হিংসার শিকার করে পশ্চিমবঙ্গে আসবে তাদের ঢুকতে দেবেন না । মমতাজি সিএএ-এর সর্বদা বিরোধ করেছেন । যখন সিএএ এর সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের কোন সম্পর্ক নেই । বাংলাদেশ,পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে আসা তাদের পশ্চিমবঙ্গের জায়গা দেবেন না বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । আর আজ উনি বলছেন যারা আসবে তাদেরকেই থাকার জায়গা দেবেন ।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়তঃ মমতাজি, অখিলেশ যাদব, রাহুল গান্ধীরা বারবার সংবিধানের কথা বলেন । সংবিধানে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অধিকার আপনাদের আছে ? এই অধিকার একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের । আপনিও (মমতা ব্যানার্জি) কেন্দ্রমন্ত্রী ছিলেন । অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়া রাজ্য সরকারের কোন ক্ষমতাই নেই । কাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কাকে আশ্রয় দেওয়া হবে, কাকে আশ্রয় দেওয়া হবেনা তা ঠিক করবে কেন্দ্র সরকার । আজ মমতাজিকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তৎকালীন কেন্দ্র সরকারই সবকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।’
রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন,’এটা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় । স্থিতাবস্থা ফিরে আসুক এটা আমরা সকলেই চাই । এই বিষয়ে আমাদের ঢোকার কোন দরকারই নেই । কিন্তু একজন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ঘোষণা করে দেয় যে তিনি তার রাজ্যে শরণার্থীদের আশ্রয় দেবেন, এটার মানে কি ? আপনি কি ভারতের একতাকে ভাঙতে চান ? উনি এটাও বলেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হোক । এর মানে কি ? মমতাজী আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করবো ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন আপনি ? যে বাংলার মাটিতে রামকৃষ্ণ পরমহংস,স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বোস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রত্যেক মহান মানবের জন্ম হয়েছে, সেই বাংলার মানুষ হয়ে আপনি বলছেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চান ? আপনার এই বক্তব্য ভর্ৎসনা যোগ্য এবং অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ।’
তিনি বলেন,’এই মন্তব্যের আসল উদ্দেশ্য হল যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে তাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এই অজুহাতকে সামনে নিয়ে আসা ।’ রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘আপনারা জানেন যে ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল মাত্র তিনটে জেলা ছিল মুসলিম বহুল । আর আজ পশ্চিমবঙ্গের ৯ জেলা মুসলিম ভুল হয়ে গেছে । সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এমনকি কলকাতারও জনবিন্যাসের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে । আমি একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে গেছি । আজকাল প্রতিটি জেলায় বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের দ্বারা ভরে গেছে । অথচ দেশে নিরাপত্তা নিয়ে ওনার কোন চিন্তাই নেই ।একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্তে প্রধান অভিযুক্ত এবং ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলায় আশ্রয় পেয়েছিল বলে জানা গেছে । তাদের গ্রেপ্তার করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল ।’
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যা ঘটছে তা খুবই দুর্ভাগ্যপূর্ণ । বিজেপির কার্যকর্তাদের ওপর হামলা হচ্ছে । আরএসএস-এর স্বয়ংসেবকদের উপর হামলা হচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে যারাই রাষ্ট্রবাদের কথা বলেন তারাই আজ বিপদে আছেন । তার ওপর মমতা ব্যানার্জীর এই বক্তব্য । এটা খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন,খুবই দুর্ভাগ্যপূর্ণ এবং আমি এর ভর্ৎসনা করি ।’
রবিশঙ্ককর প্রসাদ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বলেন,’আর যিনি সংবিধান হাতে নিয়ে ঘোরেন, সংবিধান মাফিক দেশ চালানোর কথা বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি কি এই বক্তব্য সমর্থন করেন ? ভারতকে টুকরো টুকরো করতে চাইছেন ? মনে হচ্ছে এদের মানসিকতা টুকরে টুকরে গ্যাং দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গেছে ।’
সবশেষে তিনি বলেন,’দেশের সামনে উদ্ভূত এই চ্যালেঞ্জ আমরা স্বীকার করছি। বাংলার পরম্পরার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। এর আমরা সরাসরি বিরোধিত করবো ।’
রাজ্যের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলার লজ্জা মমতা বন্দোপাধ্যায় ! ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বললেন বাংলার সঙ্গে হিন্দুস্তানের সম্পর্ক যাতে ভালো হয় সেটার শুভারম্ভ হবে অখিলেশ যাদবের হাত ধরে! সংবিধানের শপথ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মতন কথাবার্তা বলেন ? অনেক লড়াই সংঘর্ষ করে পশ্চিমবঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি থেকে রুখে দিয়েছিলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুখে প্রচ্ছন্ন বিচ্ছিন্নতার সুর!যে বঙ্গে ঋষি অরবিন্দ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মতো মহাপুরুষ দেশপ্রেমীরা জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই বাংলার লজ্জা এই মুখ্যমন্ত্রী ! একসময়ে মনিষীদের কারণে বাংলার যে অস্মিতা ছিল তা বারবার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের জন্য।’।