এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ জুন : অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে পয়লা জুন । ফলাফল ঘোষণা হবে ৪ জুন, মঙ্গলবার । তার আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বুথফেরত সমীক্ষায় দেশজুড়ে ফের “মোদী ঝড়”-এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । সমীক্ষা অনুযায়ী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী । কিন্তু ওই সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মত কিছু দল । কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কথায়, এক্সিট পোলের কোনো বাস্তবতা নেই । এর উদ্দেশ্য হল বিরোধীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা । রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেন যে ইন্ডি জোট ২৯৮ আসন পাবে । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রবিবার একটি বাংলা খবরের টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বুথফেরত সমীক্ষা করা চ্যানেলগুলিকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন । তিনি ওই চ্যানেলগুলিকে “মোদীয়া” (MODIA) ও “নির্লজ্জ মিডিয়া” বলে অবিহিত করেন ।
প্রসঙ্গত,জাতীয় ও এরাজ্যের বাংলা খবরের চ্যানেলগুলির সমীক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক আসন হারানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । সিংহভাগ চ্যানেলই তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ২০-এর নিচে আসত পেতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । কেবলমাত্র টিভি ৯ বাংলা চ্যানেলের সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যে তৃণমূল কংগ্রেস এরাজ্যে সর্বাধিক ২৪ টি আসন পেতে পারে । আর ওই চ্যানেলেই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি ।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের ভোটে দেখেছি,২০১৯ এবং ২০২১ এর ভোটেও দেখেছি, কিন্তু একটাও মেলাতে পারিনি । কারন এটা বিজেপি নিজে তৈরি করে মিডিয়াকে খাইয়ে দেয় ।’ তিনি আরও দাবি করেন,’এই এক্সিট পোল তৈরি হয়েছিল আজ থেকে ২ মাস আগে এবং সেই কোম্পানিটাও বিজেপির একটা কোম্পানি । আমি ডিটেলস জানি ।’
তিনি বলেছেন,’এই এক্সিট পোলের কোনো ভ্যালু নেই । ঘরে বসে বসে টাকা দিয়ে বিজেপি কিছু নিজের লোক পোষে । সবাই এখন বলে মিডিয়ার ‘ই’-এর জায়গায় ‘ও’ দিয়ে দাও । তাহলে মিডিয়ার জায়গায় মোদীয়া হয়ে যাবে ।’ তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেন, অখিলেশ যাদব,স্ট্যালিন, তেজস্বী যাদব এবং ইন্ডি জোটের শরিকরা যথেষ্ট ভালো ফলাফল করবে । যেই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসুক তারা খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতে পারবে না । এরপর তিনি টিভি ৯ বাংলা ছাড়া বাকি চ্যানলগুলিকে “নির্লজ্জ মিডিয়া” বলে আক্রমণ করেন । পাশাপাশি চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে বিজেপির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন । মমতা ব্যানার্জি প্রশ্ন তোলেন যে প্রতিটি আসন ধরে আগাম ফলাফল বলা কি সম্ভব ?
প্রসঙ্গত,সংবাদমাধ্যমগুলি বুথ ফেরত সমীক্ষা কয়েকটি ধাপে চালানো হয় । কর্তৃপক্ষের তৈরি করে দেওয়া নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে বুথ থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা ভোটারদের কাছে তার উত্তর চান সাংবাদিকরা । প্রতি বিধানসভা এলাকার সাংবাদিকদের দিয়ে এভাবে হাজার খানেক ভোটারের মতামত নেওয়া হয় । পরে সেগুলি সংবাদ মাধ্যমের মনোবিজ্ঞানীরা ভোটারদের মতিগতি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট আসনের ফলাফলের ভবিষ্যৎবাণী করেন।
২০১৪ সালের এক্সিট পোলে ইন্ডিয়া টুডে-সিসেরো বলেছিল এনডিএ পেতে পারে ২৭২টি আসন এবং ইউপিএ পেতে পারে ১১৫টি আসন। নিউজ ২৪ চাণক্যের সমীক্ষা দাবি করেছিল, এনডিএ জোট ৩৪০টি আসনে জিততে পারে। আর ১০১টি আসন পাবে ইউপিএ। এবিপি নিউজ-নিয়েলসনের সমীক্ষায় এনডিএকে ২৭৪টি আসন এবং ইউপিএ ৯৭টি আসনে জিততে পারে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল । মোটামুটি “মোদী ঝড়” এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি সমীক্ষায় । আর হয়েছিল তাই । ওই বছরের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ পেয়েছিল ৩৩৬টি আসন যার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ২৮২টি আসন। আর ইউপিএ পেয়েছিল মাত্র ৬০ আসন, কংগ্রেস তার মধ্যে পেয়েছিল মাত্র ৪৪। নিউজ ২৪ চাণক্যের সমীক্ষা প্রায় হুবহু মিলে গিয়েছিল।
এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলে যায় । সেবার ইন্ডিয়া টুডে এবং মাই অ্যাক্সিসের সমীক্ষা বলেছিল, এনডিএ ৩৩৯-৩৬৫টি আসন পেতে পারে। ইউপিএ ৭৭ থেকে ১০৮-এর মধ্যে আসন পাবে । নিউজ ২৪ চাণক্যের বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল ৩৫০ বা তার বেশি আসন জিততে পারে এনডিএ। ইউপিএ ১০০-র কম আসন পাবে। টাইমস নাও এবং ভিএমআর সমীক্ষা বিজেপিকে দিয়েছিল ৩০৬টি আসন। ইউপিএ ১২০টি আসনে জিতবে বলা হয়েছিল। চুড়ান্ত ফলাফলে দেখা গিয়েছিল যে এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৫৩টি আসন। আর বিজেপি একাই ৩০৩ আসন পায় । ইউপিএ মাত্র ৯৩ টি আসনে জেতে । তার মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫২ টি আসন । অবশ্য কিছু কিছু বুথ ফেরত সমীক্ষা ভূল প্রমানিতও হয় ।।