এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,১৫ মে : ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আজ বুধবার তিনি হুগলির দলীয় প্রার্থী রচনা ব্যানার্জীর সমর্থনে চুঁচুড়ার চিনসুরা মাঠে জনসভা করেন । জনসভাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘পচাবাবু’ ও ‘৪২০’ বলে অবিহিত করেন। ‘মোদী গ্যারান্টি’কে কটাক্ষ করতে গিয়ে ওই সমস্ত মন্তব্য করেছেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি বলেছেন, ‘বলেছিল বিনা পয়সায় গ্যাস দেবে । আপনারা বিনা পয়সায় গ্যাস পাচ্ছেন? তাহলে গ্যারান্টি আর কোথায় রইল ? বিনা পয়সায় গ্যাস মানে ৪২০?’
প্রধানমন্ত্রীকে ‘পচাবাবু’ বলে সম্মোধন করে তিনি বলেন,’পচাবাবুর গ্যারান্টি বিদ্যুতের বিল দিতে হবে না । নাম্বার ওয়ান ৪২০ । বিনা পয়সায় জল দিচ্ছে, একেবারে ৪২০ । বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছে, একেবারে ৪২০। প্রত্যেকটা কথা মিথ্যা বলছে, ভাঁওতা দিচ্ছে । এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফটো চেনে না । উল্টো করে ধরেছে, বলছে আমি বাংলার নেতা । ওই রকম নেতাকে বাংলা কোনদিন গ্রহণ করবে না ।’
লোকসভা ভোটের আগে আয়ুষ্মান কার্ডে ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আজ জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি বলেন,’যদি ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই হয় তাহলে ভোটের আগে কেন বলেননি ? আমরা যতগুলো করেছি সব আগে করেছি ।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন হলো একটা পুতুল, মোদি ঘোড়াচ্ছে আর ঘুরছে ।’
আড়াই মাস ধরে ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেছেন,’দেশে কি আর কোন কাজ নাই? সব উন্নয়নের কাজ বন্ধ । নির্বাচন করতে গিয়ে যদি ১ বছর চলে যায় তাহলে আমরা উন্নয়ন করার সময় কোথাই পাব?’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’বাংলা সাথে অন্যায় করার জন্য তার প্রতিবাদে একজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে চলে গেছেন।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’মোদীবাবু হঠাৎ বললেন ‘মছলি কিঁউ খাতা হ্যায়? মাছ খাবে না । মাছ খাবে না, মাংস খাবে না, ডিম খাবে না । মধ্যপ্রদেশে মাংস বন্ধ । মাছের দোকান বন্ধ। উত্তরপ্রদেশেও বন্ধ । যেখানে যেখানে ক্ষমতায় আছে বন্ধ । কই,আমরা তো তোমার ধোকলা, ধোসা,চাপাটি বন্ধ করি না।’
এনআরসি নিয়ে আজ ফের তোপ দাগেই মমতা ব্যানার্জি । তিনি বলেন,’বলছে এনআরসি করব । আসামে দেখেছেন তো? উনিশ লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ হয়ে গেছিল । এখনো তারা জেলে আছে । আসামে আমাদের চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । আমি সেখানে জনসভা করতে গিয়ে শুনি এসেছিলাম। বলছে এনআরসি করব, ক্যা করব অধিকার কেড়ে নেব । ইউনিফর্ম সিভিল কোড করব অধিকার কেড়ে নেব ।’
মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ তুলেছেন,’বাচ্চাদের স্কুলগুলি বিজেপির শাখা সংগঠন হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কারণ যাতে তারা বাংলা সংস্কৃতি জানতে না পারে। তিনি অভিযোগ করেছেন ইতিহাস, ভূগোল, সংবিধান, শিক্ষা সব বদলে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন,এর মানে একটাই বাংলা কে ওরা পছন্দ করে না।’
মুখ্যমন্ত্রী ফের আজ লোকসভার ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেন । তিনি দাবি করেন, বিজেপি এবার দিল্লিতে হারবে । উত্তরপ্রদেশে হারবে। বিহারে হারবে । রাজস্থানে হারবে । মধ্যপ্রদেশে হারবে । তামিলনাড়ুতে হারবে । কর্নাটকে হারবে। কেরালায় হারবে। উত্তরপূর্ব ভারতে তো ওদের প্রার্থীকেই ঢুকতে দেয়নি। হরিয়ানাতেও কৃষকরা বিজেপিকে ঢুকতে দেয়নি । কারন কৃষকরা আন্দোলন করছিল আর ওরা গাড়ি যাওয়া বন্ধ করতে রাস্তাগুলোকে কেটে দিয়েছিল। তাহলে ওরা আসন কোথায় পাবে ? কি করে জিতবে? জেতার অঙ্ক নেই এখন ওদের হারার অঙ্ক।’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি যে এবারে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিচ্ছে । এই দাবির স্বপক্ষে ২০০৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,’অটল বিহারী বাজপায়ীজি ২০০৪ সালে হেরে যাবে এটা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি ।
‘রাইজিং ইন্ডিয়া’র স্লোগান দিয়েছিলেন । কিন্তু দেখা গেল দেশের হাওয়া বদল হয়ে গেছে। ভেতরে ভেতরে মানুষ ভোট দিলেন না ।’ মমতা ব্যানার্জির কথায় এবারেও ‘নোট বন্দি’, ‘পেনশন বন্ধ করে দেওয়া’, ‘কৃষকদের উপর অত্যাচার করা’ প্রভৃতকে ইস্যু করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে বাংলার ভোটাররা ।।