শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১০ জুন : উচ্চ মাধ্যমিকে অভাবনীয় সাফল্য পেল পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার অন্তর্গত মালডাঙ্গা আর এম ইন্সটিটিউশন । জোড়া ছাত্রী জায়গা করে নিল মেধা তালিকায় । মন্তেশ্বর থানার মেঝিয়ারী গ্রামের বাসিন্দা সৃজনী কুন্ডু ৪৯৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে । অন্যদিকে ৪৮৯ নম্বর পেয়ে দশম স্থান দখল করেছে ভোজপুর গ্রামের বাসিন্দা নেহা নাসরিন । দু’জনেই কলা বিভাগের ছাত্রী । দুই কন্যার নজরকাড়া এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্কুল ৷ গর্বিত গ্রামবাসী ।
মেঝিয়ারী গ্রামের বাসিন্দা সৃজনীর বাবা প্রবীর কুন্ডু চন্দ্রপুর হাইস্কুলের শিক্ষক । মা সঙ্গীতাদেবী গৃহবধু । সৃজনীরা দু’ভাই বোন । সে বড় ৷ ভাই সৃজন ক্লাস ওয়ানের পড়ুয়া । প্রবীরবাবু জানিয়েছেন,ছোট থেকেই মেধাবী তাঁর মেয়ে । মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশা করেছিল । পড়াশোনা আর গান গাওয়া বা শোনা এই ছিল তাঁর মেয়ের জগৎ । তিনি বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়ে রোজ ৮-১০ ঘন্টা করে পড়াশোনা করত । বাকি সময় হয় গান গাইতো, নয় গান শুনতো । উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়ের ভালো ফল করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম । মেধা তালিকায় জায়গা করে আমাদের সেই আশা পূর্ণ করেছে আমার মেয়ে সৃজনী ।’ সৃজনী জানিয়েছেন,তিনি ইংরাজী অনার্সে ভর্তি হবেন । ভবিষ্যতে কলেজের শিক্ষক হতে চান তিনি ।
অন্যদিকে অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মন্তেশ্বর থানার ভোজপুর গ্রামের বাসিন্দা নেহা নাসরিন । দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট নেহা । দাদা রাসেল মল্লিক বিটেক পড়ুয়া । মা রোজিনা বিবি গৃহবধু । নেহার বাবা শহর আলি মল্লিক স্থানীয় একটি চালকলে কাজ করে সংসার চালিয়ে অতিকষ্টে দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোটান । অর্থাভাবে ঠিকমত টিউশন পর্যন্ত জোটেনি নেহার । এই প্রতিকুলতার মধ্যেও শুধুমাত্র মেধার জোরে তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে দশম স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন । তবে নেহা তাঁর স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন । নেহা বলেন, ‘স্কুলের স্যারেরা পাশে না থাকলে এই সাফল্য হয়তো পেতাম না ।’ নেহা জানিয়েছেন,ভবিষ্যতে তিনি শিক্ষকতা করতে চান । কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দিতে চান বাবা ও মা’কে ।
তবে শুধু সৃজনী কুন্ডু ও নেহা নাসরিন নন,সামগ্রিক বিচারে এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে জেলা জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে মালডাঙ্গা আর এম ইন্সটিটিউশন । আর এম ইন্সটিটিউশনের শিক্ষক তপন ঘোষ জানিয়েছেন,এবারে তাঁদের স্কুল থেকে মোট ১৯৮ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল । সবাই পাশ করেছেন । ৪৫০ এর উর্ধে পেয়েছে ৬২ জন ৪০০ উপর পেয়েছে ১৩১ জন ছাত্রছাত্রী ।।