এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৭ জুলাই : ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে ভাষাকে ইস্যু করে এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালি হিন্দু ভোট টানতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলছে বিজেপি । তারই প্রমান পাওয়া গেল মালদায় । ভিন রাজ্যে কথিত বাঙালি নির্যাতনের পালটা এরাজ্যের বিজেপি নেতাদের ঘেরাও করে রাখার নিদান দিলেন মালদার এক তৃণমূল নেতা । ওই তৃণমূল নেতার নাম বিশ্বজিৎ হালদার । তিনি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির মালদা জেলা সভাপতি । জানা গেছে,সম্প্রতি হরিয়ানার পুলিশ হরিশ্চন্দ্রপুরের রাঙাইপুর ঠাকুরটোলা গ্রামের কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশী সন্দেহে আটক করে । এই খবর পেয়ে ওই তৃণমূল নেতা আজ রবিবার সদলবলে শ্রমিকদের বাড়িতে যান । সেখানে গিয়ে পরিবারের মহিলা সদস্যদের আশ্বস্ত করার নামে ‘মগজ ধোলাই’ করে আসেন বলে অভিযোগ উঠছে ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মুসলিমদের ভোট কাটা গেলে তৃণমূলের ভোট ২ কোটিরও নিচে নেমে যাবে । তাই মমতা ব্যানার্জি আতঙ্কে এইসব করছেন ।’
জানা গেছে,সম্প্রতি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার রাঙাইপুর ঠাকুরটোলা এলাকায় সাতজন পরিযায়ী শ্রমিক বিজেপি শাসিত হরিয়ানা রাজ্যে কাজ করতে যান। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপক ধরপাকর অভিযান চলছে । বহু পরিযায়ী শ্রমিকদের পুলিশ গ্রেফতার করে বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দিচ্ছে । কিন্তু বাংলাদেশী এবং পশ্চিমবঙ্গ নাগরিক পৃথকভাবে যাচাই না করতে পারার কারনে সেখানকার পুলিশের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এরাজের কিছু পরিযায়ী শ্রমিক । রাঙাইপুর ঠাকুরটোলা এলাকায় সাতজন পরিযায়ী শ্রমিকও হরিয়ানা পুলিশের হাতে অত্যাচারিত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল । আর সেটাকে বাঙালি নির্যাতন বলে আখ্যা দিয়ে তারা রীতিমতো প্রচারে নেমে পড়েছে ।
আজ ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বিশ্বজিৎ হালদার সহ অন্যান্যরা । বিশ্বজিৎ হালদার পরিবারের মহিলা সদস্যদের মুখোমুখি হয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন । পাশাপাশি তিনি নিদান দেন,’বিজেপির এমএলএ, এমপি এবং নেতারা যারা এই চক্রান্ত করছে এলাকায় ঢুকলে আমরা এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব । এদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে । এদেরকে ধরতে হবে । এরা পশ্চিমবাংলায় রাজনীতি করছে, মানুষের কাছে ভোট চাইছে, আর বাইরের রাজ্যে বাঙালিরা গেলেই অত্যাচার করছে । জেলে ভরে রাখছে । এটা কিন্তু চলতে পারেনা । মমতা ব্যানার্জি যেভাবে লড়াই করছেন আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব । বাংলার প্রতি অন্যায় অত্যাচার করা হচ্ছে । আজ আমাদের মালদা জেলার শ্রমিক ভাইদের আটকে রেখেছে হরিয়ানায় । আমরা আগামী দিনে বিজেপি নেতাদের ছাড়বো না ।বিজেপির নেতাদের ধরবো । বিজেপির নেতাদেরকে আমরা ঘেরাও করে রাখবো ।’
যদিও এই ঘটনায় না হলেও, বাংলা ভাষা নিয়ে মমতা ব্যানার্জির অতিসক্রিয়তা নিয়ে আজ নন্দীগ্রামের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে করা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন,
‘মমতা ব্যানার্জি যা করছেন সম্পূর্ণ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মুসলমানদের বাঁচানোর জন্য করছেন । এটা প্রমাণিত সত্য । ইতিমধ্যে কোচবিহারে ওনার প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় পোস্ট করেও তুলে নিয়েছে । তার দলও তাই করেছে । গতকাল গুরুগ্রাম নিয়ে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করে দিয়েছেন যে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা বাংলাদেশী মুসলমান । বাংলাদেশের মুসলমান এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের কোন স্থান পশ্চিমবঙ্গে হবে না ।’
বিরোধী দলনেতা আরো বলেন,’আসলে তৃণমূল এসআইআর আটকাতে চায় । বিহারে ৫০ লক্ষেরও বেশি নাম কাটা গেছে । যার অধিকাংশ মৃত এবং অনুপ্রবেশকারী । যারা পশ্চিমবঙ্গ এবং নেপাল দিয়ে ঢুকে বিহারের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে । মমতা ব্যানার্জি জানেন যে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মুসলমানরা তাকে একশ শতাংশ ভোট দেয় । তাই তিনি ছাপা মেরে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ ভোট পেয়েছেন । আর বিজেপি ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৭ হাজার ভোট পেয়েছে যেখানে মুসলিমদের অংশগ্রহণ এক শতাংশেরও কম । হাতে গোনা রাষ্ট্রবাদী মুসলিম বিজেপিকে ভোট দিয়েছে । বাকি সবটাই মূলত সনাতনীদের ভোট এবং আদিবাসীদের ভোট । তাই মমতা ব্যানার্জি জানেন এই জলটা বেরিয়ে গেলে তার ভোট দু কোটিরও নিচে নেমে যাবে । সেই আতঙ্কে এগুলো করছে ।’।