এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০১ অক্টোবর : কিশোরী গায়িকা রাফা ইয়াসমিনকে(Rafa Yeasmin) “সাইবার সেফটি অ্যাম্বাসেডর”(Cyber Safety Ambassador) ঘোষণা করল মালদা জেলা পুলিশ । এই ঘোষণা করে মালদা জেলা পুলিশের (Malda District Police) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে লেখা হয়েছে,’মালদা জেলা পুলিশ ঘোষণা করেছে যে রাফা ইয়াসমিন হবেন সাইবার সেফটি অ্যাম্বাসেডর । মালদা, পশ্চিমবঙ্গের এই প্রতিভাবান কিশোরী গায়িকা ছোটবেলা থেকেই তাঁর খুব মিষ্টি ও মধুর কণ্ঠ সবার মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে সুপার সিঙ্গার জুনিয়র (বাংলা) দিয়ে। ২০২০ সালে তিনি স্টার প্লাস-এর জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো তারে জমিন পর এ অংশ নিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এরপর ২০২২ সালে সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস-এর মঞ্চে তাঁর অসাধারণ পরিবেশনা কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানু ও জিৎ গাঙ্গুলিকে মুগ্ধ করে তোলে—এমনকি পুরস্কার হিসেবে তিনি একটি গিটারও পান।’
আরও লেখা হয়েছে,’এবার রাফা নতুন ভূমিকায় — মালদা জেলা পুলিশের সাইবার সেফটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাঁর প্রতিভা, একাগ্রতা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে তিনি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবেন। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি ও জনপ্রিয়তার মাধ্যমে অনেক মানুষ সাইবার অপরাধ ও সাইবার সেফটির গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হবেন।মালদার সত্যিকারের গর্ব রাফা ইয়াসমিন আজকের প্রজন্মের কাছে স্বপ্ন, আশা ও প্রেরণার প্রতীক।’
গান গাওয়ার জন্য মৌলবাদীদের চাপ, ঘর ছাড়তে হয়েছিল রাফা ও তার পরিবারকে
দক্ষিণ দিনাজপুরের ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা দম্পতি রাজ্জাক হোসেন এবং তানিয়া ইয়াসমিনের মেয়ে রাফা ইয়াসমিন । বাবা রাজ্জাক হোসেন পেশায় গৃহশিক্ষক । সেখ সাহেবুল হক নামে এই প্রতিবেদক ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর, “রাফা ইয়াসমিন : সর্বভারতীয় সংগীত-মঞ্চে বছর তেরোর বিস্ময়-বালিকা” শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে জানান যে চিকিৎসক ডঃ পি ব্যানার্জির ইচ্ছাতে গান শেখা শুরু রাফার । প্রথমে তন্দ্রা চৌধুরীর কাছে রাফার সংগীতের প্রাথমিক পাঠ, তারপর তাকে ক্লাসিক্যালের তালিম দেন ক্ষমা কুমার৷ অল্প দিনেই নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত এবং বাংলা আধুনিক গান গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে ওই কিশোরী ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,রাফার গান গাওয়ায় বিপত্তি এল অন্য জায়গায়। পাড়াপড়শি এবং আত্মীয়- পরিজনদের অনেকেই বলতে লাগলেন, ‘গান গাইলে আল্লাহ্ রুষ্ট হবেন। বাড়িতে রহমতের ফেরেস্তা ঢুকবে না।’ এমনকি রাফার বাবার কাছে ছাত্রছাত্রীরা টিউশন পড়াও বন্ধ করে দেয় বলে তিনি জানান । প্রতিবেদক লিখেছেন,”সমাজে এমনও একধরনের মানুষ থাকে, যাদের ধর্মপালনের সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত সম্পর্ক নেই৷ কিন্তু ব্যাগড়া দেওয়া কিংবা গুণ্ডামির সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধর্মসর্বস্ব চিন্তাভাবনার কিছু মানুষজন যেমন বাধা দিয়েছেন,এর উল্টোদিকে ধার্মিক মানুষরাও রাফার পাশে ছিলেন ৷ রাফা যখন বড়ো মঞ্চে গেল, তাঁরা মনেপ্রাণে দোয়া করেছেন তার জন্য৷ বারবার ভরসা দিয়ে বলেছেন, ‘আল্লা তোমার মেয়েকে আরও বড়ো করুক’।” তিনি জানান, লাগাতার হুমকির ভয়ে নিরাপত্তা ও রুজিরিটির কথা ভেবে রাজ্জাক হোসেন দিনাজপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম ছেড়ে মালদার মীরচকে উঠে আসেন রাজ্জাক হোসেন ।
রাফার প্রথম রিয়্যালিটি শো ২০১৯ সালে স্টার জলসায়। সেবার ‘সুপার সিঙ্গার জুনিয়র’-এর আসরে টপ ফাইভে জায়গা করে নেয় সে৷ তারপর ২০২০-তে স্টার প্লাসের ‘তারে জমিন পর’ শোয়েও বেশ নজর কাড়ে রাফা ৷ ২০১৯ সালের জুলাই মাসে জি টিভির সারেগামাপা লিটিল চ্যাম্পের অনলাইন অডিশনে গান রেকর্ড করে পাঠায় রাফা এবং নির্বাচিত হয় । তারপর জি টিভির ‘সারেগামাপা’ লিটল চ্যাম্পসের অডিশন পর্বে রাফার গাওয়া ‘সেনেওরিটা’ গান শুনে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ অনু মালিক, শঙ্কর মহাদেবন, নীতি মোহনরা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন৷ গানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। এরপর রাফাকে আর পিছু ফিরে দেখতে হয়নি ৷ বর্তমানে রাজ্যের সঙ্গীত জগতে এই কিশোরী একজন পরিচিত মুখ । মালদা জেলা পুলিশের দেওয়া “সাইবার সেফটি অ্যাম্বাসেডর” এর বাঁধানো শংসাপত্র হাতে নিয়ে একটা ভিডিও প্রকাশ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে রাফা ইয়াসমিন৷।