এইদিন ওয়েবডেস্ক,কুয়ালালামপুর,২৭ নভেম্বর : খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামি রাষ্ট্র মালয়েশিয়া পর্যটন ক্ষেত্রের জন্য সুপরিচিত একটি নাম । সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে এই দেশে । করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ২ বছর দেশটির সব পর্যটন স্পটগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল । পর্যটন শিল্প থেকে মোটা অঙ্কের আয় মালয়েশিয়ার জিডিপিতে বড় ভূমিকা রাখে । করোনা মহামারী কাটিয়ে ওঠার পর ফের পর্যটন শিল্পের দিকে নজর দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার । সেই লক্ষ্যে বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারত ও চীনের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভিসা মুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (Anwar Ibrahim)। রবিবার তিনি ঘোষণা করেছেন চীন এবং ভারত মালয়েশিয়ার পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী, যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চম-বৃহৎ উৎস বাজার । তাই এই দুই রাষ্ট্রের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পয়লা ডিসেম্বর থেকে ভিসা-মুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে ।
এর আগে থাইল্যান্ড সরকার চীনা এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা মুক্ত করার কথা ঘোষণা করে । এবার প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করল মালয়েশিয়াও । এতে দেশের অর্থনীতিকে উদ্দীপিত হবে বলে মনে করছে ওই দুই রাষ্ট্র ।
মালয়েশিয়া ট্যুরিজম প্রোমোশন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ধস নেমেছে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে । চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্পসহ সব ধরণের ব্যবসা বাণিজ্য। গত দুই বছরে মালয়েশিয়ায় পর্যটক একেবারে তলানিতে নেমেছে । ফলে দেশটির পর্যটন শিল্পে চুড়ান্ত ধস নেমে এসেছে ।
রিপোর্ট অনুযায়ী,মহামারির কারনে পর্যটন খাতে আয় কমেছে প্রায় ৮১ শতাংশ। ২০১৯ সালে পর্যটন খাতে আয় ছিল ৬৬ দশমিক ১ বিলিয়ন রিঙ্গিত। ২০১৯ সালে পর্যটন খাত থেকে আয় হয়েছিল ২৪ হাজার ২ কোটি রিঙ্গিত, যা দেশটির জিডিপির ১৫.৯ শতাংশ।
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের মার্চে শুরু হওয়া লকডাউনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়ার পর্যটন খাতেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফলে দেশটির অর্থনীতি তলানিতে পৌঁছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার বিভিন্ন ধাপে ধাপে নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজানো । পাশাপাশি দুই বৃহৎ জনবহুল রাষ্ট্র ভারত ও চীন থেকে পর্যটক টানতে এই দুই দেশের জন্য ভিসা মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি ।
বর্তমানে চীন ও ভারতের নাগরিকদের মালয়েশিয়া ভ্রমণের আগে ভিসা নিতে হয়। এখন নতুন ভিসা- মুক্ত নীতির সাথে, প্রবেশের বাধাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, পর্যটকদের জন্য সহজ ভ্রমণের সুবিধা হবে এবং এই দুটি জনবহুল দেশ থেকে বৃহত্তর সংখ্যক দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
ভিসা-মুক্ত প্রবেশ মঞ্জুর করার সিদ্ধান্তটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ যার লক্ষ্য আরও বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করা এবং মালয়েশিয়ার পর্যটন খাতে বৈচিত্র্য আনা। ভ্রমণ পদ্ধতি সহজ করার মাধ্যমে,মালয়েশিয়া তাদের বিশাল জনসংখ্যা এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত জনসংখ্যাকে পুঁজি করে চীন ও ভারতের বিপুল পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় ।
ভিসা অব্যাহতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এটি সম্ভবত পর্যটকদের খরচ, হোটেল বুকিং এবং বিভিন্ন পর্যটন-সম্পর্কিত কার্যকলাপ থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি করবে। উপরন্তু, এটি সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করবে এবং মালয়েশিয়া এবং এই দুটি প্রভাবশালী দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করবে বলে আশা করছে মালয়েশিয়া সরকার ।।