এইদিন বিনোদন ডেস্ক,৩১ মার্চ : গুজরাট দাঙ্গার পটভূমিতে নির্মিত উগ্র বামপন্থী লেখক মুরলি গোপীর হিন্দু বিদ্বেষী ছবি ‘এলই-২ এমপুরান’-এ অভিনয় করে বিপাকে পড়েছেন মালয়ালম সুপারস্টার মোহনলাল । এই ছবিটিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাকে প্রধান ভিলেন করা হয়েছে । তাকে দাঙ্গার সময় পরিচালক পৃথ্বীরাজ অভিনীত জায়েদ মাসুদের পরিবারের গণহত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে – সংঘ পরিবার ছবিটির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে। হিন্দুত্ববাদী প্রচারকরা দাবি করেছেন যে ছবিটি হিন্দু- বিরোধী । তবে বাম এবং কংগ্রেস ছবিটি দেখে বেজায় খুশি । তারা হিন্দুত্ববাদীদের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নির্বিচারে চিত্রায়নের জন্য নির্মাতাদের প্রশংসা করেছে । এদিকে এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে বিপাকে পড়ে গেছেন মালয়ালম সুপারস্টার মোহনলাল । কারন ছবিটি দেখার পর অভিনেতা মোহনলালের হিন্দু ভক্তর সংখ্যা দ্রুত কমছে ।
এই পরিস্থিতিতে অভিনেতা মোহনলাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফাই দিয়ে লিখেছেন,’আমি জেনেছি যে ‘লুসিফার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় অংশ ‘এমবুরান’ সিনেমার অভিব্যক্তিতে উঠে আসা কিছু রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়বস্তু আমার অনেক ভক্তদের জন্য অনেক হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিল্পী হিসেবে, আমার কর্তব্য হল আমার কোনও সিনেমা যাতে কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন, ধারণা বা ধর্মের প্রতি ঘৃণা পোষণ না করে তা নিশ্চিত করা। তাই, আমি এবং এমপুরান টিম আমার প্রিয়জনদের মানসিক যন্ত্রণার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত, এবং এই উপলব্ধি করে যে এই ছবির পিছনে কাজ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব আমরা একসাথে সিনেমা থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এই ধরনের বিষয়গুলি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত চার দশক ধরে আমি আপনাদের একজন হিসেবে আমার সিনেমা জীবন কাটিয়েছি। আপনাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। আমি বিশ্বাস করি এর চেয়ে বড় মোহনলাল আর কেউ নেই… প্রেমের সাথে মোহনলাল ।’ যদিও তার এই ক্ষমা প্রার্থনাতে খুশি নন নেটিজেনরা । একজন অভিনেতাকে নিশানা করে লিখেছেন,’মোহনলাল, ফ্রিকিং লালেত্তন,তুমি ৪০ বছর ধরে একজন অদ্ভুত সুপারস্টার। এর জন্য তুমিই দায়ী। তুমিই সবচেয়ে বেশি দায়ী।’
প্রসঙ্গত,উগ্র বামপন্থী লেখক মুরলি গোপী এই প্রথম হিন্দু বিদ্বেষী চিত্রনাট্য রচনা করেননি । এর আগে কুরুথি (২০২১) ছবিতে একজন মুসলিম সন্ত্রাসীকে মহিমান্বিত করেছিলেন তিনি । তিয়ান (২০১৭) ছবিতে পরিকল্পিতভাবে ব্রাহ্মণকে নায়ক করে জাতপাতের বিভাজনকে উসকে দেওয়ার কাজ করেছিলেন । তেমনই ‘এলই-২ এমপুরান’ হল তার একটি অপপ্রচার মূলক ছবি । এই ছবিটির বিষয়বস্তু নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পটভূমিতে নির্মিত দৃশ্যের চিত্রায়ন, যা নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে সংঘটিত হয়েছিল।
তবে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সাথে এক আলাপচারিতায় মুরলী গোপি অবশ্য বিতর্কটি উড়িয়ে দিয়েছেন, একই সাথে বলেছেন যে, মানুষের নিজস্ব উপায়ে ছবিটি ব্যাখ্যা করার অধিকার আছে। আমি এই বিতর্কের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করব। তাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে দিন। প্রত্যেকেরই তাদের নিজস্ব উপায়ে ছবিটি ব্যাখ্যা করার অধিকার আছে। তাদের এটি ব্যাখ্যা করতে দিন। আমি চুপ থাকব ।’ মুরলী বামপন্থী সংগঠনগুলিরও সমালোচনা করে বলেন যে তারা অনেক আগেই তাদের মতাদর্শ ত্যাগ করেছে। বামপন্থীরা এখন আর অস্তিত্বহীন। তারা চরম ডানপন্থী৷’
হিন্দুত্ববাদীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটির নিন্দা করলেও, বিজেপি রাজ্য ইউনিট এই বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে, বলেছে যে দর্শকরা ছবিটি দেখার পরে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবেন। ছবিটি একটি পরিকল্পিত ট্রিলজির দ্বিতীয় কিস্তি যা পৃথ্বীরাজের পরিচালনায় প্রথম লুসিফার (২০১৯) দিয়ে শুরু হয়েছিল, এমপুরান-এ মঞ্জু ওয়ারিয়ার, অভিমন্যু সিং, টোভিনো থমাস, আন্দ্রেয়া তিভাদার, জেরোম ফ্লিন এবং ইন্দ্রজিথ সুকুমারান প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন।
সিনেমাটির পর্যালোচনায় , স্ক্রিনের আনন্দু সুরেশ ছবিটির লেখকের সমালোচনা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত এটিকে পাঁচের মধ্যে তিন তারকা দিয়েছেন । এদিকে তীব্র বিতর্কের মাঝে ছবিটির ১৭ জায়গায় কাঁচি চালিয়েছে পরিচালকরা । এমনকি হিন্দু ভিলেনের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে ।।

