জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আসানসোলের,৩০ ডিসেম্বর : শীতের আমেজ গায়ে মেখে রাজ্যের যেসব এলাকা পর্যটকদের কাছে একইসঙ্গে বেড়ানো ও পিকনিকের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তার অন্যতম হলো পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের মাইথন জলাধার। এই রাজ্য সহ পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড থেকে আগত পর্যটকরা মাইথনের সবুজ প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে মেতে ওঠে পিকনিক ও নৌকাবিহারে। সারাবছর মোটামুটি ভিড় থাকলেও ডিসেম্বর মাসে পর্যটকদের ভিড়ে পরিবেশটাই পাল্টে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে ফোটে হাসি। ব্যস্ততা বেড়ে যায় স্থানীয় প্রশাসনের।
প্রতি বছরের মত এবছরও মাইথনের প্রবেশের মুখে পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত ‘স্বাগতম গেট’। ফিতে কেটে গেটের উদ্বোধন করেন বারাবনির তৃণমূল যুবনেতা মুকুল উপাধ্যায়। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৈলাশপতি মন্ডল ও সহ সভাপতি বিদ্যুৎ মিশ্র, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান সহ অন্যান্যরা।
এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি নাহয় তার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পিকনিক স্পটে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। ব্যবস্থা করা হয়েছে অতিরিক্ত আলোর। বিভিন্ন প্রান্তে নিয়োগ করা হয়েছে পুলিশ ফোর্স।
মাইথনে পিকনিক মরশুম সহ অন্যান্য সময় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের বড় কেন্দ্র হলো নৌকাবিহার। নৌকা ঘাট নিয়ে একটা সমস্যা বহু দিন ধরেই চলে আসছে। এই সমস্যার সমাধানে অর্থবহ ভূমিকা পালন করেন সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস ও সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৈলাসপতি মন্ডল। নৌকাচালকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্থির হয় আদিবাসী নৌকা চালকদের আবেগ কাশিডাঙ্গা ঘাট কেবলমাত্র আদিবাসী নৌকা চালকরা ব্যবহার করবে। অন্যদিকে থার্ড ডাইক, সুলেমান পার্ক এবং ফায়ারিং রেঞ্জ আগের মতই অন্যান্য নৌকা চালকদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। এই ব্যবস্থায় প্রত্যেকেই খুশি। পিকনিক স্পট মানেই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এঁটো শালপাতা, অবশিষ্ট মশলাপাতি, কাগজের টুকরো ইত্যাদি। কিন্তু পিকনিক স্পট পরিচ্ছন্ন রাখতে ও পানীয় জলের যাতে কোনো সমস্যা নাহয় তারজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতি। প্রতিটি পিকনিক স্পটে ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। আগত পর্যটকদের হাতে দেওয়া হচ্ছে ডাস্টবিন ব্যাগ। নিয়মিত জঙ্গল ও শৌচালয় পরিষ্কার করা হচ্ছে। গাড়ির পার্কিং ফী বাবদ নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। নৌকা চালকদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবছর বড়দিনের পরে সপরিবারে মাইথনে পিকনিক করতে যান আসানসোলের বাসিন্দা ধনঞ্জয় মুখার্জ্জী। তিনি বললেন,’এবার পরিবেশটা অনেকটা অন্যরকম লাগছে।, স্থানীয় শ্রমিক নেতা মনোজ তেওয়ারী বললেন,’পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা নাহয় তারজন্য আমাদের দলের ছেলেরা সতর্ক আছে।’।