এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় মূল আসামি আয়েশাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বরিশালের নলছিটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে এক গৃহবধূ লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে গলাকাটা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে জবাই করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেখানেই তাকে ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। ফ্লাটে তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। মনে করা হচ্ছে যে ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই আবাসনের দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘাতক গৃহকর্মীকে বোরকা পরে আসতে দেখা যায় । বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস।
ভবনের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই আবাসনের লিফটে উঠে সাত তলায় যায় গৃহকর্মী আয়েশা। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে ড্রেস পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে যায়।
শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন,’ফ্লাটে কাজের মহিলা দরকার ছিল। সাধারণত গেটে অনেকে কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরা মেয়েটি দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে, সে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর স্ত্রী ও মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটা কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময় মতো এসেছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসে। আজ (সোমবার) কি হয়েছে, এটা তো আর বলার অবস্থা নেই।’
শাজাহান রোডে বহুতল ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের দরজা থেকে শুরু করে ভেতরে বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ, ফ্লাটের আলমারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায়। ঘরের সর্বত্র ধস্তাধস্তি চিহ্ন, মেঝেতে ও দেয়ালেও রক্তের দাগ। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ, আফরোজের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য আর কি খোয়া গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের বাবা আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফিরে এসে স্ত্রী–সন্তানের গলাকাটা রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান।
আজিজুলের গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়। ২০১২ সাল থেকে তিনি পরিবার নিয়ে বহুতল ভবনটির অষ্টম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন।।

