এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভোপাল,০২ ডিসেম্বর : সন্তানের প্রাণ সংশয় হতে দেখলে কোনও মা স্থির থাকতে পারেন না । তা সে মানুষ হোক বা মানবেতর প্রাণী,সন্তানের প্রাণ রক্ষায় মা ঝাঁপিয়ে পড়বেনই । অতীতের এমন বহু পরিসংখ্যান আছে । ফের একবার সন্তানের প্রতি মাতৃস্নেহের এমন ঘটনা প্রকাশ্যে এল মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলার সঞ্জয় টাইগার রিজার্ভের বাফার জোন থেকে । একটি চিতাবাঘের সাথে লড়াই করে ৮ বছরের শিশুসন্তানের প্রাণ বাঁচালেন এক আদিবাসী মা । এই ঘটনার খবর শুনে কিরণ বাইগা (Kiran Baiga) নামে ওই মহিলার প্রশংসা করেছেন খোদ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান । তিনি ট্যুইটারে লেখেন, ‘কালের হাত থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়ে নতুন জীবন দানকারী মাকে স্যালুট । রাজ্যের সিধি জেলায় একটি চিতাবাঘটিকে এক কিলোমিটার দূরে তাড়া করার পরে, মা তাঁর পেটের সন্তানের জন্য তার সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন । মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার এই সাহস মায়ের মমতার এক অপূর্ব রূপ ।রাজ্যের জনগণের তরফে মা শ্রীমতি কিরণ বাইগাকে অভিনন্দন ।’
জানা গেছে,ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলার বাদি ঝিরিয়া গ্রামের । সঞ্জয় টাইগার রিজার্ভের বাফার জোনের মধ্যেই পড়ে গ্রামটি । ওই গ্রামে একটি কুঁড়ে ঘরের মধ্যে স্বামী ও ৩ শিশুসন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন কিরণ বাইগা নামে ওই আদিবাসী মহিলা। ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ ।
জানা যায়,কিরণদেবীর তিন সন্তান ঘরের বাইরে খেলা করছিল । সেই সময় একটি চিতাবাঘ আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে কিরণদেবীর বছর আটেকের ছেলে রাহুলকে মুখে করে তুলে জঙ্গলের দিকে ছুটে পালিয়ে যায় । তখন কিরণ তাঁর অন্য দুই সন্তানকে কুঁড়েঘরের ভেতরে থাকতে বলে তিনি ওই বাঘটির পিছু ধাওয়া করেন । অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও কিরণ চিতাবাঘের সাথে তালে তাল মিলিয়ে ছুটতে থাকেন । প্রায় এক কিলোমিটার পিছু ধাওয়া করার পর জঙ্গলে গিয়ে তিনি দেখতে পান যে এটি ঝোপের মধ্যে বসে রয়েছে বাঘটি । ভয়ঙ্কর পাঞ্জার মধ্যে ধরে রয়েছে তাঁর শিশুটিকে । এরপর কিরণদেবী
চিতাবাঘটিকে ভয় দেখানোর জন্য একটি লাঠি তুলে নেন পাশাপাশি মুখে প্রচন্ড জোরে শব্দ করতে থাকেন । ইতিমধ্যে চিতাবাঘটি শিশুটিকে ছেড়ে কিরণদেবীর উপর হামলা করে বসে । পালটা হামলা করেন কিরণদেবী । এদিকে ওই লড়াইয়ের মাঝেই
তিনি ছেলেকে কোলে তুলে নেন । বাঘটি মহিলার রুদ্র রূপ দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় । তারপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন কিরণদেবী ।
জানা যায়, বাঘের হামলায় মা ও ছেলে দু’জনেই জখম হয় । এই ঘটনার খবর পেয়ে বাফার জোন রেঞ্জার অসিম ভুরিয়া তাঁদের উদ্ধার করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করান । তিনি জানিয়েছেন,তাঁদের চিকিৎসার খরচ বন বিভাগ বহন করবে ।।
ছবি : মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত ।