প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ সেপ্টেম্বর : হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ । অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। দিনের পর দিন এই ভাবে হয়ে চলা বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ দফতর ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও বদল ঘটেনি পরিস্থিতির। তার কারণে নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়াই দুস্কর হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোগী ও তাঁর পরিজনরাও বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যদি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) জয়রাম হেমব্রমের বক্তব্য,’নবগ্রাম হাসপাতালের তো নিজস্ব জেনারেটার ও ইনভার্টার আছে।তার পরেও কিসের সমস্যা ,তা আমি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাতে বলেছি।’
নবগ্রাম এলাকাটি জামালপুরের আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। চিকিৎসা পরিষেবা পেতে এতদ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীন এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল সকালই খুলে যাায়।প্রতিদিন দু’শোর বেশী রোগী চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হাজির হয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে।কিন্তু অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকাছে হাসপাতাল।তার কারণে চিকিৎসকের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে যেমন অসুবিধা হচ্ছে,তেমনি যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে ।
এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক চন্দন মজুমদার সোমবার বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন।তিনি বলেন,বেশ কিছুদিন হল হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু হতে না হতেই সকাল ৯টায় হাসপাতালে ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।দুপুর দুটো অব্দি ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ হয়ে থাকছে। এর কারণে অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে হাসপাতাল। রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।এমনকি আপৎকালীন পরিষেবা দিতেও সমস্যা হচ্ছে। শ্বাস কষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে নেবুলাইজেশন নিতে এসেও হতাশ হচ্ছেন।হাসপাতালে ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ থাকছে বলে নেবুলাইজেশন মেশিন চালাতে পারা যাচ্ছে না।অন্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।
চিকিৎসক চন্দন মজুমদার এও বলেন,বহির্বিভাগ চালু হতে না হতেই হাসপাতালের ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ হয়ে থকার বিষয়টি নিয়ে তিনি বারে বারে ব্লকের বিদ্যুৎ দফতরে জানিয়েছেন।এছাড়াও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক,বিডিও ও পুলিশকেও সবিস্তারে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা আজ অবধি গৃহীত হয়নি। হাসপাতালের ইনভার্টার ও জেনারেটরের কি হাল,তা চন্দন মজুমদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’জেনারেটরের তেলের খরচের অর্থ পাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা রয়ে ছিল।অতি সম্প্রতি সিএমওএইচ স্যার সেই সমস্যার নিরসন করছেন।’ আর হাসপাতালের ইনভার্টারটি বিকল হয়ে গিয়েছে । সেটি মেরামতির জন্য আড়াই মাস আগে যোগাযোগ করা হয় একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামতি সংস্থার সঙ্গে। ওই সংস্থা ইনভার্টারটি মেরামত করে দেওয়ার জন্য ৫,৩০০ টাকা নিয়ে নিলেও ইনভার্টারটি আজ অবধি মেরামত করে দেয়নি। পুলিশ যাতে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তার জন্য জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য দফতর জামালপুর থানায় অভিযোগ জানায়। কিন্তু পুলিশি কোন সহায়তা মেলে নি বলে ডাক্তার মজুমদার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিরশনে ব্লক প্রশাসন কি ভাবছে তা জানার জন্য বিডিও (জামালপুর) রাহুল বিশ্বাসকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি । জামালপুর ইলেকট্রিক দপ্তরের স্টেশন ম্যানেজার তরুণ কুমার দাস আবার নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে কোনও দায় নিতে চাননি। তিনি বলেন,’এই বিষয়টা আমাদের বিষয় নয়।’ নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ ৩৩,০০০ ভোল্টেজ লাইনের ফল্ট বলে তরুণ দাস জানান ।
তবে জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলক মাঝি দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। জেলা পরিষদের (পূর্ব বর্ধমান) জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ্য বিশ্বনাথ রায় বলেন,’বিষয়টি নিয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। নবগ্রাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে তাদের সমস্যার কথা জানালে, আমি দ্রুত সমআস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেব ।’।

