এইদিন ওয়েবডেস্ক,দেরাদুন,০১ এপ্রিল : দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়াকার নির্মম হত্যা মামলার কথা কথা সকলেরই জানা । লিভ ইন পার্টনার আফতাব আমিন পুনাওয়ালা তার প্রেমিকাকে হত্যার পর ৩৫ টুকরো করে দেহাংশ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে ভরে আশপাশের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসেছিল। পুলিশ বহু কষ্টে ওই তরুনীর মাত্র হাতেগোনা হাড় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । ২০২২ সালের ১৮ মে দিল্লির মেহরাউলির একটি ফ্লাটে সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে । প্রায় একই ধাঁচে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে লিভ ইন পার্টনার শাহনূর(২৪)কে হত্যা করে দেহ সুটকেস বন্দি করে পাহাড়ের খাদে ফেলে দিয়েছিল প্রেমিক রশিদ(২৩) । হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাস পর সুটকেস বন্দি অবস্থায় ওই তরুনীর পচাগলা দেহের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে দেরাদুনের উত্তরাখণ্ডের পুলিশ ।
পুলিশ একটি প্রেস রিলিজে জানিয়েছে, হরিদ্বারের কানখাল থানার অন্তর্গত ভাদিনীর বাসিন্দা ২৪ বছরের শাহনূর দেরাদুনের একটি বিউটি পার্লারের কাজ করতেন। কর্মসূত্রে তিনি দেরাদুনের সংস্কৃতি বিহার কলোনিতে ভাড়া ঘরে থাকতেন । ওই এলাকায় ঘর ভাড়া করে ছিল উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার বাগোয়ালি থানার অন্তর্গত নিউ মান্ডির বাসিন্দা মুরসলিনের ছেলে অভিযুক্ত রশিদ ।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারী শাহনূরের পরিবার পটেলনগরের কোতোয়ালিতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে । অভিযোগে জানানো হয় যে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন শাহনূর।অনেক চেষ্টা করেও তারা শাহনূরের হদিশ করতে পারেনি । এরপর প্যাটেল নগর থানায় একটি নিখোঁজ ডাইরি করে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে দেরাদুনের সংস্কৃতি লোক কলোনিতে রশিদ নামে এক যুবকের সাথে লিভ-ইন সম্পর্কে বসবাস করছিলেন মেয়েটি । মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই দেরাদুন থেকে পালিয়ে যায় রশিদ । পুলিশ তাকে ধরার জন্য ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করে । শেষে গত ৩০ মার্চ পুলিশ গোপন সূত্র থেকে খবর পায় যে রশিদ সংস্কৃতি বিহার কলোনিতে তার ভাড়া করা ঘরে ঘোরাফেরা করছে, যে সম্ভবত দেরাদুনের ভাড়া ঘর থেকে তার জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে এসেছিল বলে পুলিশের অনুমান, তখন পুলিশের একটি দল সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি বিহার কলোনিতে পৌঁছে যায় এবং রশিদকে ঘটনাস্থলে শাহনূর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানানো হয় । কিন্তু সে তার প্রেমিকা সম্পর্কে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করে । এরপর পুলিশ রশিদকে থানায় নিয়ে এসে নিজস্ব কায়দায় জেরা শুরু করতেই সে ভেঙে পড়ে এবং প্রেমিকাকে খুনের কথা কবুল করে।
রশিদ পুলিশকে জানায়, সে বাগোয়ালিতে মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করত। ২০১৭-১৮ সালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শাহনূরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে দুজনেই একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, সে শাহনূরের সাথে দেখা করতে দেরাদুনে আসে এবং তারপরে তারা দুজনেই সংকর্ষ লোক কলোনিতে আইএসবিটির কাছে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকতে শুরু করে ।
শাহনূর অভিযুক্ত রশিদকে জানিয়েছিল, সে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করে। কিন্তু সে কখনো প্রেমিকাকে ঠিকানা বলেনি, প্রেমিকা ঠিকানার কথা জিজ্ঞাসা করলেই সে এড়িয়ে যেত । শাহনূর প্রায়ই গভীর রাতে আবার কখনো পরদিন সকালে রুমে আসত। যার কারণে রশিদের মনে হয়েছিল শাহনূর কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে । এমনকি গত ২৭ ডিসেম্বর সকাল দুইটায় রুমে এলে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। মারামারির সময় শাহনূর তাকে চড় মারেন। এতে রশিদ ক্ষিপ্ত হয়ে শাহনূরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
রশিদ পুলিশকে জানিয়েছে,প্রেমিকাকে হত্যার পরের দিন শাহনূরের স্কুটার নিয়ে প্যাটেল নগর লালপুলে যায় সে । সেখানে সে শাহনূরের এটিএম কার্ড থেকে ১৭ হাজার টাকাও তুলে নেয় । এই টাকা দিয়ে সে একটা বড় লাল স্যুটকেস কিনে প্রেমিকার লাশ স্যুটকেসে ভরে পাহাড়ের খাদের নিচে জঙ্গলে ফেলে দেয়। এরপর ধরা পড়ার ভয়ে সে শাহনূরের স্কুটার নিয়ে মুজাফফরনগরের বাগোয়ালি গ্রামে পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে পানিপথে বোনের বাড়িতে গিয়ে কিছুদিন আত্মগোপন করে । গত ৩০ মার্চ দেরাদুনের ঘর থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।।