প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ ডিসেম্বর : বয়স মাত্র দু’বছর নয় মাস।এই বয়সেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম সহ পশু-পাখি ও ফুল-ফলের ইংরাজি নাম একেবারে ঠোটস্থ করে ফেলেছে মহম্মদ সাগির মণ্ডল।এরই স্বীকৃতি স্বরুপ ’ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে’ নিজের নাম তুলে ফেলে পূর্ব বর্ধমানের আউশা গ্রাম নিবাসী খুদে সাগির এখন কার্যত ’সেলিব্রেটি’ বনে গিয়েছে। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলাকার বিধায়ক থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যক্তি, সবাই এখন পৌছে যাচ্ছেন তাঁর বাড়িতে। ছেলের এই সাফল্যে বেজায় খুশি সাগিরের বাবা *কায়ূম* মণ্ডল ও মা সোমা খাতুন।
বর্ধমান-২ ব্লকের অধীন নবস্তা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আউশা কামারপাড়ায় সাগির মণ্ডলের মামার বাড়ি ।তাঁর পৈত্রিক বাড়ি জেলার মন্তেশ্বরের মামুদপুরে। সাগিরের বি-এ পাশ বাবা কায়ূম মণ্ডল কর্মসূত্রে চেন্নাইয়ে থাকেন।আর বি-এ পাশ মা সোমা খাতুন সাধারণ গৃহবধূ। সুচিশিল্পের কাজে তিনি অবশ্য বেশ দক্ষ।অভাব অনটন থাকলেও একমাত্র সন্তান সাগির উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বড় ডাক্তার হোক এমন স্বপ্নই দেখেন মা সোমা খাতুন ।মায়ের ইচ্ছা পূরণে খুদে সাগির এখন থেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছে আমি ডাক্তার হবো’।
’
মন্তেশ্বরে শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে কিছুদিন হল *সোমা* খাতুন তাঁর ছেলেকে নিয়ে আউশা গ্রামে বাবার বাড়িতেই রয়েছেন ।ছেলেকে শিক্ষার পাঠ তিনিই দেন। *সোমা* জানিয়েছেন,“তাঁর ছেলের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ।পড়ানোর ছলে তিনি সাগিরকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম,বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুল-ফলের ইংরাজি নাম সহ দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নাম বলে বলে শোনাতেন।স্মরণশক্তি প্রখর হওয়ায় দু’বছর নয় মাস বয়সেই সাগির সেই সব ঠোটস্থ করে ফেলে। এমনটা দেখে তিনি ’ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে’ আবেদন করেন। ছোট্ট সাগিরের স্মরণশক্তির প্রমাণ দিতে প্রশ্ন ও উত্তরের ভিডিও রেকর্ড করে সেখানে তাঁরা পাঠান।তা খতিয়ে দেখে “ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড’ সাগিরের স্মরণশক্তি ও ট্যালেন্টের স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এর তরফে তাঁদের বাড়িতে সাগিরের নামে মানপত্র ও মেডেল এসে পৌছেচে বলে *সোমা* খাতুন জানিয়েছেন।
খুদে সাগির মণ্ডলের নামে ’ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস ’ থেকে মানপত্র ও মেডেল আসার খবরে এখন উল্লশিত আউশা গ্রামের মামার বাড়ির সদস্যরা। একই ভাবে নাতির সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন মন্তেশ্বরের মামুদপুর গ্রামে থাকা সাগিরের বাবার বাড়ির লোকজন। সাগিরের দিদিমা ফরিদা বিবি মঙ্গলবার বলেন,’আমাদের পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নয় ।তবু তারই মধ্যে আমি আমার ছেলে শেখ *সাইন* ও মেয়ে *সোমা* কে বি-এ পাশ করিয়েছি। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় আমার ছেলে বা মেয়ে কারুরই সরকারী একটা চাকরি পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি। নাতি সাগির এই খুদে বয়সে পড়াশুনায় আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।দু’বছর নয় মাস বয়সেই নাতি সাগির ’ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’ মানপত্র ও মেডেল পেয়ে গিল । এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের ।আমার মেয়ে *সোমা* স্বপ্ন দেখে তাঁর ছেলে মস্তবড় ডাক্তার হবে। নাতি সাগিরও এখন থেকে বলতে শুরু করে দিয়েছে, ’আমি ডাক্তার হব’।নাতিকে ডাক্তারি পড়ানোর খরচ কি ভাবে জোগাড় হবে,তা আমি জানি না। পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফরিদা বিবি সবার কাছে সহযোগীতা ও দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নিশীথ মালিক ছোট্ট সাগির মণ্ডলের মামার বাড়িতে এদিন পৌছে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। খুদে সাগিরের মেধা ও স্মরণশক্তি বাস্তবে পরখ করে তিনিও তাজ্জব বনেয়যান। সাগিরের লেখাপড়ার জন্য আগামী দিনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক ।।