এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,১৯ অক্টোবর : মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণনগরের আশ্রমপাড়া এলাকায় একটা পুজো মণ্ডপের মধ্যে এক তরুনীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়৷ পরিচয় আড়াল করতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার মুখ ৷ যদিও পরে তরুনীর পরিচয় উদ্ধার করে পুলিশ ৷ পরে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল (জেএনএম) হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতারও করেছে । যদিও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ যে তরুনীকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে এবং আসল অপরাধীদের আড়াল করতে আরজি করের কায়দায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মৃতদেহ দাহ করে ফেলেছে পুলিশ । এফআইআরেও আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন ।
আজ শনিবার মৃতার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । পরে মৃতার মামা ও মামিকে সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি যেটুকু দেখেছি শুনেছি তাতে নিশ্চিত যে মেয়েটিকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে । পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে এখানকার আইসি এবং পুলিশ মিথ্যা কথা বলে দ্রুততার সঙ্গে মৃতদেহ দাহ করে দিয়েছে । যতদূর আমি জানি যে ময়নাতদন্তে রিপোর্টে পুলিশ আত্মহত্যা বলে লিখিয়ে এনেছে মমতা ব্যানার্জির ডাক্তারদের দিয়ে । যে রাজ্যে ডাক্তার জেলে থাকে…. সন্দীপ ঘোষ,যে রাজ্যের ওসি… তালতলা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডল জেলে থাকে…ধর্ষক সঞ্জয় রাইও একই জেলা থাকে… সেই রাজ্যে পুলিশকে কেউ বিশ্বাস করে না । এই সরল সাদাসিধে পরিবারকে পুলিশ ভুল বুঝিয়ে দেহ নিয়েছে এবং দাহ করে দিয়েছে আর ময়না তরুণদের রিপোর্টে আত্মহত্যা লিখিয়েছে ।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে বিচার এবং তদন্তকে প্রভাবিত করা হয়েছে । আমি মৃতার পরিবার এবং সাধারণ মানুষ একযোগে বলতে পারি যে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে । জুতো নেই, এক জায়গায় খুন এবং এক জায়গায় দেহ উদ্ধার, অত্যাচারের প্রমাণ চুল কাটা এবং ফেসবুকে যে পোস্টটা করা হয়েছে সেটা তরুণীকে জোর করে করানো হয়েছে,এটা আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি । পরিবার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিটি দিয়ে তদন্তের দাবি করেছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমি কৃষ্ণনগর আদালতের মৃতার পরিবারের পক্ষের আইনজীবী শীর্ষেন্দু দাসকে বলেছি আমরা সিনিয়র আইনজীবী দেব । পরিবার যে ধরনের আইডি লড়াই চান আমরা সহযোগিতা করব। মৃতার পরিবারের পাশে ভারতীয় জনতা পার্টি আছে। ওনারা যে ধরনের আইনি লড়াই করবেন রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া আমরা তাদের পাশে থাকবো ।’
মৃতার মামা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘আমরা শুভেন্দু বাবুকে এই দায়িত্ব দিচ্ছি । উনি আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন । আমরা শাস্তির দাবি চাইছি।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘পরিবার এত সরল এবং সাদাসিধে যে ওনারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ।’ শুভেন্দু বাবু সিপিএমকে নিশানা করে বলেন,’এখানে যে লোকজনরা যারা রাণী মা কে হারিয়েছেন তারা সব জায়গায় ঢুকে ঘেঁটে দিয়ে বেরিয়ে যায় । কমরেডদের শুরুটা খুব ভালো । এদের স্টার্টিং আছে কিন্তু ফিনিশিং নাই মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় । যেমন নারান ব্যানার্জি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গেলেন । পরিবার ভরসা করার লোককে ঠিক করতে পারেনি । তার সুযোগটা আইসি অমলেন্দু বিশ্বাস নিয়েছেন । এই অমলেন্দু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সিবিআই আছে । কাঁথি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু পন্ডাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল এই অমলেন্দু বিশ্বাস । শান্তনুর স্ত্রী কাকলি পন্ডা কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিলেন । সেই মামলায় সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল আদালত । আর এই মামলাতে অমলেন্দু বিশ্বাস কে প্রতি মাসে যেতে হয় হাজিরা দেওয়ার জন্য । ইতিমধ্যে তাকে কুড়ি বার জেরা করা হয়েছে । যে কোনদিন শুনবেন অমলেন্দু বিশ্বাস সিবিআর হাতে গ্রেফতার হয়েছে । আর এখানকার যিনি এসপি আছেন তিনি যেখানেই যান… জলে যান বা জঙ্গলে যান… ট্যাঁকে গুঁজে নিয়ে যান অমলেন্দু বিশ্বাসকে । এই দুজনের মধ্যে চিটাগুরের সম্পর্ক আছে । সেই অমলেন্দু বিশ্বাস মৃতা তরুনীর পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে দেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠিয়েছিল। এমনকি পরিবারের লোকজনকেও ময়নাদন্তের সময় ঢুকতে দেওয়া হয়নি । আরজি করের মত তাড়াহুড়ো করে ময়নাতদন্তের পর দাহ করে দেওয়া হয়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ময়না তদন্তে রিপোর্টে আত্মহত্যা দেখিয়ে প্রথমেই এই মামলার অনেকটাই ক্ষতি করে দিয়েছে পুলিশ ।’ শুভেন্দু অধিকারী পাশাপাশি মিতা তরুনীর পরিবারও বলেন যে এই ঘটনা অনেকেই ঘটিয়েছে এবং অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে । তারা দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন । এদিন মৃতা তরুনীর পরিবারের সাথে কথা বলার পর নির্যাতিতা কিশোরীর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্বে কৃষ্ণনগরে পদযাত্রা করে বিজেপি ।।
জানা গেছে,কৃষ্ণনগরে তরুণীর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি । ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে জীবিত অবস্থায় পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তরুণীর । পুলিশ সুপার অমর কে নাথ দাবি করেছেন,অকুস্থল থেকে লাইট ব্লুইশ রঙের তরলসহ একটা প্লাস্টিকের বোতল পাওয়া গেছে । যদিও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন অ্যাসিড নয়, তরুনী শরীরে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া গেছে । ফলে কৃষ্ণনগরে তরুণী খুনে পরতে রহস্য দানা বেঁধেছে। এই অবস্থায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও মৃতার পরিবার-পরিজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন ।।