এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ ডিসেম্বর : মমতা ব্যানার্জি ১২ বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করে নিজের জন্য ১৫ টা গেস্ট হাউস করছেন । ফিলিপিন্সের একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোস ও সাদ্দাম হুসেনেরও ওনার মত এত প্রাসাদ নেই । মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মমতা ব্যানার্জি পাহাড়ে গেলেই আমাদের নেপালি বন্ধুরা বলেন, ‘ঘুমনে আছ?’ বেড়াতে আসছে। এত আবাসন সাদ্দাম হোসেনেরও ছিল না । টাইগার হিলে এক,সেবক রোডে দুই, উত্তরকন্যা তিন,গাজলডোবা চার,আর কত নাম শুনবেন? মমতা ব্যানার্জি ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করে ১৫ টা গেস্ট হাউস করছে এই ১২ বছরে । ওই চাবিগুলো সব থাকে ওনার বাড়িতে নয় নবান্নের ১৪ তলায় গৌতম সান্নাল্যের কাছে । কোনো মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক কেউ থাকতে পারবে না ।’ তিনি বলেন,’শুধু উত্তরকন্যাতে যে গেস্ট হাউস নিজের থাকার জন্য বানিয়েছেন তারজন্য ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে । টাইগার হিলে রাজভবনের গায়ে তৈরি করেছে । কালিম্পং, কার্সিয়াং এ তৈরি হয়েছে । সেবক রোডে প্রাসাদের মত গেস্ট হাউস তৈরি হয়েছে । আপনারা কাকে ভোট দিয়েছেন ? কোন রানীমাকে ভোট দিয়েছেন , সততার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় । কোন চিটিংবাজ, চোর, ৪২০ কে ভোট দিয়েছেন ? শুষে খাচ্ছে আপনাদের । ফিলিপিন্সের একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোস, সাদ্দাম হুসেনেরও এত প্রাসাদ নেই । সাগর থেকে মুকুটমনিপুর, দীঘা থেকে শুরু করে বোলপুর সব তালিকা দিয়ে দেব ।
উত্তরবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি যায় বেড়াতে,উন্নয়ন করতে নয় । সব মুখোশ খুলব আমরা ।’
সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সময় চাষীদের কাছ থেকে কুইন্টাল পিছু বাটা নেওয়ারও তীব্র বিরোধিতা করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’প্রতি কুইন্টালে ৫-১০ কেজি ধান কেটে নেয়, কোনো রাজ্যে হয় না । চোর সরকার, চোর মমতা কৃষকদের কাছ থেকেও লুট করছে । আজকে গোঘাটের কৃষকরা এর প্রতিবাদ করেছিল বলে ওসি অরূপ মণ্ডলের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের ।’ তিনি নিজের মোবাইলে একটি ভিডিও চালান,যাতে কৃষকদের উদ্দেশ্যে কাউকে ‘শুয়##বাচ্ছা’ বলতে শোনা যায় । শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি গোঘাট থানায় যাচ্ছি । বরাহনন্দন বলা ওসিকে দিয়ে পা ধরা করাব । আমি চোর মমতাকে হুশিয়ারি দিচ্ছি,নিয়ন্ত্রণ করুন আপনার পুলিশদের ।’
তিনি বলেন,’চোর মমতার সাগরেদ বাকিবুর রহমান, চোর বালু গ্রেফতার হওয়ার আগে গত বছর ধান বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৩৯ লক্ষ চাষি । এবারে মাত্র ১১ লক্ষ চাষি রেজিস্ট্রেশন করেছে । তার মানে গত বছর পর্যন্ত চোর মমতা তার চোর সাগরেদ বালুকে দিয়ে ১৮ লক্ষ ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ভারত সরকারের পাঠানো ৫ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে ।’ তিনি চাষিদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, ‘আমি অন্নদাতা ভগবানদের বলছি, রাস্তায় নামুন,পথ অবরোধ করুন ।’
পাশাপাশি তিনি দাবি জানান,’কৃষকের ধান ভারত সরকার ঘোষিত এমএসপি অনুয়ায়ী নিতে হবে । ১০০ গ্রামও যদি ধানের বাটা কাটে তাহলে বিজেপির এমপি,এমএলএ অথবা বিরোধী দলনেতাকে সেই সমবায় সমিতি বআ কৃষাণ মান্ডির নাম দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করুন । আমরা গোটা রাজ্যে স্পটে পৌছাব । এই ধ্বংসলীলা আর চুরির খেলা থেকে আমরা বাংলাকে বাঁচাব ।’
রাজ্যে ইউরিয়ার দাম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু । তিনি বলেন,’একদিকে ধান ক্রয়ের এই অবস্থা, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীজি হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে যে ইউরিয়ার দাম বস্তা পিছু ৩৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২০০ টাকায় করেছেন সেই ইউরিয়া সার কৃষকদের এই মুহুর্তে ২৫০০ টাকা করে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ।’
সেই সাথে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরে ১৫৮ জন চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়োগ করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু । তিনি বলেন,’মাননীয়া উত্তরবঙ্গে গেছেন,কেন গেছেন সবাই জানে,বিয়ে বাড়িতে গেছেন । কালকে বড়বড় কথা বলেছেন । ১৫৮ জন ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীকে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নিয়োগ করা হয়েছে । সরকার কি চিকিৎসকদের বিয়ে বাড়িতে খেতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ?’
তিনি বলেন,’পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত ২ জন জেড প্লাস আছেন- একটা পিসি আর একটা ভাইপো । শিশু বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে । আমি জানতে চাই পশ্চিমবঙ্গের কোন শিশু জেডপ্লাস নিরাপত্তা পায় ?
আমরা সব জানি । সততার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়িয়ে পরিবার নিয়ে সরকারি পয়সায় যা খুশি করবেন,আমরা বসে বসে দেখব না? আপনি এক টাকাও বেতন নেন না,আপনি সৎ? আপনাকে চোর বলা যাবে না ? আপনি বসে বসে থালা বাজাবেন আর বলবেন, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায় নরেন্দ্র মোদী চোর হ্যায়’ । নরেন্দ্র মোদীর পরিবার আছে ? সাড়ে ন’বছরে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভার কারোর বিরুদ্ধে কেউ আঙুল তুলতে পেরেছে ? রাফেল নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কি বলেছে জানেন না ? আপনারা স্বগুষ্ঠি ডিমনেটাইজেশনের বিরুদ্ধে ছিলেন । সুপ্রিম কোর্ট কি বলেছে জানেন না ? আপনার মহুয়া মৈত্র আর চিদাম্বরমের ব্যাটারা ইডিকে আটকাতে গিয়েছিলেন । সুপ্রিম কোর্ট কি বলেছে জানেন না ?’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বলবেন আমি একটাকা বেতন নিই না । আপনি চিঠি করে সরকারি লাইব্রেরিতে আপনার ‘এপাং ওপাং ঝপাং’ বইগুলো কত বিক্রি করেছেন তার ডাটা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে আছে । আপনি সরকারি লাইব্রেরিগুলোকে বই কিনতে বাধ্য করিয়েছেন, ওগুলো কেউ পড়ে না।’
পাশাপাশি তিনি অভিযোগ তোলেন,তৃণমূলের ইলেকশন ফান্ডে মোটা টাকা দেওয়ার জন্য চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বড় মিটিং হয়েছে । আর শ্রমিকদের পোড়ো কোয়ার্টার গুলো চা বাগানের মালিকদের দিয়ে মেরামতি করিয়ে তা পাট্টা বিলির নাম দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গরীব মানুষের সাথে ‘প্রতারণা’ করছেন বলে অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর । সেই সাথে তিনি এটাও জানান যে মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুখোশ খুলতে’ আগামী ১২ তারিখে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত মানুষদের নিয়ে শিলিগুড়িতে একটি ইনডোর কনভেনশন করবেন । যে কনভেনশনের নাম ‘উত্তর উত্তরণের খোঁজে’ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান ।।