প্রিয়জন,
কৈশোর-যৌবনের মাঝামাঝি তুই এসেছিলি একেবারে আচমকায়। আমার সদ্য তৈরি ভালোবাসার ঘরটাতে আসন বিছানোই ছিল বোধহয়। সেটা যে তোরই হবে ভাবিনি। কাঁচা বয়সের মায়া তোর মন ছুঁয়ে ছিল। তারপর একদিন যায়, দুই দিন যায়, দিনের পরে মাস যে গড়ায়। দুজনেই ভাসতে থাকি অজানা আবেগে। স্কুলের ঘরগুলোতে বন্ধুরাই তোর আমার গল্প রচনা করতো নিজেদের মনের মতো করে। মনে মনে হাসতাম। ভালোও লাগতো। বাড়ি ফিরতাম সেই গল্পের কল্পিত রাস্তা ধরে তোর চিন্তাকেই মাথায় রেখে।দু’জনেই তখন ভাসছি কল্পনার আকাশে ফানুসের মতো।
মিত্তিরদের ঐ পানাপুকুর ঘেরা মাঠটায় কচিকাঁচাদের ভিড়ে কয়েকজন মিলে রোজ বৈকালিক আড্ডা দিতাম আমরা। তোর মনে আছে?তোকে একটাবার দেখতে পাবার আশায় পম্পাদের স্কুলের কাছে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তুই সেখানে গান শিখতে যেতিস। কোনোদিন দেখা পেতাম আবার কোনোদিন বা—-।
ঐ পানাপুকুরের মাঠে কালীপুজোর আগের দিন কী মহাযজ্ঞটাই না হতো! তুই, আমি, আমরা জনা ছ’য়েকে মিলে জমিয়ে আড্ডা বসাতাম। হঠাৎ করেই বৃষ্টি এলে পুজো মন্ডপের ভেতরে আশ্রয় নিতাম। মন্ডপের ত্রিপল দিয়ে কী আশ্চর্য রকম ভাবে জল চুঁইয়ে পড়তো তোর আর আমার গায়ে।বন্ধুদের তখন সে কী মশকরা! তাই নিয়েই চলতো মান-অভিমান- অনুযোগ ও আড়ি-ভাব খেলা।
হঠাৎ করেই বড়ো হয়ে গেলাম। পরিণত মনের অধিকারী হলাম আমরা। ভালোবাসার সেই আসনটা পাতাই থাকলো তোর জন্য।দুজনের পথ, কী এক অজানা কারণে আলাদা হয়ে গেলো। তারপর তুই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হলি। আমার ঠিকানাও বদল হলো। তুই এখন অন্য কারো বর, অন্য কারো ঘর। কিন্তু জানিস, আজও আমায় ভাবায় সেই ফেলে আসা দিন, সেই কৈশোরের স্মৃতি, যৌবনের আবেগ। আর সেই ভাবনার মাঝেই বসত করে বর্তমানের কঠিন বাস্তব, যেখানে ভালোবাসা, আবেগ, অভিমান, অনুরাগ সবেরই মূল্য শুধু অর্থে আর স্বার্থে।
ভালো থাকিস প্রিয়জন। আনন্দে থাকিস।তোর মনের ঠিকানায় আমার এই চিঠি পাঠালাম। জানিনা মন-পিওনের হাত দিয়ে এই চিঠি তোর কাছে পৌঁছবে কি না!তবুও যদি—-
ইতি----
কলমিকা।