এইদিন ওয়েবডেস্ক,সাও পাওলো,৩০ ডিসেম্বর : ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার তথা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় পেলে ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন । প্রাক্তন এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন । ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা যান তিনি । বৃহস্পতিবার পেলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ‘অনুপ্রেরণা এবং ভালবাসা রাজা পেলের যাত্রাকে চিহ্নিত করেছে, যিনি আজ মারা গেছেন । ভালবাসা, ভালবাসা এবং চিরকাল ভালবাসা ।’
পেলে ৯২ টি ম্যাচে ৭৭ গোল করে ব্রাজিলের যুগ্ম সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার । ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি প্রথম বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিলেন দেশকে । ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছিল ব্রাজিল । দুটি গোলই করেছিলেন পেলে ।
পেলে সাও পাওলোর ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের একটি দরিদ্র পরিবারে ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন । দরিদ্র পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে অভাব অনটনটা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে হয়েছে ছোটবেলা থেকে। আর তাই অভাব মেটাতে কৈশোর থেকেই কাজ শুরু করেন চায়ের দোকানে। এখানেই শেষ নয় রেলস্টেশনে ঝাড়ু দেওয়া কিংবা জুতা পরিষ্কার করা, এসব কাজও তাকে করতে হয়েছে ছোটবেলাতে ।
ফুটবল প্রতিভাটা শৈশব থেকেই তার মধ্যে ছিল। তবে অভাবের কারণে শৈশবে ফুটবল জোটেনি । মোজার ভেতরে কাগজ ঠেসে ফুটবল বানিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেন পেলে । তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করে । ১৫ বছর বয়সেই সান্তোসের তৎকালীন তারকা ওয়ালদেমার ডি ব্রিতোর নজরে পড়েন ফুটবল জাদুকর । তারপর থেকেই শুরু হয় তাঁর ফুটবলের যাত্রা । তাঁকে ব্রাজিলের নামকরা ক্লাবে সান্তোসে নিয়ে যান ব্রিতো। সুযোগ করে দেন সান্তোসের বি টিমে খেলার। তবে জাত চেনাতে সময় লাগেনি পেলের। এক বছরের ব্যবধানে জায়গা করে নেন ক্লাবটির মূল দলে ।
সান্তোসে জায়গা করেই চমক দেখান পেলে । ১৬ বছর বয়সী নিজের অভিষেক টুর্নামেন্টে হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাঁর এই নজরকাড়া পারফরম্যান্স ম দেশের সরকারের নজর এড়ায়নি । তাঁর প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে আইন করে ব্রাজিলের জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন ব্রাজিলের সরকার ।
১৯৫৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান পেলে। প্রথম ম্যাচ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে । ম্যাচটা ব্রাজিল হেরে গেলেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোল করে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্বীকৃতি লাভ করেন পেলে । তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ৯ মাস ।
১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ছিল ব্রাজিল। সেই সময়ের জিতো, গারিঞ্চা, দিদি, ভাভাদের দিয়ে সাজানো তারকাবহুল দলে ১৭ বছর বয়সী পেলের জায়গা পাওয়াটাই ছিল চমক । তাই শুরুতে সাইডবেঞ্চে কাটাতে হয় ফুটবলের কিশোর পেলেলে । কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মাজ্জেলার ইনজুরির কারণে মাঠে নামানো হয় পেলেকে ।এরপর আবার কোয়ার্টারে সুযোগ মেলে তার । সে ম্যাচে অসাধারণ গোল এল তার পা থেকে । আর তাঁর একমাত্র গোলেই সেমি ফাইনালে পৌঁছে যায় ব্রাজিল । এই গোল পাওয়ার পরই যেন পুরো মোড় ঘুরে গেল পেলের ক্যারিয়ারে । তারপর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি ।
সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোলের হ্যাটট্রিক করলেন । ফাইনালেও দুই গোল করে ব্রাজিলকে জেতালেন বিশ্বসেরার শিরোপা । এরপর মূলত তাঁর অবদানেই ১৯৬২ ও ১৯৭০ এর বিশ্বসেরার শিরোপা জেতে ব্রাজিল । কিংবদন্তি এই ফুটবলারের মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে কেলি ন্যাসিমেন্টো ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন,’আমরা আপনাকে খুব ভালবাসি । শান্তিতে বিশ্রাম নিন ।’।