এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ মার্চ : শনিবার (০১ মার্চ ২০২৫), কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সাথে যুক্ত ‘হার্মাদ বাহিনী’ বড় ধরনের হট্টগোল সৃষ্টি করে। এই হট্টগোলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বেশ কয়েকজন অধ্যাপক আহত হন । পালাতে গিয়ে একজন ছাত্রের উপর প্রবল বেগে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে । দাবি করা হচ্ছে যে আহত ছাত্র একজন উগ্রবামপন্থী দলের সদস্য । একটা এক্স হ্যান্ডেলে(@TMCWatch) ওই ছাত্রের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রীন শট দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ‘আজ যে ছেলেটা যাকে ব্রাত্য বসু গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গেছে তার দুটো এফবি পোস্ট দিলাম। মাওবাদী সমর্থনকারি ও ইয়াসিন মালিক এর সমর্থনকারি। ছেলেটা RSF(অতি বাম) এর সঙ্গে যুক্ত। তাই বলছি এদের প্রতি কোন সহানুভূতি রাখবেন না।’
রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি বামপন্থীদের আরও কড়া ভাষায় নিশানা করেছেন । তিনি বামপন্থীদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ তকমা দিয়ে এক্স-এ লিখেছেন,’বামপন্থা মানেই দেশদ্রোহিতা, মাওবাদ ও নকশাল গণতন্ত্রের শত্রু । ইন্দ্রানুজের নামে যারা আজ কান্নাকাটি করছেন, তারা কি জানেন এই ছেলেটির প্রকৃত পরিচয়? এই ছেলেটি প্রকাশ্যে মাওবাদী ও নকশালবাদ সমর্থন করে পোস্ট করেছে। যারা ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলার স্বপ্ন দেখে, যারা দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করে নিজেদের মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চায়, সেই নকশাল -মাওবাদীদের প্রশংসা করে কি কেউ গণতন্ত্রের প্রতীক হতে পারে? না! কখনই না।’
তিনি লিখেছেন,’বামপন্থা মানেই দেশবিরোধীতা! বামপন্থীদের ইতিহাস রক্তে লেখা — গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জঙ্গি কার্যকলাপ এবং দেশের সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত একটাও বামপন্থী দেশ গণতান্ত্রিক হতে পারেনি। আজ যারা ইন্দ্রানুজের জন্য মুখে ফেনা তুলে কথা বলছেন, তারা কি ভুলে গেছেন এই ছেলেটিই SFI এবং প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেছিল? তাহলে প্রশ্ন উঠছে — সৃজন ভট্টাচার্যরা হঠাৎ ইন্দ্রানুজের প্রতি এত দরদ দেখাচ্ছে কেন? আসলে বামপন্থীরা তৃণমূলের পোষ্য কুকুর ছাড়া আর কিছুই নয়। আজকের তথাকথিত অতিবামপন্থী গুলো তৃণমূলের খেয়ে বেঁচে আছে। তারা আসলে তৃণমূলেরই বি-টিম।’
তরুনজ্যোতির কথায়,নকশালপন্থা, মাওবাদ, বামপন্থা — এই তিনটি বিষাক্ত ভাইরাস ভারতবর্ষের সমাজের ক্যান্সার। যে কোনও বামপন্থী মানেই ভারতবিদ্বেষী, দেশদ্রোহী। এই দেশদ্রোহিতার রাজনীতি বাংলার মাটি আর বরদাস্ত করবে না। বাংলার মানুষের সামনে এখন স্পষ্ট — বামপন্থীরা আসলে গণতন্ত্রের শত্রু। তাদের মুখোশ খুলে গেছে!’ তিনি ‘বামপন্থা বাংলার ক্যান্সার’, ‘মাওবাদ নকশাল গণতন্ত্রের শত্রু’, ‘বামপন্থা ভারতবিরোধী’, বাম অতি বাম তৃণমূলের বি টিম’ প্রভৃতি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন ।
আসলে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এই বিষয়ে, শনিবার (০১ মার্চ ২০২৫) একটি বিক্ষোভ শুরু হয়, যা শীঘ্রই সহিংস রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে হামলা চালায়, গাড়ির টায়ার ফেটে দেয় এবং জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়। মন্ত্রীর অভিযোগ,তার দিকে একটি ইট ছুঁড়ে মারা হয়েছে, যার ফলে তার হাত ও মুখে আঘাত লেগেছে । এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রী শনিবার (০১ মার্চ ২০২৫) তৃণমূল-সমর্থিত অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপারের সভায় যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। সভা শেষ হওয়ার পর যখন তিনি বেরিয়ে আসেন, তখন বামপন্থী গুন্ডারা তাঁর পথ আটকে দেয়। ‘চোর-চোর’ এবং ‘ফিরে যাও’-এর মতো স্লোগান তোলা হয়েছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে মন্ত্রীর গাড়ির পাশাপাশি তার নিরাপত্তার জন্য দৌড়ানো দুটি পাইলট গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এই সময়কালে, কিছু অধ্যাপকও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ওয়েবকুপার সদস্য এবং অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্রকে আক্রমণকারীরা লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে। একজন ছাত্রের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, এবং দুইজন অধ্যাপকও আহত হয়েছেন। একজন মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও রয়েছে।
ঘটনাটি সম্পর্কে ব্রাত্য বসু বলেন,’আমরা চাইলে পুলিশ ডাকতে পারতাম, কিন্তু আমি একজন পুলিশ সদস্যকেও প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দিইনি। যদি এটা উত্তর প্রদেশে ঘটত, তাহলে কি কোন ছাত্র এটা করত?’ তিনি আরও বলেন, আক্রমণকারীরা কেবল তৃণমূলের লোকদেরই টার্গেট করে।
ইতিমধ্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল-অনুমোদিত কর্মচারী ইউনিয়নের অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে মন্ত্রীর গাড়ি একজন ছাত্রকে ধাক্কা দেয়, যার ফলে তার মাথা ভেঙে যায়। এসএফআই, আইসা এবং ডিএসএফের মতো বাম ছাত্র সংগঠনগুলি এই ঘটনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে দায়ী করেছে। তিনি বলেন, মন্ত্রী প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের পিষে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এর প্রতিবাদে, এই সংগঠনগুলি সোমবার (০১ মার্চ ২০২৫) ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং শিক্ষামন্ত্রীর উপর আক্রমণ এরই ফল।
হট্টগোল শুরু হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি ২ নম্বর গেটে স্লোগান দিচ্ছিল। এর প্রতিবাদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ একটি মানববন্ধন তৈরি করে। ব্রাত্যকে ৩ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল। এই হট্টগোলের পর, যাদবপুর ৮বি মোড়ের রাস্তাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন,’আমাদের সহনশীলতাকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না। আক্রমণকারীদের গণতান্ত্রিকভাবে জবাব দেওয়া হবে।’ এই ঘটনায় গোটা রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।।